ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপে সুরেন্দ্র কুমার প্রধান বিচারপতি হন

— অলিউল্লাহ নোমান

সুপ্রিমকোর্টের রায় নিয়ে রায়েসমাতি অব্যাহত আছে। তেল নিয়ে তেলেসমাতি হলে রায় নিয়েও রায়েসমাতি হবে না কেন! সুরেন্দ্র কুমার ব্যাকগিয়ারে নাকি শক্ত অবস্থানে সেটা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে গত রবিবার তিনি বলেছেন আদালত যথেষ্ট ধৈর্য্য ধরেছে। এটাও তিনি বলেছেন, পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। তারপরও সেখানে রায় নিয়ে এরকম হয়নি। কথা গুলো তিনি বলেছেন, বিচার চলাকালীন একটি মামলায় এ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে। সুরেন্দ্র কুমারদের ধৈর্য্যরে বাঁধ ভাঙ্গবে, নাকি ধৈর্য্যরে ছায়ায় নিজেদের ভয়কে আড়াল করবেন সেটা তাদের বিষয়। এ নিয়ে এখন-ই পরিস্কার করে বলার সময় আসেনি। সামনের দিন গুলোর দিকে নজর রাখতে হবে। তবেই হয়ত: এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে।

যে রায় নিয়ে রায়েসমাতি চলছে সে আপিল শুনানী হয়েছিল ৭ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে। এর মাঝে রায়ের মূল আদেশ অর্থাৎ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষনার সাথে সবাই একমত হয়েছেন। কিন্তু, রায় লিখতে গিয়ে সুরেন্দ্র কুমারের পর্যবেক্ষণের সাথে পুরোপুরি একমত হয়েছেন একমাত্র একজন। তিনি হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। তবে তিনি এখন অবসরে চলে গেছেন। বাকীরা সবাই সুরেন্দ্র কুমারের পর্যবেক্ষণের সাথে একমত নন। রায়ের পর্যবেক্ষণে উঠে আসা বক্তব্য গুলো মূলত সুরেন্দ্র কুমার এবং নাজমুন আরার বলা চলে। পর্যবেক্ষনে উল্লেখিত কতিপয় বক্তব্য নিয়েই সরকারের যত আপত্তি।

তবে তাদের আপিত্ত নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে উঠেনি। আপত্তির বতি:প্রকাশ ঘটেছে একেবারেই আওয়ামী স্টাইলে। বিরোধী জোট রায় পাঠ করে, নাকি পাঠ করা ছাড়াই এটাকে ঐতিহাসিক দলীল বলেছেন সেটাও বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারন রায়ে সুরেন্দ্র কুমারের পর্যবেক্ষন অনুযায়ী বিরোধী জোটের প্রধান শরীক দল বিএনপি’র রাজনীতির প্রসব হয়েছিল ‘বানানা রিপাবলিক’ জামানায়। তবে এটাও সঠিক সুরেন্দ্র কুমার যে আমলটাকে ‘বানানা রিপাবলিক’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন সেই আমলেই আওয়ামী লীগেরও পুনজন্ম হয়েছিল। সুরেন্দ্র কুমারের ভাষায়ও যদি বলি ‘বানানা রিপাবলিক’, তাতেও বলা যায় এই আমলটাই আওয়ামী লীগের পুনজন্ম দানকারী। শেখ মুজিবুর রহমান কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের চোর ডাকাত হিসাবে আখ্যায়িত করে মনের দু:খে নিজের দলকে বাকশালে বিলুপ্ত করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের১৫ আগষ্টের পরবর্তি যে সময়টাকে সুরেন্দ্র কুমার বানানা রিপাবলিক হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন সেই জামানায়ই কিন্তু আওয়ামী লীগ নামে রাজনৈতিক দল আবার গঠিত হয়েছে। এখানে বিএনপি বনাম আওয়ামী লীগ ড্র। একটি দল নতুন করে জন্ম নিয়েছে আরেকটি দল জন্ম নিয়েছে পুনরায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট এবং পরবর্তীতে ৭ নভেম্বর না হলে দুই দলের কোনটারই জন্ম হত কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে।

