মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা নিধনে চলমান নিপীড়ন ও গণহত্যায় এ পর্যন্ত হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা মুসলমান বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি।
দেশটির নোবেল বিজয়ী রাজনীতিবিদ অং সান সুচিকে এমন ঘটনা বন্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শুক্রবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি।
পূর্বের সংঘর্ষের ভয়াবহতা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের মতামতের বরাত দিয়ে ইয়াংহি লি নামের ওই প্রতিনিধি বলেন, চলমান সহিংসতায় এরই মধ্যে হয়ত ১ হাজার কিংবা তারও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, নিহতরা দুই পক্ষেরই হতে পারেন। তবে বেশিরভাগই রোহিঙ্গা।
সংবাদ সংস্থাটির বরাতে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, গত দুই সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে ১ লাখ ৬৪ হাজার বেসামরিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।
এদিকে আজ শুক্রবার জাতিসংঘের দেয়া তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে।
মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করায় এরই মধ্যে রিফিউজি ক্যাম্পগুলো উপচে পড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আগস্টের ২৫ তারিখ রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’রা বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে এমন অভিযোগের পর থেকে তাদের উপর শুরু হওয়া নিপীড়নের সময়ে রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার পর থেকে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে মত প্রত্যক্ষদর্শীদের।
বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারে সব সময়ই বঞ্চনার শিকার রোহিঙ্গারা। কয়েক পুরুষ ধরে মিয়ানমারে বসবাস করে আসলেও দেশটি তাদের নাগরিকত্বকে অস্বীকার করে তাদের বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসী বলে আখ্যা দিয়ে আসছে।
তবে মিয়ানমার সরকারের তথ্যানুযায়ী নিহতের সংখ্যা ৪৩২। এর আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলেছিল তাদের হাতে ৩৮৭ জন রোহিঙ্গা জঙ্গি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহিনীর ১৫ সদস্যও নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, ২৫ আগস্টের পর থেকে ৬ হাজার ৬০০ রোহিঙ্গা মুসলমানের বাড়ি এবং অন্যান্য ধর্মালম্বীদের ২০১টি বাড়ি পুড়েছে এ অঞ্চলে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরও জানায়, এ ঘটনায় ৩০ জন বেসামরিক নাগরিকও নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সাতজন রোহিঙ্গা, সাতজন হিন্দু এবং ১৬ জন রাখাইন বৌদ্ধ।
মিয়ানমার সরকার এ তথ্য দিলেও লি বলছেন, মিয়ানমার সকারের পক্ষে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা গোপন করা খুবই সম্ভব।
তিনি বলেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে, সরকারের দেয়া তথ্যে সন্দেহ থাকলেও আমরা কোনোভাবেই বিষয়টির তদন্ত করতে পারছি না।
রোহিঙ্গারা নিজেরাই তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছেন মিয়ানমার সরকারের এমন দাবির প্রতি গভীর সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তাহলে পাশের বৌদ্ধদের গ্রামগুলোতে আগুন ছাড়লো না?
মিয়ানমার সরকারের দাবির প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি আরো বলেন, আপনি যদি বন্দুকসহ লোকজন দেখেন তবে আপনি পালাতে শুরু করবেন এবং ভীত থাকবেন, নিজের ঘরে আগুন দেয়া কী এতটা সহজ?