ধর্ষণের দায়ে কথিত ধর্মগুরু রাম রহিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড#ধর্মগুরুদের যত অপকর্ম

 ধর্ষণের দায়ে কথিত ধর্মগুরু রাম রহিম সিংকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ভারতের একটি আদালত।

সোমবার বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটে এ দণ্ড ঘোষণা করা হয়।

এ রায়কে বিরলের বিরলতম ঘটনা বলে মন্তব্য করেছে সিবিআই।

এদিকে রায়ের পর দুটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে কথিত ধর্মগুরুর সমর্থকেরা। তবে ওই ধর্মগুরুর আস্তানার চেয়ারপারসন বিপাস্যনা ইনসান তাদের অনুসারীদের শান্তি বজায় রাখতে বলেছেন।

ভারতের সংবাদমাধ্যম বলছে, রায় ঘোষণার পর কান্নায় ভেঙে পড়লেন ধর্ষক রাম রহিম সিং। এ সময় হাত জোড় করে বিচারকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করেন তিনি।

জানা গেছে, সোমবার দুপুর আড়াইটায় ভারতের রোহতকের সুনারিয়ার জেলখানার ভেতরের বিশেষ আদালতে সাজা ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু হয়। দুপুর সোয়া দুইটার দিকে সেখানে পৌঁছেন বিচারক জগদীপ সিংহ।
ওই জেলেই বন্দী রাম রহিম। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জেলের ভেতর রায় ঘোষণার জন্য ওই আদালত বসে।
দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ কপ্টারে জেলে প্রবেশ করলেন দু’পক্ষের আইনজীবীরা।
রায় ঘোষণার আগে বিশেষ আদালতে দু’পক্ষের আইনজীবীকে ১০ মিনিট করে বলার সময় দেন বিচারক জগদীপ সিং।
এ সময় রাম রহিমের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, রাম রহিম একজন সমাজসেবক। জনগণের কল্যাণের জন্য তিনি কাজ করেন। এ জন্য বিচারকদের অনুরোধ করেন দণ্ড কমিয়ে দিতে।

এদিকে জেলের বাইরের নিরাপত্তায় প্রায় ৩ হাজার আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন ছিল। রায়কে কেন্দ্র করে এদিন জেলের দিকের সমস্ত রাস্তা বন্ধ দেয়া হয়।

রোহতকের পুলিশের ডেপুটি কমিশনার জানিয়েছেন, কেউ বিশৃঙ্খলা বাঁধানোর চেষ্টা করলে একবার সতর্ক করা হবে, না শুনলেই গুলি।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, বিশৃঙ্খলা এড়াতে হরিয়ানা ঘেঁষা পঞ্জাব এবং গাজিয়াবাদ ও নয়ডাতেও স্কুল, কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফলে সোমবার হরিয়ানার সমস্ত স্কুল, কলেজ বন্ধ রয়েছে।
ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে রোহতকের সুনারিয়ার জেলে বন্দি ডেরা সচ্চা সৌদার প্রধান, গুরমিত রাম রহিম সিং।

শুক্রবার সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন রাম রহিম। রায় বের হতেই ডেরা সমর্থকদের লাগামছাড়া তাণ্ডবে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৮ জনের।

ডেরা সমর্থকদের না ঠেকাতে পারায় আঙুল উঠেছে প্রশাসনের দিকে। সে দিনের কথা মাথায় রেখে আর কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চাইছে না প্রশাসন। নিরাপত্তার স্বার্থে জেলের মধ্যেই উড়িয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে বিচারকসহ গোটা আদালত।

তিনস্থরের নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা রোহতক। সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের সেই বিচারক জগদীপ সিংহকে ইতিমধ্যেই বিশেষ নিরাপত্তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ইতিমধ্যেই আটক করা হয়েছে প্রায় হাজার খানেক ব্যক্তিকে। ডেরার সদর দফতর থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৩০ হাজার ভক্তকে।

জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে ২৮ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী।

