বার্মায় মুসলিম বিরোধী এক উগ্র বৌদ্ধ ভিক্ষুর কথা#সাজানো ছবিতে রোহিঙ্গাদের দায়ী করছে মিয়ানমার

ডেস্ক: মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত হিংসাত্মক বক্তব্য তুলে ধরার জন্য অনেকের কাছেই পরিচিত উগ্রপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষু আশ্বিন উইরাথু ।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিষয়ে বৌদ্ধদের মনে ভীতি ছড়ানোর জন্য তাকে অভিযুক্ত করা হয়।

এমনকি জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি-কে ‘বেশ্যা’ বলে গালমন্দ করেছেন এ বৌদ্ধ ভিক্ষু আশ্বিন উইরাথু।

১৫ বছর আগেও এ বৌদ্ধ ভিক্ষু কারো কাছে পরিচিত ছিলেন না। ১৯৬৮ সালে জন্ম নেয়া আশ্বিন উইরাথু ১৪ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে ভিক্ষু হতে গিয়েছিলেন।

২০০১ সালে তিনি মুসলিম-বিরোধী এবং জাতীয়তাবাদী একটি গ্রুপ গঠন করেন, যার নাম ছিল ৯৬৯ গ্রুপ। এ সংগঠনটিকে উগ্রপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

যদিও উগ্রপন্থার বিষয়টি মি: উইরাথুর সমর্থকরা বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন।

২০০৩ সালে তাঁকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১০ সালে অন্যান্য রাজবন্দীর সাথে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়।

সরকার নিয়ম শিথিল করার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেন।

তিনি ইউটিউব এবং ফেসবুকে তাঁর নানা ধরনের বক্তব্য ছড়াতে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাঁর ৩৭ হাজারের বেশি ফলোয়ার ছিল ।

২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যে মুসলমান এবং বৌদ্ধদের মধ্যে যখন তীব্র সংঘাত শুরু হয়। সে সময় আশ্বিন উইরাথু তাঁর জ্বালাময়ী বক্তব্য নিয়ে জনসমক্ষে আসেন।
তাঁর একটি পরিচিত উক্তি ছিল, ” তুমি যাই করো, সেটা একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে করবে।”

তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি ‘বার্মার বিন লাদেন’ কি না? জবাবে মি: উইরাথু বলেছিলেন, এ বিষয়টি তিনি অস্বীকার করবেন না। বিভিন্ন জায়গায় তিনি বলেছেন, তিনি শান্তির জন্য কাজ করছেন।

২০১৩ সালের ১ জুলাই টাইম ম্যাগাজিন আশ্বিন উইরাথুকে নিয়ে একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছিল। সেটির শিরোনাম ছিল, “একজন বৌদ্ধ সন্ত্রাসীর মুখ”।

তাঁর বক্তব্য হিংসা ছড়িয়েছিল এবং সেগুলোর মূল টার্গেট ছিল রোহিঙ্গা মুসলমানরা।

রোহিঙ্গা মুসলমানদের তৃতীয় কোন দেশে স্থানান্তরিত করার দাবী নিয়ে তিনি সমাবেশও করেছেন।

মুসলমানদের মধ্যে জন্মহার বেশি – এমন বক্তব্য প্রচার করেছেন আশ্বিন উইরাথু। তিনি অভিযোগ করেন, বৌদ্ধ নারীদের জোর করে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে।

অনেকে মনে করেন, আশ্বিন উইরাথুর বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে টার্গেট করা হবে।

তাছাড়া রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব দেবার বিরুদ্ধে তিনি যেসব কথা বলতেন, সেগুলো ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল।

এমনকি মিয়ানমারের অন্য অনেক বৌদ্ধ ভিক্ষু তাঁর বিষয়ে কোন কথা বলতে চান না।

যদিও ২০০৭ সালে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন।

আশ্বিন উইরাথু খুব দ্রুত বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেন বার্মার বৌদ্ধদের প্রতীক হিসেবে।

তবে তিনি বাস্তবে বার্মার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের প্রতিনিধিত্ব করেন কি না সেটি নিয়ে বেশ সংশয় আছে।

প্রায় অর্ধ শতাব্দী সামরিক শাসনের পরে মিয়ানমারে এখন নিয়ন্ত্রিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

