থেমে নেই জামায়াতে ইসলামী। চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নীরবে চলছে দলটির সাংগঠনিক তৎপরতা।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইতিমধ্যে গোপন জরিপের মাধ্যমে বিগত নির্বাচনে বিজয়ী এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সংসদীয় আসনগুলোকে টার্গেট করেই অর্ধশতাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করছে। এক্ষেত্রে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলের বিজয়ী হওয়া আসনগুলোকে টার্গেট করে মাঠে নেমেছে দলটি। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা করছে সংগঠনটি। পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে জোট প্রধান বিএনপির প্রতীক ধানের শীষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়। এক্ষেত্রেও কোনো জটিলতা দেখা দিলে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলনে আছি। এটা অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ’ তিনি বলেন, জামায়াতের নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে। নিবন্ধন প্রসঙ্গে বলেন, জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়টি এখনো উচ্চ আদালতে বিবেচনাধীন। জামায়াত সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে দলটি সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়েছে নির্বাচনের দিকে। জামায়াত যে কোনোভাবেই হোক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। সেক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোট প্রধান বিএনপিসহ শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে সে বিষয়টি মাথায় রেখেই সামনে এগোতে চায় দলটি। দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেতে হাই কোর্টে আপিল করেছে জামায়াত। রায় তাদের পক্ষে আসবে বলে তারা আশাবাদী। এই আপিলের শুনানি কবে হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আগামী নির্বাচনের আগে এ আপিলের কোনো ফয়সালা না হলে বিকল্প কৌশলে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি তারা নিচ্ছেন। এ বিষয়ে জামায়াতের ঢাকা মহানগরের নির্ভরযোগ্য দুই নেতা জানান, বিএনপি জোটের শরিক হলেও সব আসনেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। তবে বিগত নির্বাচনে বিজয়ী এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সংসদীয় আসনগুলোকে টার্গেট করেই অর্ধশতাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করছে। এরই মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে তিন ক্যাটাগরিতে (এ, বি ও সি) প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের দলের কেন্দ্র থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে প্রাথমিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই মূলত বিএনপি জোটের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে জামায়াত। সর্বশেষ ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদে বিএনপির সঙ্গে জোটগতভাবে ৩৯টি আসনে নির্বাচন করেছিল। তাই বিগত দিনের বিজয়ী এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনগুলো চিহ্নিত করে আগামী নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের কাছে প্রায় ৫০টি আসনে জামায়াতের প্রার্থী দেওয়ার জোর তদবির চালাবেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করলেও অন্তত ৬০টিতে জোটের সমর্থন নেওয়ার চিন্তা ছিল দলটির। ওই সময় ৪৩টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছিল জামায়াত। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩৯টি আসনে জামায়াতের প্রার্থীরা নির্বাচন করলেও তৎকালীন বিএনপি জোট তাদের সমর্থন দেয় ৩৪টিতে। তবে বিএনপি জোটের সঙ্গে সমঝোতা না হলে আগামী নির্বাচনে ৫১টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে জামায়াত। পাশাপাশি দলের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা ও নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদে নেতা-কর্মীরাও কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছেন সাংগঠনিক কার্যক্রম। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ের প্রশ্নে সরকারের শক্ত অবস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে কৌশল নির্ধারণে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করছেন। সে জন্য দলকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বিতর্কিত ব্যক্তিদের আপাতত দলের সব পদ-পদবি থেকে দূরে রাখা হচ্ছে। দলের আগের কমিটিতে নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এখন কারাগারে আছেন; বর্তমান কমিটিতে কোনো পদ-পদবি দেওয়া হয়নি তাকে। কৌশলী হয়ে দলটি বিএনপির সঙ্গে জোটগত সম্পর্ক রক্ষার কাজও চালিয়ে যাচ্ছে অত্যন্ত গোপনে। সে জন্য দলের নেতা-কর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় সুসংগঠিত হওয়ার পাশাপাশি বিএনপির সব ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। কর্মসূচি পালনের নামে কোনো রকম ঝুট-ঝামেলায় জড়াতে চান না জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। একেবারেই নীরব থাকার পরিকল্পনা করছেন তারা। এর মাধ্যমে নিজেদের একটা ক্লিন ইমেজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে।’বাংলাদেশ প্রতিদিন