আওয়ামী লীগ বরাবরই একটি ফ্যাসিবাদী দল। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তি সময়েও দেখা গেছে তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহি:প্রকাশ। তখনো কেউ কিছু বলার সুযোগ ছিল না দলটির অগণতান্ত্রিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের চুরি চামারির বিরুদ্ধে বলে তখনো কারো পার পাওয়ার সুযোগ ছিল না। তৎকালীন জনপ্রিয় দৈনিক গণকন্ঠের অফিসে রাতে হামলা চালাতো শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ষ্মিবাহিনী। পত্রিকায় আওয়ামী লীগের চুরি চামারির বিরুদ্ধে খবর ছাপা হচ্ছে কিনা সেটা তারা পর্যবেক্ষণ করত। গণকন্ঠের সম্পাদক বরেণ্য কবি আল মাহমুদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল সেই জামানায়। বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল পত্রিকাটি। এই আমলে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে দুইবার পত্রিকা অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারি গুন্ডা বাহিনী হিসাবে পরিচিত পুলি দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে দৈনিক আমার দেশ ছাপাখানা। এটাই আওয়ামী লীগের চরিত্র। কারন তারা ফ্যাসিবাদে বিশ্বাস করে। ফ্যাসিবাদ কখনো ভিন্নমত সহ্য করে না।

আওয়ামী ফ্যাসিবাদী হুঙ্কারে সুরেন্দ্র কুমারদের আদালতি ধৈয্যের জন্য মানুষ কতটা ধন্যবাদ দিবে সেটাও প্রশ্ন সাপেক্ষ। নিকট অতীতে সুরেন্দ্র কুমারদের আদালতের মান ছিল অতি টুনকো। কেউ কোন রায় নিয়ে একটু পর্যালোচনা মূলক কিছু বললেই হল। তাঁর কপালে ঝুটতো অবমাননার সমন। হাজির হতে হতো তাদের সামনে। ওকালতি রেওয়াজ অনুযায়ী সবাইকে বলা হতো ক্ষমা চাইতে। কারন ওকিল সাহেবরা আদালতের সামনে গিয়ে অবনাননার বিষয়ে সত্য কথাটা বলতে সাহস পেতেন না। তাই মক্কেলকে পরামর্শ দেন ক্ষমা চেয়ে নিন। মক্কেল যত বড় বিদ্যান বা সম্মানিত ব্যক্তি হোন না কেন তাঁকে ক্ষমা চাইতে হত। ক্ষমতা চাওয়ার এ প্রসঙ্গটি একেবারেই নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। প্রসঙ্গ ক্রমে এখানে বলে রাখতে চাই আদালত অবমাননার একটি অভিযোগ সরাসরি আপিল বিভাগ থেকে উঠেছিল দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক শ্রদ্ধেয় মাহমুদুর রহমান এবং আমার (অলিউল্লাহ নোমান) বিরুদ্ধে।

তখনো শ্রদ্ধেয় মাহমুদুর রহমানকে সিনিয়র আইনজীবীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল আপনি ক্ষমা চেয়ে দু:খ প্রকাশ করে নিন। তবে তিনি ক্ষমা না চাওয়ার বিষয়ে ছিলেন অনঢ়। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন আমার রিপোর্টার যা লিখেছেন সবই সত্য এবং প্রমান সাপেক্ষ। সুতরাং সত্য লেখা প্রকাশ করে ক্ষমতা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। পরবর্তীতে মামলার শুনানীর জন্য যখন তালিকায় আসল তখন সিনিয়র সব আইনজীবী অপারগতা প্রকাশ করলেন। বললেন তারা কখনো আদালতের বিরুদ্ধে কথা বলতে দাড়াতে যান না। কারন এখানে তাদের রুটি রুজির বিষয় জড়িত। এমনকি একজন সিনিয়র আইনজীবী শ্রদ্ধেয় মাহমুদুর রহমানের স্ত্রীর সাথে দেখা করে উৎসাহিত করেছিলেন যাতে ক্ষমা বা দু:খ প্রকাশ না করা হয়। তখন মাহমুদুর রহমান কারাগারে ছিলেন। তাই স্ত্রীর কাছে ওই অনুরোধ করা হয়েছিল যাতে ওনাকে বলা হয় বিষয়টি। কিন্তু অবশেষে সেই আইনজীবীও অপারাগতা প্রকাশ করেছিলেন শুনানী করতে। শেষ পর্যন্ত শ্রদ্ধেয় মাহমুদুর রহমান নিজেই শুনানী করতে বাধ্য হয়েছিলেন নিজের মামলা।

