আবার আগুন জ্বলছে মিয়ানমারের রাখাইনে। বাড়ির পর বাড়িতে আগুন জ্বলছে। জীবন বাঁচাতে ছুটছে নির্যাতিত, ভাগ্য বিড়ম্বিত রোহিঙ্গা মুসলিমরা। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের আবাসনের প্রতিটি স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে সোনবাহিনী। নিহতদের শোকে বাকরুদ্ধ আত্মীয়-স্বজন। চারদিকে কান্নার শব্দ। স্বজনের লাশ পিছনে ফেলে রুদ্ধশ্বাসে পালাচ্ছে মানুষ। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সর্বশেষ সহিংসতার পর এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জাই ডি পাইন নামের একটি গ্রামে সমবেত হয়েছেন আতঙ্কিত প্রায় ৭০০ রোহিঙ্গা। তাদের একজন বলেছেন, চারদিকে বাড়িতে আগুন। জীবন বাঁচাতে আমরা পালাচ্ছি। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করেন মোহাম্মদ শফি। তিনি বলেছেন, তার এক কাজিন অবস্থান করছেন মিয়ানমারে। তিনি টেলিফোনে বলেছেন, যেদিকে চোখ রাখা যায় সেদিকেই সেনাবাহিনীর উপস্থিতি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ব্রিসবেন টাইমস। এতে বলা হয়েছে, রাখাইনে এই যখন অবস্থা তখন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাসীরা পৌঁছে গেছে। এর আগে সরকার দাবি করেছে, রাখাইনে দেড় শ’ মুসলিম জঙ্গি একযোগে বিভিন্ন পুলিশ স্টেশন, সীমান্ত চৌকি ও সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এতে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৮৯ জন। এর মধ্যে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ১২জন সদস্য রয়েছেন। ইসলামপন্থি জঙ্গি ও নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের মধ্যে লড়াই তীব্র হওয়ার প্রেক্ষিতে আবার নতুন করে শরণার্থীদের ঢল নামছে বাংলাদেশের দিকে। অং সান সুচি বলেছেন, রাখাইনে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের ওপর সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলায় আমি কঠোর ভাষায় নিন্দা জানাই। উল্লেখ্য, রাখাইনে বসবাস করেন ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম। তাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর যে নৃশংসতা সে বিষয়ে কিন্তু সুচি কখনও কোনো নিন্দা জানান না। এ জন্য তার বিরুদ্ধে সমালোচনা তীব্র হয়েছে। ব্রিসবেন টাইমস লিখেছে, শুক্রবার ৩০টি নিরাপত্তা পোস্টে অস্ত্র ও হাতবোমা নিয়ে আক্রমণ চালায় প্রায় দেড় শ বিদ্রোহী। এ সময় উভয় পক্ষে কমপক্ষে ৮৯ জন নিহত হয়েছেন। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি। তারা নিজেদেরকে হরকাহ আল ইয়াকিন হিসেবে পরিচয় দেয়। এর ফলে এশিয়ায় নতুন করে ইসলামপন্থি উগ্রবাদের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্লেষকরা কিন্তু এ বিষয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করছেন। তারা বলেছেন এবং বলছেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের ওপর যে নিষ্পেষণ চালাচ্ছে তা থেকে সৃষ্টি হতে পারে শক্ত বিদ্রোহ। তা ছড়িয়ে পড়তে পারে সর্বত্র। এতে এ অঞ্চলে সৃষ্টি হতে পারে নতুন করে এক মানবিক সংকট। এ অঞ্চলজুড়ে বন্যার পানির মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে শরণার্থীরা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করছে, আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি হলো জঙ্গিদের গ্রুপ। তারা বিদেশে প্রশিক্ষণ পেয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রসঙ্গে মিয়ানমারের কমান্ডার ইন চিফ মিন অং হ্লাইং বলেছেন, বাঙালি উগ্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী। এখানে উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার বাঙালি অর্থাৎ বাংলাদেশী বলে দাবি করে, যদিও তারা যুগের পর যুগ মিয়ানমারের মাটিতে বসবাস করছে। রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও রক্তপাত বন্ধের সুপারিশ সম্বলিত রিপোর্ট প্রস্তুত করেছে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে। এতে সহায়তা দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। সেই রিপোর্ট প্রকাশের সময়ে রাখাইনে নতুন করে ওই হামলা হয়েছে। ওই রিপোর্টে রোহিঙ্গাদের চলাচলে বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে। কিন্তু সর্বশেষ সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কফি আনান। হামলাকারী ও সরকারের বৈষম্যমুলক আচরণেরও নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। গত বছর অক্টোবরে সীমান্তে টহল চৌকিতে হামলায় কমপক্ষে ৯ জন নিরাপত্তা রক্ষী নিহত হন মিয়ানমারের রাখাইনে। তার পর রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন। ফলে কমপক্ষে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। ওই ঘটনার পর জাতিসংঘ তদন্ত করে দেখেছে, নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা, বিশেষত দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর এমন কোনো অপরাধ নেই, যা তারা সংঘটিত করে নি। তারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। শিশুদের হত্যা করেছে। বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। ঘরের ভিতর মানুষ তালাবদ্ধ করে তাতে আগুন দিয়েছে
Check Also
ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়
দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …