রাখাইনে পুলিশ চৌকি ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩২

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সীমান্ত পুলিশের ২০টির বেশি চৌকিকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর ১১ সদস্য ও ২১ জন রোহিঙ্গা বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দিবাগত ১টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে শুক্রবার সকালে এক বিবৃতি জানিয়েছিল দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির কার্যালয়।

ওই বিবৃতিতে প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংঘর্ষকালে পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং সাতজন রোহিঙ্গা নিহত হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল।

পরে শুক্রবার সকালে আক্রান্ত পুলিশ চৌকিগুলোকে ঘিরে সেনাবাহিনী অভিযান চালালে হতাহতের সংখ্যা বাড়ে।

সু চির কার্যালয়ের বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ‘চরমপন্থী বাঙ্গালি বিদ্রোহী’ আখ্যা দিয়ে বলা হয়, রাত ১টায় তারা রাখাইনের মংডাও এলাকার একটি থানায় হাতবোমা নিক্ষেপ করে, এছাড়া তারা বিভিন্ন পুলিশ চৌকিতে সমন্বিত হামলা চালায়।

ভোররাত ৩টার দিকে প্রায় ১৫০ জন রোহিঙ্গা একটি সেনাঘাঁটিতে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। সেনা সদস্যরা তাদের প্রতিহত করে।

মংডাও এলাকায় সংঘর্ষের খবর নিশ্চিত করে পার্শ্ববর্তী বুথিডং শহরের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সীমান্ত রক্ষীদের চৌকি ঘিরে ফেলে সশস্ত্র ব্যক্তিরা হামলা চালানোর ঘটনায় সেখানে তীব্র সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।

কিছু হামলাকারীর কাছে বন্দুক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী আসছে।

এখন পর্যন্ত জানা যায়নি সংঘর্ষে রোহিঙ্গাদের কোন অংশ জড়িত রয়েছে। বিশেষ করে উত্তর রাখাইনের প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার মে ইউ ভিত্তিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সেলভেশন আর্মির (আর্সা) সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবর থেকে রাখাইনে সহিংসতা চলছে। সীমান্ত পুলিশের চৌকিতে অস্ত্রধারীদের হামলায় নয়জন নিহত হওয়ার অভিযোগে রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে দমন অভিযান চালায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলকে বাইরে থেকে বিচ্ছিন্ন করে তাদের গ্রামে গ্রামে গণগ্রেফতার, হত্যা, নির্যাতন ও নারী-শিশুদের গণধর্ষণ করে মিয়ানমারের সেনা ও পুলিশ সদস্যরা। এ অবস্থায় প্রাণ বাঁচাতে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

সংখ্যালঘু মুসলিম জাতিগোষ্ঠীটির উপর চালানো এ সব ঘটনা জাতিগত নিধন অভিযান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বলে একাধিক প্রতিবেদনে জানায় জাতিসংঘ।

রোহিঙ্গা বিরোধী দমনপীড়নের ঘটনায় নীরবতা অবলম্বন করে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন মিয়ানমারের নোবেলজীয় গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অংসান সু চি। তার দল মিয়ানমারের সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছে, তিনি সরকারের পরামর্শক হলেও সবকিছু তারই ইশারায় চলে বলে মনে করা হয়।

রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে নিষ্ক্রিয় থাকার জন্য অভিযুক্ত সু চি রাখাইন রাজ্যের জন্য একটি এক বছর মেয়াদী কমিশন গঠন করেন। ওই কমিশনের প্রধান করা হয় জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ড. কফি আনানকে।

বৃহস্পতিবারের কফি আনান রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে তার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন সু চির কাছে হস্তান্তর করেন। এতে তিনি রোহিঙ্গাদের চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার প্রস্তাব করেছেন।

আনানের প্রতিবেদন দাখিলের কয়েক ঘণ্টার মাথায় শুক্রবার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সহিংসতার ঘটনা ঘটলো। তবে সু চির কার্যালয় তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে হামলার সম্পর্ক থাকার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে একে কাকতালীয় ঘটনা বলে বর্ণনা করেছে।

Check Also

ঢাকা প্রসঙ্গে বদলাতে পারে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি

পাঁচ দশকের বিরতির পর গত মাসে বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে একটি পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ ডক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।