নিজ দেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে দুই লাখের বেশি শিশু স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে আছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল-ইউনিসেফ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ৪ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর- এই ছয় দিনে দুই লাখ ২০ হাজার মানুষ এসেছে বাংলাদেশে। এ ঢল যে কমবে, এর কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। এটি একটি বড় মানবিক বিপর্যয়। এ বিপর্যয়ের বড় শিকার হচ্ছে শিশুরা।
সংস্থাটি আরও জানায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় পরিবার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এক হাজার ১২৮ শিশু। যেভাবে মানুষ আসছে আগামীতে এ সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে।
ইউনিসেফ-বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা ইউনিটেরে প্রধান জঁ লিবির দেয়া ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যেভাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল শুরু হয়েছে, তা অভাবনীয়। প্রাথমিক তথ্য থেকে বলা যায়, মিয়ানমার থেকে এ যাবৎ যত রোহিঙ্গা এসেছে, এর মধ্যে ৬০ শতাংশই শিশু।
গত ২৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত তিন লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
‘পালিয়ে আসা শিশুরা অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত’ উল্লেখ করে ইউনিসেফ জানায়, জরুরি ভিত্তিতে এসব শিশুর সুরক্ষা ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা দরকার। পালিয়ে আসার পর টানা নির্ঘুম রাতপার, পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে তারা দুর্বল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ও বিপৎসঙ্কুল পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক শিশু আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তাদের জরুরিভিত্তিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা দরকার।
বিবৃতিতে জঁ লিবি জানান, ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে ইউনিসেফের সহায়তার জরুরি সামগ্রী কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে ক্যাম্পগুলোতে সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা দরকার।
‘শিবিরগুলোতে পানিবাহিত কোনো রোগ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেই চেষ্টা আমরা করছি। এখানে বহু নারী, শিশু ও বৃদ্ধ অল্প জায়গার মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে শিবিরের শিশুরা পানিবাহিত রোগের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে, যা আমাদের ঠেকাতে হবে।’
আর সেজন্য প্রাথমিকভাবে ৭৩ লাখ ডলার প্রয়োজন, যা আরও বাড়বে বলে জানান লিবি।
‘আমরা দেখেছি, ক্যাম্পগুলোতে অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছেন। বাংলাদেশে আসার পথেই অনেক মা সন্তান প্রসব করেছেন’ উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর প্রায় তিন লাখ ৩৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছে। তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের সহিংসতায় ইতোমধ্যে তিন হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের ‘অমানবিক সামরিক অভিযান’র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করতে আগামীকাল বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এক জরুরি বৈঠক ডেকেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান রাখাইন প্রদেশের সহিংসতার ঘটনাকে জাতিগত নিধন বলে সতর্ক করার পরই জরুরি বৈঠক ডাকল সংস্থাটি।