ক্ষমা চেয়েও অনেকে পার পাননি। ক্ষমা চাওয়ার পরও দাড়িয়ে থাকতে হতো ঘন্টার পর ঘন্টা। বকাঝকা করা হতো আদালত থেকে। সংবিধানের মূলনীতি থেকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা এবং বিশ্বাসের বিধান সরিয়ে দেওয়া হয় ১৫তম সংশোধনীতে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন আমির মরহুম মুফতি ফজলুল হক আমিন শুধু বলেছিলেন সময় আসলে এ সংবিধানকে মানুষ ডাস্টবিনে ফেলবে। এতেই তাঁকে হাইকোর্ট থেকে সমন জারি করা হয় তার বিরুদ্ধে। হাজির করা হয় আদালতে। আর এখন অর্থমন্ত্রী বললেন আদালত যতবার বাতিল করবে, ততবার সেটা সংসদে পাস করা হবে। ২০১০ সালের ঘটনা। তখন সাবেক সচিব আসাফ উদ দৌলাকে সমন জারি করে হাজির করা হয়েছিল। হাজির করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর আসিফ নজরুলকে। হাজির হতে হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমকেও। এরকম আরো অনেক বরেণ্য ব্যক্তিদের তলব করে আনা হয় আদালতের সামনে। তাদের অপরাধ ছিল রায় নিয়ে সমালোচনা করেছেন তারা। কিন্তু হালে কি ঘটছে! সবাই সেটা দেখছেন। সুতরাং বলার কিছু নেই এখানে। এখন আদালতের মান আর টুনকো নয়। তাদের গায়ে এখন গন্ডারের চামড়া জড়িয়েছেন।

কেন সুরেন্দ্র কুমারের এত ধৈয্য এখন:
রায়ে সুরেন্দ্র কুমারের পর্যবেক্ষণ প্রকাশ হওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগের চরিত্র অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে। হুঙ্কার ছাড়ছে পাতি নেতা থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত। হুঙ্কারে ভয় পেয়ে হোক আর কর্তাদের ইশারায়ই হোক সুরেন্দ্র কুমার কাল বিলম্ব না করে ছুটির দিনেই নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানালেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে। অনেকেই বলার চেষ্টা করেন হুমকি দিতে ওবায়দুল কাদের গেছেন সুরেন্দ্র কুমারের বাসায়। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী নৈশভোজের আমন্ত্রনে সারা দিয়ে হাজির হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। আমন্ত্রণে সারা দিয়েই যাক আর নিজের থেকেই নৈশভোজের অনুরোধ জানিয়ে গিয়ে থাকুক ঘটনাটা কিন্তু নজিরবিহীন। দুনিয়ার ইতিহাসে রায় নিয়ে সমালোচনা উঠার পর সংক্ষুব্ধ রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদকের সাথে বৈঠকের ঘটনা অতীতে ঘটেনি। সুরেন্দ্র কুমার যদি এতটাই ধৈর্য্যশীল মানুষ হন ওবায়দুল কাদেরর সাথে নৈশভোজে বসলেন কেন! ওবায়দুল কাদেরই বা বলবেন কেন আলোচনা হয়েছে। আলোচনা আরো হবে। রায় নিয়ে দলের অবস্থান জানিয়ে এসেছি।

রায় নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান কি!
দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য অনুযায়ী দলের অবস্থান শুধু সুরেন্দ্র কুমারকে নয়, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকেও জানানো হয়েছে। এই অবস্থানের খোজ নিতে গিয়ে জানা গেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওবায়দুল কাদের নৈশভোজে যাওয়ার সময় বগলে করে দু’টি ফাইল নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ফাইল দুইটির একটিতে ছিল সুন্দ্রে কুমারের দুর্নীতির দলীল। আরেকটিতে ছিল সুরেন্দ্র কুমারের পরকীয়া বিষয়ক প্রমানপত্র। সুরেন্দ্র কুমারকে ফাইল দু’টির বিস্তারিত জানিয়ে বলা হয়েছে রায় নিজে থেকে সংশোধন করে নিতে। নতুবা তাঁকে পদত্যাগ করে চল যেতে। দুইটার কোনটাই না করলে ফাইল দু’টি যথারীতি প্রসিড হবে। এটাই হচ্ছে দলের সিদ্ধান্ত। একই বিষয়ে জানানো হয়েছে রাষ্ট্রপতিকেও।

