রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ৬০ হাজার: জাতিসংঘ

জাতিসংঘের হিসেবে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে গত ৮ দিনে সহিংসতার কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজারে পৌঁছেছে।
জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার বা ইউএনএইচসিআর এর কর্মকর্তা ভিভিয়ান ট্যান বলেছেন, যে ভাবে লোক আসছে তাতে আর কয়েক দিনেই সীমান্তে যে শিবিরটি আছে তা পুরো ভরে যাবে। খবর বিবিসি
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুটেরেস সেখানে একটি মানবিক দুর্যোগ তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত সপ্তাহে সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে, কিন্তু বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লোকেরা বলছে, সৈন্যরা তাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এবং তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। তবে মিয়ানমারের সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, সেখানে কেবল একটি রোহিঙ্গা গ্রামেই সাতশো বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
এর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এরদোয়ান যেভাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা করা হচ্ছে তাকে রীতিমত গণহত্যা বলে বর্ণনা করেন।
মানবাধিকার সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, এখনো প্রতিদিনই হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশ পালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসেবে শনিবার পর্যন্ত ৫৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে।
যদিও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, সেজন্য তারা সীমান্তে তৎপর রয়েছেন। কিন্তু গত ২ দিন ধরে সীমান্তে কিছুটা শিথিলতা দেখানো হচ্ছে বলে সূত্রগুলো অনানুষ্ঠানিকভাবে বলছে।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম জানান, একেবারে দুস্থ মহিলা এবং শিশুদের জন্য কিছু ক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনা করা হচ্ছে।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমরা তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছি। ফিরিয়ে দেয়ার পরও মানবিক দিক বিবেচনা করে যারা নিতান্তই অসুস্থ বা বৃদ্ধ মহিলা, শিশু এবং বেশ কিছু আহত, তাদেরকে তো আমাদের আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা, এগুলো না দিলেই নয়। এটা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগেও বলেছেন, এখনও আমরা সেটা দিযে চলেছি।‘
এইচ টি ইমাম আরও বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যারা এই আক্রমণের শিকার, তাদের নিরাপত্তা দিতে হলে মিয়ানমারের মধ্যেই দিতে হবে। এটা আন্তর্জাতিক রেড ক্রসই করতে পারে।
হাজার হাজার শরণার্থী বাংলাদেশে ঢুকে আশ্রয় এবং খাবারের জন্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
কক্সবাজার থেকে রেড ক্রিসেন্টের সহকারী পরিচালক সেলিম আহমেদ বলছিলেন, গত ২৫ শে অগাষ্ট মিয়ানমারে সংঘাত শুরুর পর পরই রোহিঙ্গা যারা বাংলাদেশে ঢুকেছে, তাদের বেশির ভাগই উখিয়ার কুতুপালং এ নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছে
এখন সেখানে জায়গা না থাকায় শরণার্থীদের একটা অংশকে নোয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নেয়া হচ্ছে।

তবে নতুন শরণার্থীদের বড় অংশই বিভিন্ন রাস্তার দুই পাশে পলিথিন টানিয়ে বা খোলা আকাশের নীচে থাকছে।
সেলিম আহমেদ বলেন, শরণার্থীদের সহায়তায় যে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কাজ করছে, তারাও বড় অংশের কাছে খাদ্য সাহায্য পৌঁছাতে পারছে না। কারণ সংস্থাগুলো এখানকার পরিস্থিতিতে ঠিক অ্যাসেসমেন্ট করতে পারছে না।
রেড ক্রসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস থেকে বড় একটা টিম এসেছে। সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা যারা আছে, আমরা রোবাবার থেকে তাদের উপর একটা জরিপ করবো।তাদের নোম্যান্স ল্যান্ডেই খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনা আমরা করছি।কারণ নোম্যান্স ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গারা কোন সহায়তা পাচ্ছে না।
জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার বা ইউএনএইচসিআর এর কর্মকর্তা ভি ভিয়ান ট্যান বলেছেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শরণার্থীদের অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।সকলকেই খাদ্যসহ জরুরি সহায়তা দেয়ার চেষ্টা তারা করছেন।

টেকনাফের হোয়াইকং ইউনিয়নের মেম্বার জালাল আহমেদ জানিয়েছেন, তিনি তার গ্রামের একটি স্কুলে পাঁচশ’র মতো রোহিঙ্গার অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। তারা সীমান্ত পার হয়ে এসে রাস্তার পাশে পলিথিন দিয়ে থাকার চেষ্টা করছিলেন। সেটা দেখে আমি তাদের গ্রামের স্কুলে এনে রেখে কিছু খাবার ব্যবস্থা করেছি। এদের বেশিরভাগই মহিলা ও শিশু।
সীমান্তবর্তী সেই স্কুলে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেয়া কয়েকজন শরণার্থী বলছিলেন, তারা কয়েকদিন ধরে পাহাড় জঙ্গল পারি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে একদিন খোলা আকাশের নীচে ছিলেন।এরপর স্কুলে উঠেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোথায় তাদের আশ্রয় হবে, খাবার জুটবে কিভাবে, এসব নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
এদিকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা যাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না যায় বা লোকালয়ে মিশে না যায়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।