সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, ‘আজ আমাদের সন্ত্রাসী বলা হয়, জঙ্গি বলা হয়; কী কারণে জঙ্গি হলাম আমরা? আমরা তো আগে জঙ্গি ছিলাম না, আমার সময়ে তো কোনো সন্ত্রাসী-জঙ্গি ছিল না, তবে আজ কেন বলা হচ্ছে? আমরা কোথায় আছি?’ তিনি আরও বলেন, ‘এর কারণ দেশের ইসলামী দলগুলোর মধ্যে একতা নেই। আমাদের একত্রিত হতে হবে। সামনে বিরাট পরীক্ষা, ভয়ংকর বিপদ। যদি বাঁচতে হয় সবাইকে এক হতে হবে। উদ্দেশ্য একটাই- ইসলাম, কৃষ্টি, দেশ রক্ষা করা।’ রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে সোমবার জাতীয় ওলামা পার্টি আয়োজিত ‘ইসলাম, মুসলিম বিশ্ব ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এরশাদ এসব কথা বলেন।
বন্যাদুর্গত এলাকায় খাদ্যাভাব ও খাদ্য সংকটের নেপথ্যে খাদ্যমন্ত্রী দায়ী- এ দাবি করে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন ৫৬ টাকা কেজি চাল হয়েছে তো কী হয়েছে? মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১৬০০ ডলার। থাকেন তো ঢাকায়, ঢাকার বাইরে গিয়েছেন কখনও? দেখেছেন মানুষ কি অবস্থায় আছে? ১৯৮৮ সালের বন্যায় কেউ না খেয়ে মারা যায়নি। আর এখন ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। কিছুদিন আগে তো পচা গমও এনেছিলেন আপনি।’ আসন্ন নির্বাচনে দেশের সব আলেম-ওলামাকে নিজেদের মধ্যকার ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় পার্টির জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ইসলামের উন্নতিতে জাতীয় পার্টির শাসনামলে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলাম। আমি শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা করেছিলাম। মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করেছিলাম। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দিয়েছিলাম।’
এরশাদ বলেন, ‘আমি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। গতকাল (রোববার) হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। তারা তাদের কষ্টের কথা আমাকে জানিয়েছেন। এ দেশে আইনের শাসন নাই, বাঁচার মতো অবস্থা নাই। মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। একমাত্র জাতীয় পার্টিই পারে দেশকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে, দেশে সুশাসন কায়েম করতে।’ এরশাদ বলেন, ‘আপনারা সবাই একতাবদ্ধ হোন, জাতীয় পার্টির পতাকাতলে আসুন। সামনের নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয়, তাহলে জাতীয় পার্টিই সরকার গঠন করবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশে এখন অরাজকতা চলছে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, লুটপাট আর ধর্ষণের মহোৎসব চলছে। স্কুলের শ্রেণীকক্ষে স্বামীর সামনে শিক্ষিকাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। এর চেয়ে বর্বরতা আর কী হতে পারে। এ অরাজকতা ও বর্বরতার হাত থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য দেশের সব ইসলামী শক্তিকে একটি প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তাহলে দেশে আবারও শান্তি ফিরে আসবে। অরাজকতা দূর হবে। জাতীয় পার্টি হচ্ছে নির্ভরযোগ্য ইসলামী প্ল্যাটফর্ম।’
এরশাদ বলেন, ‘নেতৃত্ব দেশকে যেমন সুন্দর করতে পারে আবার ধ্বংসও করতে পারে। আজ সঠিক নেতৃত্বের অভাবের কারণেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কৌশলে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশে আগ্রাসন চালাচ্ছে। আমাদের দেশও শাসনের নামে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ দুইশ’ বছর শোষণ করেছে। এখন জঙ্গিবাদের অপবাদ দিয়ে তারা মুসলিম বিশ্বের ওপর আক্রমণ চালালেও মূলত তেলের খনি দখল করার জন্যই তারা ইরাক ফিলিস্তিন ধ্বংস করেছে। সারা দুনিয়ার সব মুসলিম রাষ্ট্র যদি ঐক্যবদ্ধ থাকত তাহলে সাম্রাজ্যবাদী কোনো শক্তি আমাদের ওপর আক্রমণ করতে পারত না।’
জাতীয় ওলামা পার্টির সভাপতি কারী মো. হাবিবুল্লাহ বেলালীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সুনীল শুভরায়, এসএম ফয়সল চিশতি, ওলামা পার্টির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এসএম আল জুবায়ের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, সোমনাথ দে, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু, কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান মাহমুদ, মাখন সরকার, ফখরুল আহসান সাহজাদা, আলহাজ আবদুল বাতেন, সৈয়দ ইফতেখার আহসান হাসান প্রমুখ।