অনেকে মনে করেন, উগ্রপন্থী ভিক্ষু আশ্বিন উইরাথু রোহিঙ্গা বিরোধী যে মনোভাব দেখিয়েছেন সেটি মিয়ানমারের ভেতরে অনেকেরই মনের কথা।

সরকারের ভেতরে অনেকেই কূটনৈতিক কারণে রোহিঙ্গা বিরোধী কথা সেভাবে বলতে পারেন না।

ফলে মি: উইরাথু রোহিঙ্গা বিরোধী যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তাঁর পেছনে সরকারের সমর্থন রয়েছে।

মিয়ানমার সরকার জানিয়েছে, আশ্বিন উইরাথুর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না পেলে তারা কোন পদক্ষেপ নিতে পারবে না। সূত্র: বিবিসি

সাজানো ছবিতে রোহিঙ্গাদের দায়ী করছে মিয়ানমার

 

শীর্ষনিউজ ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গারাই নিজেদের বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে বলে দাবি করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। আর তাদের এই দাবিকে সত্য প্রমাণ করতেই আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় গণমাধ্যমের একদল সাংবাদিককে। তাদের হাতে সাজানো ছবি তুলে দেয়া হয়। সেই কারসাজি অবশ্য ধোঁকা দিতে পারেনি বিবিসির সাংবাদিক জনাথন হেডসহ অন্য সাংবাদিকদের।

বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিনিধি জনাথন হেড জানতেন, এই ধরনের সরকারি সফরে সরকার যা দেখাতে চায়, তাই দেখতে হয়। তবে কখনো কখনো সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বোঝা যায় অনেক কিছু।

জনাথন হেড বলেন, প্রথমে তাদের রাখাইনে মংডুর একটি স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে বাস্তুহারা হিন্দু পরিবারগুলো ঠাঁই নিয়েছে। পুরো স্কুলটি ঘিরে রেখেছে সশস্ত্র পুলিশ। এখানে আশ্রয় নেয়া সবাই একই কথা বলছেন—রোহিঙ্গারা তাদের ওপর আক্রমণ করেছে, তারা পালিয়ে এসেছে।

এর আগে জনাথন হেড বাংলাদেশ সীমান্তে পালিয়ে আসা রাখাইনের হিন্দু বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তারা সবাই জনাথনকে বলেন, রাখাইনদের আক্রমণে তারা পালিয়ে এসেছেন। কারণ, তারা রোহিঙ্গাদের মতোই।

মংডুর স্কুলটি পরিদর্শনের পর জনাথনের মনে প্রশ্ন জাগে, আসল সত্যটা কী? কিছুক্ষণের মধ্যে জেনেও ফেলেন সত্যটা। সরকারি বেষ্টনীর মধ্যেই স্কুলে আশ্রিত একজনের বক্তব্য নেন জনাথন। ওই ব্যক্তি বলেন, সেনারা গ্রামের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। তবে দ্রুত ওই ব্যক্তিকে শুধরে দেন পাশের জন। তাতেই আসল সত্যটা বুঝে নেন বিবিসির এই সাংবাদিক।

এরপর সাংবাদিকদের দলটিকে স্থানীয় বৌদ্ধমন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও একজন বৌদ্ধভিক্ষু অবিরামভাবে বর্ণনা করেন রাখাইন ও অন্যদের ওপর রোহিঙ্গাদের অত্যাচারের কথা। কীভাবে তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে রোহিঙ্গারা, সে কথা। প্রমাণ তুলে ধরতে সাংবাদিকদের কাছে ছবিও দেয়া হয়। তবে ছবিগুলো সাজানো বলে ধরতে পারেন জনাথন। একটি ছবিতে রোহিঙ্গা নারী বলে দাবি করা দুজনকে একটি বাড়িতে আগুন লাগাতে দেখা যায়। এই দুই নারীর একজনকে জনাথন মংডুর স্কুলে হিন্দু নারী হিসেবে আশ্রিত হিসেবে দেখেছিলেন। একই ছবিতে ওই দুই নারীর সঙ্গে একজন রোহিঙ্গা পুরুষ বাড়িতে আগুন দিচ্ছেন বলে উল্লেখ করা হয়। ওই পুরুষকেও জনাথন দেখেছেন সেই স্কুলে নির্যাতিত হিন্দু হিসেবে আশ্রিত। আরেকটি ছবি স্কুলে আশ্রিত নারীকেই অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন জনাথন।

