বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের স্পর্শকাতর সাত খুন মামলার ‘ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের’ ওপর রায় দিয়েছেন আদালত। রায়ে নুর হোসেন, তারেক সাঈদ, আরিফ ও রানা সহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। আর ৮ আসামীর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এর আগে, আদালতের বাইরে নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে রায় পড়া শুরু করেন।
এছাড়া র্যাবের ক্যাম্প কমান্ডার ও সাবেক মেজর আরিফ হোসেন, র্যাবের ক্যাম্প কমান্ডার ও সাবেক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানার মৃত্যুদণ্ডও বহাল রাখেন আদালত।
বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ২৬ জনের মধ্যে বাকি ১১ জনের সাজা কমিয়ে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এর আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা কার্যকরের অনুমতি (ডেথ রেফারেন্স) এবং আসামিদের আপিল শুনানি শেষে ২৬ জুলাই আদালত রায়ের জন্য ১৩ আগস্ট দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ওইদিন রায় ঘোষণা করা হয়নি। পরে আদালত রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেছিলেন।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ফতুল্লার লামাপাড়া থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় নিহত নজরুলের স্ত্রী বিউটি ও চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল দুটি মামলা করেন। হাইকোর্টের নির্দেশে র্যাবের তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। তার আগে তিনজনকে নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত নেয়া হয় এবং তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
একসঙ্গে দুই মামলার বিচার শেষে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি রায় দেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত সৈয়দ এনায়েত হোসেন। সেনাবাহিনীর বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ওই রায়ে। ৩৫ জন আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ জনের মধ্যে গ্রেফতার ও আত্মসমর্পণ করে কারাগারে থাকা ২০ জন নিয়মিত ও জেল আপিল করেন। এছাড়া নিন্ম আদালতের মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদনের জন্য নথিও ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা এবং এরপর প্রধান বিচারপতি আলোচিত এ মামলার শুনানির জন্য ১৭ মে বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন। ২২ মে শুনানি শুরু হয়।
৩৩ কার্যদিবসের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমএ মান্নান্ন মোহন ও জাহিদ সরওয়ার কাজল এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।
আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, এসএম শাহজাহান, এহসান উল্লাহ প্রমুখ।
গত ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হোলেন- সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক, সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, র্যাবের ক্যাম্প কমান্ডার, সাবেক মেজর আরিফ হোসেন, র্যাবের ক্যাম্প কমান্ডার ও সাবেক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব, সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পুর্নেন্দু বালা, সৈনিক আব্দুল আলীম (পলাতক), সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী (পলাতক), সৈনিক আল আমিন শরীফ (পলাতক), সৈনিক তাজুল ইসলাম (পলাতক), সার্জেন্ট এনামুল কবীর (পলাতক), নূর হোসেনের সহযোগী মিজানুর রহমান দিপু, রহম আলী, আবুল বাশার, আলী মোহাম্মদ, মোর্তুজা জামান চার্চিল, সেলিম (বর্তমানে ভারতের কারাগারে বন্দি), সানাউল্লাহ ছানা, শাহজান, জামাল।
এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- অপহরণের দায়ে ১০ বছর কর্পোরাল রুহুল আমিন, আলামত সরানোর দায়ে ৭ বছর এএসআই বজলুর রহমান, আলামত সরানোর দায়ে ৭ বছর হাবিলদার নাসির উদ্দিন, অপহরণের দায়ে ১০ বছর এএসআই আবুল কালাম আজাদ, অপহরণের দায়ে ১০ বছর সৈনিক নুরুজ্জামান, অপহরণের দায়ে ১০ বছর কনস্টেবল বাবুল হাসান, অপহরণের দায়ে ১০ বছর কর্পোরাল মো. মোখলেছুর রহমান (পলাতক), অপহরণের দায়ে ১০ বছর এএসআই কামাল হোসেন (পলাতক), অপহরণের দায়ে ১০ বছর ও আলামত সরানোর দায়ে ৭ বছর কনস্টেবল হাবিবুর রহমান (পলাতক)।