ঢাকা: রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ঝড় আপনারা উঠাচ্ছেন, আমরা ধৈর্য দেখাচ্ছি।
রোববার সকাল সোয়া ৯ টার দিকে অধস্তন আদালতের বিচারকদের শঙ্কলাবিধি সংক্রান্ত শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘আমরা বিচার বিভাগ ধৈর্য ধরছি। যথেষ্ট ধৈর্য ধরছি। পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে…করেছেন। শুধু বলব, আমাদের আরও কিছু পরিপক্বতার দরকার আছে।’
সবশেষ ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি চূড়ান্ত করতে আপিল বিভাগ ২০ আগস্ট (আজ) পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি আপিল বিভাগে ওঠে।
শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সময়ের আবেদন দাখিল করেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, গত তারিখে কী করা হবে, বলা হয়েছিল। আলাপ-আলোচনার কথা বলা হয়েছিল। কার সঙ্গে, কে কে থাকবেন?
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আইনমন্ত্রী।
আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহাব মিয়া বলেন, আপিল বিভাগের সব বিচারপতির সঙ্গে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আলাপ-আলোচনার কথা। আপনারা আলাপ-আলোচনা পর্যন্ত করলেন না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘নীতিনির্ধারণী বিষয়ে আমার কী করার আছে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা মিডিয়াতে অনেক কথা বলবেন, কোর্টে এসে অন্য কথা বলবেন। আপনাকে বলছি না, আপনাদের কথা বলছি।’
অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি বলেন, কবে রাখব (পরবর্তী তারিখ)। সবাই বসবেন।’
একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সব বিষয় নিয়ে ঝড় উঠে গেছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা তো কোনো মন্তব্য করছি না। সব তো আপনারাই করছেন। পরবর্তী (তারিখ) কবে চান?’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বন্ধের এক সপ্তাহ পর।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার মতোই আমরা রাখলাম। ৮ অক্টোবর তারিখ রাখলাম।’
এ পর্যায়ে অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রণয়নের প্রক্রিয়ার বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য দাঁড়ান মাসদার হোসেন মামলার অন্যতম কৌঁসুলি ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার আবেদনটি আছে। আমরা বিচার বিভাগ ধৈর্য ধরছি। যথেষ্ট ধৈর্য ধরছি।’
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন। রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।
আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর ২০১৫ সালের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় বিধিমালার একটি খসড়া তৈরি করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। ওই বিধিমালা সংশোধন করে দেন আপিল বিভাগ। ওই খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেই বিধিমালা গেজেট আকারে জারি করে তা দাখিল করতে গত বছরের ২৮ আগস্ট আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এরপর থেকে রাষ্ট্রপক্ষ দফায় দফায় সময় নিয়েছে। সবশেষ সংশোধিত খসড়া প্রধান বিচারপতির কাছে জমা দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এই খসড়া সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশ অনুসারে হয়নি বলে জানিয়ে দেন আপিল বিভাগ।