করিমুল্লাহ। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের মংডুর বাসিন্দা। তিনি বলছেন, ‘তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। মংডুতে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং অচলাবস্থার তৈরি হয়েছে।’
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘রাস্তাঘাট জনমানবশূন্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, মার্কেটসহ সবকিছু বন্ধ রয়েছে। মানুষজন বের হচ্ছেন না।’
মিয়ানমারে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশের দিকে ছুটছেন হাজারো রোহিঙ্গা মুসলিম। বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলছে, শুক্রবার রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৯ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে ৭২ রোহিঙ্গা বিদ্রোহী ও নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য রয়েছে।
দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর এই হামলার কারণে সংঘাত নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে একই ধরনের হামলার পর দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমার সরকারের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে।
মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র বলছে, শনিবারও একটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এদিকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চি শুক্রবারের ওই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
শুক্রবার মিয়ানমার পুলিশের অন্তত ৩০টি পোস্ট ও সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে লাঠি, বন্দুক ও হাতে তৈরি বোমা নিয়ে হামলা চালায় রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা। পরে এসব স্থান থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গ্রামবাসীকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়।
রাখাইনে আরও সহিংসতার আশঙ্কায় হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশের দিকে আসছেন। বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদীতে প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গা ভাসছেন বলে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির এক কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলার ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ আলী হোসাইন রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
রাখাইনের ১১ লাখ রোহিঙ্গা শান্তির নোবেল জয়ী অং সান সু চির ১৬ মাসের প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংখ্যালঘুদের দেশটির সেনাবাহিনীর নৃশংস নিপীড়ন ও তাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে সু চির বিরুদ্ধে।
গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনের সহিংসতার পর বাংলাদেশে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম ঢুকে পড়েছে বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী বলছে, রাখাইন থেকে স্থানীয়দের হেলিকপ্টারযোগে সরিয়ে নেয়া হবে। এছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও অনেককে সরিয়ে নেবেন। স্থানীয়রা বলছেন, নিরাপত্তা বাহিনী ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে সংঘর্ষে ছড়িয়ে পড়ায় সেখানে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রচুর গাড়ি দেখা যাচ্ছে।