সপ্তাহখানেক আগে টেকনাফের কুতুপালং ক্যাম্পে এসেছেন আলমাস খাতুন। এখনো থাকার বন্দোবস্ত হয়নি। ক্যাম্পে এক পরিচিতজনের সাথে আছেন।
বাংলাদেশে তার সঙ্গে আর কে কে এসেছেন জানতে চাইলে আলমাস খাতুন বলছিলেন, তার স্বামী এবং একমাত্র ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এরপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের ধরে নিয়ে গেছে। তিনি জানেন না, আদৌ তারা বেঁচে আছেন কিনা।
আলমাস খাতুনের মতো অনেক নারী ও শিশু বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারের পুরুষ সদস্যরা তাদের সাথে আসেনি।
তাহলে তাদের পরিণতি কী হয়েছে?
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইন রাজ্য থেকে আসা আরেক নারী শরণার্থীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। আমার সাথে কথা বলার সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন।
এই নারী বলছিলেন, তার স্বামী এবং তার তিন ছেলেকে তার সামনেই হত্যা করা হয়েছে। দুই ছেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় পিছন থেকে গুলি করা হয়। সেখানেই মৃত্যুর কোলে লুটিয়ে পড়ে।
তিনি আরো বলছিলেন, পৃথিবীতে এখন আমার কেউ নেই। সব শেষ হয়ে গেছে।
গত ২৫ অগাস্ট হতে এ পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজারের বেশি শরণার্থী বাংলাদেশে এসেছে বলে ধারণা করছে ত্রাণ সংস্থাগুলো। কিন্তু স্থানীয় মানুষ এবং জনপ্রতিনিধিরা বলছে শরণার্থীর সংখ্যা আসলে সাড়ে ৫ লাখের বেশি। এই বিপুল সংখ্যাক শরণার্থীর বড় অংশই নারী এবং শিশু।
পালিয়ে আসা এসব মানুষ বলছে- তাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের বেশির ক্ষেত্রেই হত্যা করা হয়েছে। অথবা নিখোঁজ আছে।
মোহাদ্দেসা নামে এক নারী বলছেন- তার স্বামী, এক ছেলে এবং শ্বশুরকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হত্যা করেছে।
তিনি বলছিলেন, সেনাবাহিনীর সন্দেহ ছিল তার স্বামী আল ইয়াকিন নামের একটি গ্রুপের সদস্য।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের ওপর হামলার কারণ হিসেবে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসাকে দায়ী করছে। এই সংগঠনটি স্থানীয় ভাবে হারাকাহ আল ইয়াকিন নামে পরিচিত ছিল।
তবে স্থানীয়ভাবে একটা গুঞ্জন রয়েছে, বেশ কিছু পরিবারের পুরুষ সদস্যরা মিয়ানমারে রয়ে গেছেন তাদের ভাষায় লড়াই এ অংশ নেয়ার জন্য। তবে এই তথ্যের সত্যতা মেলেনি।
সেনাবাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছেন আবুল কালাম। তিনি এই তথ্যকে নাকচ করে দিলে বলছিলেন, তাকে গুলি করার সময় সেনাবাহিনী বলেছে- ‘এই দেশ মুসলমানদের জন্য নয়’।