ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্ট রাখাইনে আইএস প্রতিষ্ঠার গুরুতর অভিযোগ মিয়ানমারের

রাখাইনে লড়াইরত ইসলামী উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছে মিয়ানমার। তারা দাবি করছে, লড়াইরত রোহিঙ্গা উগ্রপন্থিরা রাখাইনের টালমাটাল পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে। এ সুযোগে তারা রাখাইনে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এতে তাদেরকে সহযোগিতা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সহায়তামুলক গ্রুপগুলো। মঙ্গলবার এ নিয়ে কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন পুলিশের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উইন তিন। তিনি বলেছেন, গত শুক্রবারে এবং অক্টোবরে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি। তাদেরকে সহযোগিতা করছে বিদেশী কিছু গ্রুপ। আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি’কে সুপারভাইজড করেছে সৌদি আরবের ১১ জন নাগরিক। তারা তাদেরকে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উইন তিন-এর এমন অভিযোগ নিয়ে নতুন করে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। কিন্তু আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি সন্ত্রাসী হামলা চালালেও কেন নিরীহ রোহিঙ্গা মানুষ নির্যাতিত হচ্ছেন, মা-বোনকে ধর্ষণ করা হচ্ছে, গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে মানুষ, পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বাড়িঘরÑ এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন সাংবাদিক মাইয়ো মাইয়ো এবং জেমস হুকওয়ে। এতে বলা হয়েছে, শুক্রবারের হামলার প্রেক্সিতে মিয়ানমার যেভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে তার তীব্র সমালোচনা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। বিশ্ব সম্প্রদায়, জাতিসংঘ মহাসচিব সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবারের হামলার পর কমপক্ষে ১০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে রাখাইনে। এর বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। এর ফলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ঢল নামছে পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে। ২০১২ সালে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে কমপক্ষে ৮০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল লিখেছে, আগামী নভেম্বরে মিয়ানমার সফরে যাওয়ার কথা পোপ ফ্রাঁসিসের। তিনি রোহিঙ্গা মুসলিমদের পূর্ণাঙ্গ অধিকার দেয়ার ক্রমবর্ধমান দাবির সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। ক্রম অবনতিশীল পরিস্থিতিতে সোমবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরাঁ। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেখে থাকে মিয়ানমার। তাদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। তাদের স্বাভাবিক চলাচল ও অন্যান্য অধিকারে রয়েছে বিধিনিষেধ। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তাদের কমপক্ষে এক লাখ ৪০ হাজারকে। তারা অবস্থান করছেন অস্থায়ী ক্যাম্পে। রোহিঙ্গাদের এই দুর্ভোগ মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির জন্য উভয় সঙ্কট হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তিনি যদি রোহিঙ্গাদেরকে অধিকতর অধিকার দেন তাহলে বৌদ্ধ কট্টরপন্থিদের ক্ষোভের মুখে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে তার। রাজনীতিতে তুলনামুলক মুক্ত পরিবেশ ফিরে আসার পর এসব বৌদ্ধের রয়েছে ক্রমবর্ধমান প্রভাব। তারাই সুচিকে ক্ষমতায় এনেছেন। শুধু যে বৌদ্ধরা ক্ষুব্ধ হবেন তা-ই নয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সুচির সম্পর্কে অবনতি ঘটতে পারে। মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ সরকারের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এই সেনাবাহিনীর হাতে। ফলে সুচি সেই ঝুঁকি না নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। আর তাই তিনি রোহিঙ্গা উগ্রপন্থিদের সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্যদাতা এজেন্সিগুলোকে অভিযুক্ত করেছেন। বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের মংডুতে সামরিক অভিযানের পক্ষে সাফাই গাইছেন। ওদিকে পুলিশের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উইন তিনের পাশাপাশি মঙ্গলবার কূটনীতিকদের ব্রিফিং করেন মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ড জেনারেল কাইওয়া শয়ে। তিনি অভিযোগ করেছেন, তদন্তে দেখা গেছেÑ উগ্রপন্থিদেরকে অ্যামোনিয়া ও সার সরবরাহ করেছে আন্তর্জাতিক সাহায্য বিষয়ক কতগুলো এজেন্সির কিছু সদস্য। উগ্রপন্থিরা এসব ব্যবহার করে বিস্ফোরক তৈরি করছে। ওদিকে হামলার শিকার হতে পারেন এমন আশঙ্কায় ওই এলাকা থেকে জরুরি প্রয়োজনে লাগেন না এমন কর্মকর্তাদের সরিয়ে নিচ্ছে জাতিসংঘ। আবারও রাখাইনে জাতি নির্মূলের কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় নি বলে দাবি করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্ঠা তাউঙ তুন। তিনি বলেছেন, মংডু পরিস্থিতি আসলেই চরম মাত্রায় জটিল। এ সমস্যার সহজ ও দ্রুত কোনো সমাধান নেই।
রাখাইনে সহিংসতা চলছেই। মংডুতে অবস্থানকারী একজন মুসলিম শিক্ষার্থী মঙ্গলবার টেলিফোনে বলেছেন, সেনাবাহিনী তার বাড়িতে আগুন দিয়েছে। গুলি করেছে তার এক বন্ধুকে। তাকে হত্যা করা হয়েছে। তখন ওই বন্ধু সাহায্য চেয়ে কাকুতি করছিলেন। কিন্তু কোনো সহায়তা দিতে পারেন নি তিনি। তিনি বলেন, আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যখন কথা বলছিলাম ঠিক তখনই এ ঘটনা ঘটে। তারপর আমি অস্থায়ী আশ্রয়ে চলে এসেছি আমি। সেনারা এখন রাস্তায় কোনো মুসলিমকে দেখলেই গুলি করছে।

Check Also

সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা  অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।