অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবারের মত টেস্টে হারিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্টে টাইগারদের বোলিং-ব্যাটিংয়ে রীতিমতো উড়ে গেছে অজিরা। চট্টগ্রাম টেস্টের আগে হারের কোন অজুহাত না খুঁজে অধিনায়ক স্মিথ স্বীকার করে নিয়েছেন যে বাংলাদেশ তাদের উড়িয়ে দিয়েছে। কাল চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ টেস্টে মুখোমুখি হবে দুই দল। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ম্যাচের আগে স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন ঢাকা টেস্টের পুনরাবৃত্তি করতে পারলে জয় সম্ভব। টাইগার অধিনায়ক লড়াই শুরুর আগে বলেছিলেন জয় দিয়েই সিরিজটিকে ঐতিহাসিক বানাতে চান। প্রথম ম্যাচ জয়ে তার সেই আশা অনেকটাই পূর্ণ হয়েছে। এবার দ্বিতীয় জয়ে নিশ্চিত হবে আরো একটি ইতিহাস। এই ম্যাচ জিতলে চতুর্থবার টেস্ট সিরিজ জয়ের ইতিহাস হবে। এর আগে ৫০ টেস্ট সিরিজের মাত্র ৩ টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ দল। আর ড্রর সংখ্যা ৬টি। এছাড়াও এই ম্যাচ জিতে গেলে প্রথম বারের মত আইসিসির র্যাংঙ্কিয়ে ৮ এ উঠে আসবে দল।
চট্টগ্রামে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আজ অনুশীলনের সময়ও বেশ বৃষ্টি হয়েছে। তবে মুশফিক বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে নেই। খেলেই জিততে চান। তিনি বলেন, ‘খেলেই আমরা যেন জয়টা নিতে পারি। এর চেয়ে বড় আর কিছু হয় না।’
বাংলাদেশ দল প্রথম টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে। সেটি ছিল এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। তবে দেশের বাইরে প্রথম সিরিজ জয়টি আসে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সেবার ২-০ তে সিরিজ জিতে নিয়েছিল টাইগাররা। শেষটি ২০১৪ সালে দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩-০ তে। তবে টেস্ট খেলুড়ে বড় দল গুলোর বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া আর কোন দেশের বিপেক্ষে সিরিজ জিততে পারেনি টাইগাররা। সবশেষ এই বছর শ্রীলঙ্কার মাটিতে ১-১ এ সিরিজ ড্র করেছে বাংলাদেশ দল। কাল থেকে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টাইগারদের অন্যতম লক্ষ্য সিরিজ জয়।
সিরিজ জিততে হলে চট্টগ্রামে ঢাকার মতই সেরা খেলাটা খেলতে হবে। তবে চট্টগ্রাম টেস্টে একাদশে পরিবর্তন হবে কিনা তা নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও টাইগারদের পক্ষ থেকে তেমন কিছু জানানো হয়নি। তবে শেষ ম্যাচে টাইগারদের ব্যাটিং ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মত। সাকিব, তামিম রান করলেও দলের আর কেউ বড় অবদান রাখতে পারেননি। তাই শোনা যাচ্ছে একজন পেসার কমিয়ে দলে বাড়ানো হতে পারে আরো একজন ব্যাটসম্যান। ধারণা করা হচ্ছে মোস্তাফিজুর রহমানের পরিবর্তে লিটন কুমার দাসকে খেলানো হতে পারে। এছাড়াও ইমরুল কায়েসের পরিবর্তে দলে আসতে পারে মুমিনুল হক সৌরভ। অন্যদিকে চট্টগ্রাম টেস্টে এবার অজি অধিনায়ক স্মিথ কেমন একাদশ হবে তা প্রকাশ করেন নি। অথচ ঢাকা টেস্টের আগে গড় গড় করে একাদশ বলে দিয়েছিলেন।
একাদশ প্রকাশ না করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ক্রিকেটের জন্য অ্যামেজিং। তবে প্রতিপক্ষ হিসেবে তারা কৌশল জেনে যাবে এ কারণে একাদশ ঘোষনা করা হয়নি তা ঠিক নয়।
স্মিথ বলেন, ‘চট্টগ্রামের আকাশে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। আজ রবিবার সকালেও বৃষ্টি হয়েছে। দিনভর আকাশ মেঘলা ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়েছে। এতে ম্যাচের ভাগ্য নিয়ে আমরা চিন্তিত। দুর্যোগপূর্ণ আাবহাওয়ার কারণেই একাদশ ঠিক করতে আমাদের দেরি হচ্ছে।’
অস্ট্রেলিয় অধিনায়ক বলেন, ‘একাদশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা একাদশ জানাব কাল টসের সময়। আরেক দফা উইকেট দেখার দরকার আমাদের। এখন সেটি ঢেকে রাখা হয়েছে। উইকেটের ধারণা নিয়েই বলতে পারব আমাদের একাদশ কেমন হওয়া উচিত।’
তবে ধারণা করা হচ্ছে এবার তারা তিন স্পিনার নিয়েই মাঠে নামবেন।
ঢাকা টেস্টের মত চট্টগ্রামও টাইগাররা নিজেদের পছন্দের স্পিন সহায়ক উইকেট পাচ্ছেন এমনটাই জানিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। তবে অজিদের তিন স্পিনারের কথা চিন্তা করে তারা একাদশ সাজাবেন সেটাও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ওদের কে আসছে, সেটার উপর নির্ভর করে আমাদের দল হবে। আমাদের টপঅর্ডার বা বটমঅর্ডার সব জায়গায় ব্যাটসম্যান আছে। সবদিকে কাভার করা আছে। আমরা চেষ্টা করব ওদেরটা মাথায় রেখে দল সাজাতে। আমরা নিজেদের শক্তি অনুসারে খেলব। গত টেস্টেও নিজেদের শক্তির উপর স্থির ছিলাম। এই টেস্টেও থাকব।’
আজ রবিবার বিকেলে চট্টগ্রামের হোটেল রেডিসন ব্লু’র কনফারেন্স রুমে ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন অধিনায়ক মুশফিক রহিম।