১ সপ্তাহে মিয়ানমারের আরাকান বা রাখাইন অঞ্চলে ৪’শ হতাহতের ঘটনা স্বীকার করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সিঙ্গাপুরের অনলাইন মিডিয়া দি স্ট্রেইটস টাইম এ খবর দিয়ে বলছে,মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গাদের দমন করার যে সহিংসতা চলছে তাতে এটি সবচেয়ে মারাত্মক দ্বন্দ্বের ঘটনা।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হিসেবে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১৩ ও ১৪ জন বেসামরিক নাগরিক মারা গেছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী নিহত হয়েছে ৩৭০ জন। বৃহস্পতিবার মিয়ানমার সেনাবাহিনী এ তথ্য জানায়।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা বলছে তাদের ওপর মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা হামলা করেছে, তরুণদের হত্যা করছে এবং বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ ও লুটপাট চালাচ্ছে।
মিয়ানমারে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা অং সাং সুচির জন্যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার ও নাগরিক স্বীকৃতি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চলে আসছে।
২০১২ সালে আরাকান বা রাখাইনের রাজধানী সিতুই শহরে সহিংসতায় ২’শ রোহিঙ্গা মারা যায়। ওই সময় ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। গত অক্টোবরে একটি থানায় রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়। এবার কয়েক সপ্তাহ ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী সার্জিক্যাল অপারেশন শুরু করলে ফের সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী বলছে আরাকান বা রাখাইন অঞ্চল থেকে ১১ হাজার ৭’শ জাতিগত বাসিন্দাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। হিন্দু প্রধান গ্রামগুলো থেকে দেড়’শ রোহিঙ্গা বিদ্রোহী আক্রমণ চালায় বলেও জানায় দেশটির সেনাবাহিনী। মিয়ানমারের সরকারি মিডিয়া গ্লোবাল নিউ লাইট জানায়, ওই এলাকা থেকে ৭’শ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। চারজন রোহিঙ্গা বিদ্রোহীকে গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের মধ্যে একজনের বয়স ১৩ বছর। এছাড়া মংগদু এলাকা থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আরো বেশ কিছু সন্দেহভাজনকে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী হিসেবে গ্রেফতার করেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে ২০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান সীমান্তে অপেক্ষা করছে বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্যে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্যে খাবার ও আহত রোহিঙ্গাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। নাফ নদীতে ডুবে যাওয়া ২০ জন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধারের পর শুক্রবার আরো ১৬জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অন্তত ৪০ জন রোহিঙ্গা মুসলমান নাফ নদীতে ডুবে মারা গেছে।