মাথার উপর থেকে ছায়াটা সরে গেল’

গেল মাসের কথা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বসেছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৫ বিতরণ অনুষ্ঠানের আসর। ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ‘আরো ভালোবাসবো তোমায়’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কারটি হাতে নিয়ে বের হতেই দেখলেন মঞ্চের বাইরে নায়করাজ চেয়ারে বসা। পাশে দাঁড়ানো তার দুই সন্তান বাপ্পারাজ ও সম্রাট। নায়করাজকে দেখামাত্র মাথা নিচু করে তার পা ছুঁয়ে সালাম করলেন শাকিব। তখন নায়করাজ হাসিমুখে তাকে বললেন, কেমন আছো? তোমার উপর দিয়ে এখন অনেক ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে চিন্তা করবা না। এরকম ঝড় আমিও মোকাবিলা করেছি। কাজ করো, এগিয়ে যাও। কথাগুলো মন দিয়ে শুনেছিলেন শাকিব খান। কারণ নায়করাজ রাজ্জাককে তিনি মনে করতেন তার ফিল্মি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় অভিভাবক। সোমবার সেই অভিভাকের মৃত্যুর খবর পেয়ে সবার আগে হাসপাতালে ছুটে যান শাকিব। দুচোখে তখন তার অশ্রু ঝরছে। কোনোভাবেই চোখের পানি সবার কাছ থেকে আড়াল করতে পারেননি। প্রিয় সানগ্লাসটিও যেন চোখে রাখতে ভুলে গেছেন এই তারকা। হাসপাতাল থেকে এফডিসি, সেখান থেকে শহীদ মিনার, শহীদ মিনার থেকে গুলশান আজাদ মসজিদ, নায়করাজের বাসা, কবরস্থান কোথায় ছিল না তার পদচারণা। বাংলা চলচ্চিত্রে নায়করাজ রাজ্জাকের অবদান সবার ওপরে বলে দাবি করেছেন ঢালিউডের আলোচিত এ নায়ক। নায়করাজের দাফন শেষে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে শাকিব বলেন, রাজ্জাক স্যার আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। মাথার উপর থেকে ছায়াটা সরে গেল আমার। আমাকে বিভিন্ন সময় তিনি ভালো পরামর্শ দিয়েছেন। আমি তার সন্তানের মতো ছিলাম। সম্রাটের (নায়করাজের ছোট ছেলে খালিদ হোসাইন সম্রাট) কাছ থেকে তার মৃত্যুর খবর পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। যাতে তিনি ওপারেও নায়করাজ হয়েই থাকেন। শাকিব খান আরো বলেন, আমি সবসময় তার প্রেরণাকে সামনে রেখে এগিয়ে গেছি। সুখে হোক, দুঃখে হোক তার কাছে গিয়েছি। তিনি নিজেই একটা ইন্ডাস্ট্রি। চলচ্চিত্রের বিশাল এক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো। তবে আমি মনে করি, এখানেই শেষ না। তার কাজ আমাদের সারা জীবন স্মরণ করিয়ে দেবে। আমরাও বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে তাকে স্মরণ করবো। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে নায়করাজের সঙ্গে তার কথোপকথন প্রসঙ্গে শাকিব খান বলেন, আমি তাকে সালাম করেছিলাম। কীভাবে সামনে এগিয়ে যাব সে বিষয়ে তিনি আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। সবসময় তাকে পাশে পেয়েছি। তিনি কখনোই কাউকে ফিরিয়ে দিতেন না। তার দরজা সবসময় সবার জন্য খোলা থাকতো। নায়করাজের পরে যত স্টার-সুপারস্টার-অভিনেতা-অভিনেত্রী আসবে, তারা তার আদর্শকে সামনে নিয়েই এগোবে। তার অবদান বাংলা চলচ্চিত্র সবার ওপরে। তার সঙ্গে কাজ করে, কথা বলে অনেক কিছু শিখেছি আমি। আমার সব ভক্ত ও পুরো বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া কামনা করছি।

Check Also

‘পাকিস্তান দলে প্রত্যেক ক্রিকেটারই অধিনায়ক’

টি-টোয়েন্টি সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে পেরে ওঠেনি পাকিস্তান। তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচ পণ্ড হয়, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।