সুরেন্দ্র কুমারের খুটির জোর কোথায়!
নৈশভোজের পরপরই ইন্ডিয়ার কলিকাতা থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা খবরের কাগজে প্রকাশিত হয় সুরেন্দ্র কুমারকে পদত্যাগের জন্য চাপ দিচ্ছে সরকার। সুরেন্দ্র কুমার এই চাপের বিষয়টি বাংলাদেশের কোন গণমাধ্যমকে জানাননি। তাঁর খুটির জোর ইন্ডিয়াকে তিনি বিষয়টি অবহিত করেন। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবেই ইন্ডিয়ান বাংলা দৈনিকে খবরটি প্রকাশিত হয়। সুরেন্দ্র কুমারের খুটির জোর ইন্ডিয়া নতুন নয়। ২০০৭ সালের ঘটনা। মঈন উদ্দিন-ফখরউদ্দিন, মাসুদ উদ্দিন ও আমিন উদ্দিনদের জরুরী আইনের সরকার ক্ষমতায়। তখন একটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল দুর্নীতির অভিযোগ যেসব বিচারপতির বিরুদ্ধে রয়েছে তাদের বিদায় করা। এই প্রক্রিয়াটি যাতে সহজে কার্যকর করা যায় তাই কৌশল নেয়া হয় বঙ্গভবনে চা-এর দাওয়াত। বঙ্গভবনে চা-এর আমন্ত্রণ জানিয়ে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে একটি পদত্যাগপত্র সামনে দেয়া হত। তাদের সমানে তখন দুর্নীতির কিছু প্রমান হাজির করেই সেটা বলা হত এটাতে সাক্ষর করেন। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে একজনকে পদত্যাগ করানো হয়। বিচারপতিদের মধ্যে দ্বিতীয় যিনি ছিলেন আমন্ত্রিত, তিনি হলেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আরো অনেক বিচারপতিরই তখন ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিলেন। অনেকেই বাসায় রাত্রিযাপন না করে অন্য জায়গায় থাকতেন। যাতে জোর করে ধরে নিয়ে পদত্যাগ পত্রে সাক্ষর করা থেকে বিরত থাকা যায়।

দাওয়াতানামা পেয়ে সুরেন্দ্র কুমারেরও সেদিন ঘুম হারাম। নাওয়া খাওয়া ছাড়া তিনি। সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবীদেরও সহযোগিতা চাইলেন। জোর করে আবার বঙ্গভবনে নিয়ে যাওয়া হয়নি কিনা এজন্য বাসায় ফিরেননি। রাতে সুপ্রিমকোর্টের চেম্বারেই অবস্থান করলেন। সঙ্গ দিলেন কয়েকজন আইনজীবী। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় সেদিন লিড নিউজ হয়েছিল সুরেন্দ্র কুমারকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ। শেষ পর্যন্ত ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের হস্থক্ষেপে আর বঙ্গভবনে যেতে হয়নি।

এখনো তাঁর খুটির জোর একমাত্র ইন্ডিয়া। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী শেখ হাসিনা প্রথমে তাঁকে প্রধান বিচারপতি বানাতে চাননি। প্রধান বিচারপতি হওয়ার দৌড়ে ও তদবীরে এগিয়েছিলেন বিতর্কিত ও টাকা পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তবে শেখ হাসিনার সফট্্ মনোভাব ছিল বিচারপতি নাজমুন আরা সুলাতানার প্রতি। শেষ পর্যন্ত ইন্ডিয়ান হস্থক্ষেপে প্রধান বিচারপতি হয়েছেন সুরেন্দ্র কুমার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে প্রধান বিচারপতি কে হবেন সেটাও ইন্ডিয়া চুড়ান্ত করে দেয়। চাকরিতে টিকে থাকতেও ইন্ডিয়ান হস্থক্ষেপ কামনা করা হয়।

সুরেন্দ্র কুমারের ইন্ডিয়ার প্রতি আনুগত্যের আরো প্রমান পাওয়া যায় গত ১১ জুন ২০১৭। সেদিন তাঁর এলাকায় একটি স্কুল উদ্ভোধন অনুষ্ঠান ছিল। সেই স্কুল উদ্ভোধনে প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত হন ঢাকায় নিযুক্ত ইন্ডিয়ান হাইকমিশনার হর্শ বর্ধন শ্রিংলা। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। ইন্ডিয়ান হাইকমিশনারকে প্রটোকল দেওয়া হয় শিক্ষামন্ত্রীর উপরে। অথচ একজন হাইকমিশনারের পদমর্যাদা হচ্ছে সচিব অথবা যুগ্ম সচিবের পর্যায়ে। আর সুরেন্দ্র কুমারের স্কুল উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে যুগ্মসচিবের প্রটোকল মন্ত্রীর উপরে।
সরকার কি পারবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে!

