ঢাকা: সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের রায় আপিলে বদলে যাবে বলে সংসদ সদস্যদের আশা দিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আপিল বিভাগ সেই রায় বহাল রাখার পর এখন রিভিউ আবেদনের আশা দেখাচ্ছেন তিনি।
বহুল আলোচিত এই রায় নিয়ে জাতীয় সংসদে সোমবার প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, “আইনি পদক্ষেপে ষোড়শ সংশোধনী মামলায় আমরা কামিয়াব হব, আমার বিশ্বাস।”
এর আগে ফখরুল ইমাম বলেন, “হাইকোর্টে রায়ে বলা হয়, ডিসফাংশনাল পার্লামেন্ট। হাইকোর্টে যেদিন রায় হয়েছিল সেদিন আপনি বলেছিলেন, ‘কিছুতেই এটা হতে পারে না। আমরা সুপ্রিমকোর্টে অবশ্যই জিতব’। শেষের অবস্থান কী আমি জানতে চাই?”
এই প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, “আমি এই সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, মামলার এক পক্ষ হিসাবে আমরা নিশ্চয় জিতব। রায় দেয়ার মালিক হচ্ছে আপিল বিভাগ। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিয়ে ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন এনেছিল আইনসভা, তবে হাইকোর্টের রায়ে তা বাতিল হয়ে যায়।
হাইকোর্টের রায়ে সংসদে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে আপিলের কথা বলে আইনমন্ত্রীকে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছিল।
গত জুলাই মাসে দেয়া আপিলের রায়ে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখে। গত অগাস্টে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে প্রধান বিচারপতির কিছু পর্যবেক্ষণ দেখা যায়, যা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন।
বিচারপতি এসকে সিনহা রায়ের পর্যবেক্ষণের অংশে দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।
ওই রায় এবং পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা, এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেছেন।
অন্যদিকে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির নেতারা স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এ রায় ‘ঐতিহাসিক’।
রায়ের চেয়ে পর্যবেক্ষণ নিয়েই আওয়ামী লীগের বেশি আপত্তি বলে দলের প্রবীণ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের কথায় প্রকাশ পেয়েছে।
রিভিউ আইনি লড়াইয়ের শেষ ধাপ। তবে রিভিউতে রায় পরিবর্তনের নজির বিরল।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকও আপিল বিভাগের এই রায়কে ‘ভ্রমাত্মক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।