পরে সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় সীমান্ত নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী কর্নেল ফোন টিন্টের কাছে। তার মুখেও একই বক্তব্য। রোহিঙ্গারা নির্যাতন করছে গ্রামবাসীর ওপর।

তিনি দাবি করেন, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যরা।

টিন্টে বলেন, আরসার সদস্যরা রোহিঙ্গা গ্রামগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তারা প্রতিটি পরিবার থেকে একজন করে সদস্য চায় তাদের সংগঠনের জন্য। যারা রাজি হয়নি, তাদের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। আরসার সদস্যরাই মাইন পেতেছে, তিনটি সেতু ধ্বংস করেছে।

কর্নেল ফোন টিন্টের কাছে সাংবাদিকেরা জানতে চান, পুরো গ্রাম-ঘরবাড়ি কি আরসাই পুড়িয়ে দিয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, এটা শতভাগ নিশ্চিত।

সেনাবাহিনী কোনো অত্যাচার করছে না?—এমনটা জানতে চাইলে সরকারের ওই প্রতিনিধি বলেন, প্রমাণ কোথায়?

সরকারি নিরাপত্তাবেষ্টনী ছেদ করে অল্প কিছু রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলতে পেরেছিলেন জনাথনেরা। এই রোহিঙ্গারা প্রত্যেকেই ভীত, আতঙ্কিত, ক্যামেরার সামনে কথা বলতে চান না। তারপর রোহিঙ্গারা বর্ণনা দেন কীভাবে খাদ্যঘাটতি, তীব্র ভয় থাকা সত্ত্বেও সেনাবাহিনীর ভয়ে পালিয়ে যেতে পারেননি তারা।

এক রোহিঙ্গা যুবক বলেন, তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তবে তাদের নেতা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে থেকে যাওয়ার চুক্তিতে যান।

আরেকজন জানান, তার মূল ভয় মিয়ানমারের সরকারকে।

সাংবাদিকদের মূল ভ্রমণের অংশ ছিল মংডুর উপকূলীয় এলাকা আলেল থান কাউ। এখানেই ২৫ আগস্ট রাতে পুলিশ ও সেনাচৌকিতে হামলা চালিয়েছিল আরসা। সেখান থেকে ফেরার পথে গ্রামের পর গ্রাম কারও দেখা পাননি সাংবাদিকেরা।

মংডু থেকে ফেরার পথে বিচ্ছিন্নভাবে অন্তত তিনটি স্থানে ধোঁয়া উড়তে দেখে সাংবাদিকদের দলটি। বনের পাশে থাকা ধানখেত থেকেও বড় ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। বিষয়টি ভালোভাবে জানতে তাদের বহনকারী পুলিশের ভ্যান থামাতে বলেন সাংবাদিকেরা। ছুটে যান সেই ধোঁয়ার কুণ্ডলীর কাছে। তারা আগুনের চিহ্ন দেখতে পান, বুঝতে পারেন আগুনের ঘটনাটি কিছুক্ষণ আগের। সাংবাদিকদের সঙ্গে থাকা পুলিশও দ্রুত সেখানে যায়। ‘এটা নিরাপদ গ্রাম নয়’—বলে সেখান থেকে সাংবাদিকদের সরিয়ে নেয় পুলিশ।

রাখাইনের মংডু পরিদর্শন শেষে ফিরে আসার সময় পুড়িয়ে দেয়া কিছু বাড়িঘর নজরে আসে জনাথনের। তখনো সেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের বলা হয়, রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। তবে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয়নি সাংবাদিকদের।

গত কয়েক সপ্তাহে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। এই রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই বুথিয়াডং, মংডু, রাথেডং এলাকার। সাধারণত রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ। তারপরও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মংডু রাজ্যে কড়া পাহারায় জনাথন হেডসহ ১৮ জন স্থানীয় ও বিদেশি সাংবাদিককে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল মিয়ানমার সরকার।

সাংবাদিকদের শর্ত দেয়া হয়েছিল, সবাইকে একসঙ্গে চলাফেরা করতে হবে। স্বাধীনভাবে কোনো কিছু পরিদর্শন করা যাবে না। শুধু সরকারের নির্দিষ্ট করে দেয়া জায়গাগুলোই দেখা যাবে। তবে যে কারণে মিয়ানমারের এই চেষ্টা, তা সফল হয়নি। রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে এই সাংবাদিকদের কাছে। সূত্র: বিবিসি

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।