ওবায়দুল কাদেরের উক্তি অনুযায়ী সরকার ও দলের সিদ্ধান্ত প্রধান বিচারপতিকে নৈশভোজে এবং রাষ্ট্রপতিকে জানানো হয়েছে। সরকার ও আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত গুলো উপরে উল্লেখ করা আছে। তাই এখানে আর করার প্রয়োজনীতা নেই। এখন কথা হচ্ছে এই সিদ্ধান্ত কি বাস্তবায়ন করতে পারবে সরকার! নাকি ধৈয্যের অজোহাতে সুরেন্দ্র কুমার ও সরকারের মাঝে সমঝোতার কোন উদ্যোগ চলছে!

এদিকে আওয়ামী লীগ কিন্তু থেমে নেই। গতকালও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সুরেন্দ্র কুমারকে আহ্বান জানিয়েছে নিজের উদ্যোগে রায়ের পর্যবেক্ষন গুলো সংশোধন করতে। আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পরিস্কার করেই বলেছেন পাকিস্তান আর বাংলাদেশ এক নয়। কারন প্রধান বিচারপতি গতকাল আদালতে বলেছিলেন পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রীকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। সেখানে কিছুই হয়নি। ওবায়দুল কাদের সেটারই জবাব দিলেন আজ। এর আগে অবশ্য অন্য পাতি নেতারাও একই হুশিয়ারি দিয়েছেন যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এক নয়।

কি হতে পারে শেষ পর্যন্ত:
একদল অতি উৎসাহি ও স্বপ্নবাজ রাজনৈতিক মনে করছেন সুরেন্দ্র কুমার আরো শক্ত অবস্থান নেবেন। কোন মামলায় বিদ্যমান জাতীয় সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করবে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এই আশায় তারা স্বপ্নের জাল বুনছেন। প্রশ্ন হচ্ছে সুরেন্দ্র কুমার যদি চায়ও সেটা কি করতে পারবে! সুপ্রিমকোর্টে কোন মামলায় একা আদেশ দেওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। গুরুত্বপূর্ণ মামলা হলে ফুলকোর্ট অর্থাৎ আপিল বিভাগে চাকরিরত সকল বিচারপতির উপস্থিতিতে শুনানী ও রায় হয়। আর সর্বনি¤œ ৩জন ছাড়া কোর্ট বসতে পারে না। নাজমুন আরা সুলতানা অবসরে যাওয়ার পর ৬জন বিচারপতি এখন রয়েছেন আপিল বিভাগে। তাদের মধ্যে কেউ কিন্তু ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে সুরেন্দ্র কুমারের পর্যবেক্ষণের সাথে একমত হননি। সুতরাং এতেই অনুমান করা যায় সুরেন্দ্র কুমার চাইলেও একা সরকারের বিরুদ্ধে বড় কোন পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া বর্তমান জাতীয় সংসদের ১৫৩ আসনের অনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বৈধতা নিয়ে একটি মামলা ২০১৫ সালে দায়ের হয়েছিল হাইকোর্টে। বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার ছিলেন তখন হাইকোর্ট বিভাগে।

তিনি ওই মামলার শুনানী গ্রহন করেছিলেন। মামলাটির প্রাথমিক গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে শুনানী শেষে সরাসরি খারিজ করে দেয়া হয়। অর্থাৎ কোন রুল জারি না করেই মামলাটির গ্রহযোগ্যতা প্রশ্নেই খারিজ হয়ে যায়। সুতরাং এধরনের মামলা নিয়ে নতুন করে কেউ স্বপ্ন দেখতেই পারেন। তবে আদালতের প্রসিডিংস চলে ভিন্ন ধারায়। এ মামলায় হাইকোর্ট বিভাগের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল হলেও হতে পারে। মির্জা হোসাইন হায়দার শুনানীতে বসতেই পারবেন না। কারন তিনি একবার শুনানী গ্রহন করেছেন হাইকোর্ট বিভাগে। বাকী থাকে ৫ জন বিচারপতি। ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে বাকী ৫ জনের মধ্যে ৪জনই সুরেন্দ্র কুমারের পর্যবেক্ষনের সাথে একমত হনি। এখান থেকেই অনুমান করা যায় কি হতে পারে! যারা স্বপ্ন দেখছেন সেটা বাস্তবতার কতটা কাছাকাছি সুরেন্দ্র কুমারের পর্যবেক্ষনের সাথে অন্য বিচারপতিদের একমত না হওয়া থেকেই অনুমেয়।

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।