৯৩০০০ বাংলাদেশিকে ফেরতের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে আসছে ইইউ টিম

ইউরোপে ‘অবৈধ’ হয়ে পড়া ৯৩ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরতের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে ঢাকা আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। আগামী ২৯শে আগস্ট পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় পৌঁছাবে। থাকবে ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকাস্থ ইইউ ডেলিগেশন কার্যালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইইউ প্রতিনিধি দলের সফরে মূলত ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধ বা অনিয়মিত হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরানো সংক্রান্ত ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস’ (এসওপি) চূড়ান্তকরণের আলোচনা হবে। ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সচিবের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই (ভেরিফিকেশন)-এর সঙ্গে যুক্ত সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তাদের বৈঠক হতে পারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইউরোপ অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা গতকাল মানবজমিনকে বলেন, অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরাতে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মত। এ সংক্রান্ত এসওপি’র খসড়ায় ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিদের ফেরাতে তাদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইয়ে যৌক্তিক সময় প্রস্তাব করেছে ঢাকা। এ নিয়ে গত জুলাইতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সেই সভায় এ সংক্রান্ত এসওপি (খসড়া) নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অনুবিভাগ ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন বিভিন্ন সংস্থা, আইন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ওই সভায় অংশ নেয়া সরকারের একাধিক কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, ইউরোপে ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিদের ফেরত আনা এবং এ সংক্রান্ত এসওপি সইয়ে প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে ঢাকা। বিষয়টি ওই সময়েই ব্রাসেলসে জানিয়ে দেয়া হয়। ওই কর্মকর্তারা জানান, জুলাই মাসের শুরুতে ব্রাসেলসে বাংলাদেশ ও ইইউ যৌথ কমিশনের একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিদের ফেরানো সংক্রান্ত আইনি কাঠামো ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস বা এসওপি’র দ্রুত চূড়ান্ত করার তাগিদ দেয় ইইউ। জুলাই’র মধ্যে এসওপি’র আলোচনা শেষ করার সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছিল ব্রাসেলস। এ নিয়ে ইউরোপের ২৮ রাষ্ট্রের জোট ইইউ প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসওপি’র নেগোসিয়েশন চূড়ান্ত করতে ঢাকাকে অব্যাহতভাবে চাপ দেয়ার ঘোষণা ছিল। তাছাড়া আগে থেকেই ইইউ’র তরফে বলা হয়েছিল ইউরোপের দেশগুলোতে আনডকুমেন্টেড বা অবৈধভাবে যেসব দেশের নাগরিক রয়েছেন তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় ওই সব দেশের সাধারণ নাগরিকদের ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করা হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, অবৈধদের ফেরানোর এসওপি সইয়ে আমরা প্রস্তুত। তবে নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইসহ কিছু বিষয়ে আমরা যৌক্তিক সময় চেয়েছি। এটা দিতে হবে। ইইউ জুলাই’র মধ্যে এসওপি’র আলোচনা শেষ করতে চেয়েছে। আমরাও চাই দ্রুত এটি শেষ হোক। এজন্য আমাদের প্রস্তাব সংযোজন করে জুলাইতেই আমরা ব্রাসেলসে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন তাদের বলেছি, আসুন এ নিয়ে বসে আলোচনা করি। অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার তরফে এসওপি নিয়ে আলোচনায় কোনো শর্ত নেই। শুধু অবৈধদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইয়ে ‘যৌক্তিক সময়’ চাওয়া হয়েছে। ‘যৌক্তিক সময়’র ব্যাখ্যায় ওই কর্মকর্তা বলেন, অনেক খুটিনাটি বিষয় রয়েছে। এটি খতিয়ে দেখতে যে সময় প্রয়োজন তা দিতে  হবে। ওই কর্মকর্তার মতে, মূলত ৪টি ক্যাটাগরিতে নাগরিকত্ব যাছাই করতে হবে। প্রথমত যারা দীর্ঘ সময় ধরে সংশোধনাগার বা পুলিশ কাস্টডিতে রয়েছেন। দ্বিতীয়. যারা বৈধ ভিসা নিয়ে গেছেন এবং এখন নানা কারণে অবৈধ বা অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন। তৃতীয়ত. যাদের পাসপোর্ট আছে, কিন্তু বৈধ ভিসা ছিল না বা নেই। চতুর্থ এবং সর্বশেষ যাদের হাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট বা বৈধ কোনো ডকুমেন্টই নেই। ওই কর্মকর্তার মতে, ভিনদেশি কেউ যেন বাংলাদেশে না ফিরে বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সরকার সতর্ক। এটি নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত যাচাই-বাছাইয়ে যে সময় লাগবে সেটাই চায় ঢাকা। তবে একটি বিষয়ে সব কর্মকর্তাই একমত তা হলো- ইইউ’র চাপে নয়, বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বার্থেই বিশ্বের কোথাও আন-ডকুমেন্টেড বা বৈধ ডকুমেন্টবিহীন কোনো  বাংলাদেশি থাকুক এটা চায় না। এদের বৈধকরণের প্রচেষ্টা নতুবা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নাগরিকত্ব যাছাই করে ফেরত নিয়ে আসার বিষয়ে সরকার  নীতিগতভাবে সম্মত। ইইউ’র সঙ্গে আলোচনা বা নেগোসিয়েশনে এটাই বলা হয়েছে এবং হবে জানিয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এটাই বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ড। এতে কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া সমীচীন হবে না। উল্লেখ্য, ইউরোপে থাকা বাংলাদেশিদের বিষয়ে ঢাকাকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য বা পরিসংখ্যান শেয়ার করেনি ব্রাসেলস। তবে ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) পরিসংখ্যান অধিদপ্তর ইউরোস্ট্যাট কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ইইউভুক্ত দেশগুলোয় ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন মোট ৯৩ হাজার ৪৩৫ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করেন ২০১৫ সালে, ২১ হাজার ৪৬০ জন। ২০১২ সালে ইউরোপে যান ১৫ হাজার ৩৬০ জন বাংলাদেশি। বাংলাদেশ এতদিন এ সংখ্যাকে অবিশ্বাস্য মনে করতো। কিন্তু সামপ্রতিক সময়ে সেই সংখ্যাকে আমলে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেটি ধরেই পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নিতে চায় ঢাকা।

Check Also

ট্রাইব্যুনালে আ.লীগ নেতাদের বিচার দেখতে এসে যা বললেন সাঈদী পুত্র

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।