ভারতের ধর্মগুরুদের যত অপকর্ম

 

প্রায় দেড়শো কোটি মানুষের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে ধর্মগুরুর পরিচয়ে ঘটছে একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা। বাদ যাচ্ছে না ধর্ষণ, হত্যা, গুম এমনকি অর্থ আত্মসাতের মতো গুরুতর অভিযোগও।
বিতর্কিত ‘ধর্মগুরু’ গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের ঘটনায় ফের সামনে চলে এসেছে গেলো কয়েক বছরে বেশ ক’জন কথিত ধর্মগুরুর আপত্তিকর কর্মকাণ্ড।
শুধু নামেই ধর্মগুরু। পরনে নেই গেরুয়া পোশাক । প্রায়ই দেখা যায় সিনেমায় অভিনয় করতে। ঝলমলে পোশাক গায়ে মিউজিক ভিডিওতে নাচের দৃশ্যও বিরল নয়। বলা হচ্ছে ধর্ষণের দায়ে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া বিতর্কিত ধর্মগুরু রাম রহিম সিংয়ের কথা, যিনি কিনা ডেরা সাচ্চা সওদা নামে পরিচিত এক ধর্মমতেরও প্রচারক।
‘নেশাগ্রস্ত, পথভ্রষ্ট যুবসমাজকে সুপথে রাখতেই সিনেমার মতো বিশাল মাধ্যমে কাজ করি আমি’-রকস্টার বাবা নামে পরিচিত রাম রহিম সঙ্গীত ও চলচ্চিত্র জগতে নিজেকে সঁপে দেয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন ঠিক এভাবেই। সেই ধর্মগুরুই কিনা এবার দোষী সাব্যস্ত হলেন ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগে।
শুধু ধর্ষণ নয়, বিতর্কিত এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে আছে অভিযোগের পাহাড়। নিজের জারিজুরি ফাঁস হয়ে যেতে পারে এমন শঙ্কা হলেই সরিয়ে দিতেন পথের কাঁটা। প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে সরকার ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে ঘটনা ধামাচাপা দিতেও ওস্তাদ রাম রহিম। বাদ যেতেন না নিজের আশ্রমের সাধুরাও।
রাম রহিমই প্রথম নয়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ধর্মগুরুদের আপত্তিকর কর্মকাণ্ডের উদাহরণ মেলে ভুরিভুরি। এদেরই একজন আশারাম বাপু যিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন নাবালিকা ধর্ষণের মামলায়। রয়েছে নারী শিষ্যদের সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও ধারণের অভিযোগও। একই রকম অভিযোগ তার ছেলে নারায়ন সাইয়ের বিরুদ্ধেও।
যৌন কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে স্বামী নিত্যানন্দেরও। একটি চ্যানেলের স্টিং অপারেশনে এক অভিনেত্রীর সাথে আপত্তিকর দৃশ্যেও দেখা যায় তাকে । তার আশ্রমে অভিযান চালিয়ে মেলে মাদকদ্রব্য ও জন্মনিরোধক সামগ্রীও।
রাম রহিমের হরিয়ানাতেই আরেক স্বঘোষিত ধর্মগুরু রামপালকে গ্রেফতারের ঘটনাও বেশিদিন আগের নয়।
যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৪ সালে তার আস্তানা থেকে তাকে গ্রেফতার করতে গেলে ভক্তদের বাধার মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। মহিলাদের টয়লেট থেকে জব্দ করা হয় সিসিটিভি।
শুধু ভক্তদের অন্ধ সমর্থন নয় বরং রাজনৈতিক সমর্থনও অনেকটাই দায়ী এসব ধর্মগুরুর উত্থানের পেছনে এমনটাই মত বিশ্লেষকদের। বিশাল ভক্তকূলকে ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করতেই তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয় এমনটাই মত তাদের।

Check Also

ট্রাইব্যুনালে আ.লীগ নেতাদের বিচার দেখতে এসে যা বললেন সাঈদী পুত্র

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।