সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার যুগিখালি ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল হাসান ও তার চার সহযোগীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন এক তরুণী। অভিযোগকারী ওই নারী একজন ভারতীয় নাগরিক। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান যুগিখালি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন নির্যাতিত তরুণীর শাশুড়ি।
বিচারক আশরাফুল ইসলাম মামলাটি এজাহারভুক্ত করে তদন্ত করে পুলিশ প্রতিবেদন দেয়ার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে চেয়ারম্যান রবিউল হাসান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিজ এলাকায় দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে এই মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে আমার ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে।
মামলার বাদী নির্যাতিত গৃহবধূর শাশুড়ি তার আরজিতে উল্লেখ করেন, তার ছেলে ভারতের পশ্চিমবাংলায় দিনমজুরের কাজ করতে গিয়ে কিছুদিন আগে বিথারী গ্রামের এক নারীকে বাংলাদেশে এনে বিয়ে করেন। এ ব্যাপারে তার কাছে আদালতের অ্যাফিডেভিটও রয়েছে। ঘর-সংসার করার এক পর্যায়ে এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসান তার ছেলের বউ ও ছেলেকে নানাভাবে বিরক্ত করতেন।
গত ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম আফজালের বাড়িতে গিয়ে জানান বাজারে পুলিশ এসেছে। তোমাদের আমার সঙ্গে এখনই যেতে হবে। এ কথা বলে ছেলে ও তার স্ত্রীকে চেয়ারম্যান স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসের দোতলায় নিয়ে যান।
সেখানে নিয়ে তাদের কাছে ১৫ হাজার টাকা চেয়ে আফজালকে তিনি বলেন, তোমার বউ ভারতীয় নাগরিক। এখানে থাকতে চাইলে পুলিশকে এই টাকা দিতে হবে। অন্যথায় পুলিশ তোমার বউকে গ্রেফতার করবে।
আরজিতে আরও বলা হয়, এই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় চেয়ারম্যান থানার ওসির সঙ্গে কথা বলানোর নাম করে ওই রাতেই গৃহবধূকে নিয়ে যান। পরে তাকে থানায় না নিয়ে তোলা হয় কলারোয়ার ঝিকরা গ্রামের সঞ্জয়ের বাড়িতে।
অভিযোগে বলা হয়, ওই বাড়ির একটি কক্ষে ভারতীয় নারীকে আটকে রেখে প্রথমে আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান রবিউল হাসান ও পরে পর্যায়ক্রমে তার সহযোগী সোহাগ হোসেন, সোহাগ দফাদার, আসাদুজ্জামান আসাদ ও কদম আলি ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন।
পরে আহত নারীকে গভীর রাতে চেয়ারম্যান রবিউল হাসান চৌকিদার এমাদুলের মাধ্যমে বাড়িতে পৌঁছে দেন।
ভোরে গৃহবধূর শাশুড়ি ঘুম থেকে উঠে বাড়ির মধ্যে নিজের ছেলের বউকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
মামলায় তিনি আরও বলেন, সকালে বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশের নির্দেশ অনুযায়ী তাকে প্রথমে কলারোয়া হাসপাতাল ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সুস্থ হয়ে কলারোয়া থানায় মামলা করা হলে পুলিশ তা রেকর্ড না করে ফেরত দেয়। বাধ্য হয়ে গৃহবধূর শাশুড়ি সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেন।
গণধর্ষণের এ অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান রবিউল হাসান বলেন, মেয়েটি ভারতীয়। সে সেখানে নবম শ্রেণিতে পড়ত। বয়স ১৬ বছর। তার বাবা তাকে ফেরত নেওয়ার জন্য বাংলাদেশে যোগাযোগ করেন। বিষয়টি কলারোয়া থানা পুলিশকেও জানানো হয়। এক পর্যায়ে মেয়েটি কারও পরামর্শ অনুযায়ী একটি সাজানো মামলায় আগ্রহী হয়। তারা তাকে বুঝায় যে, এমন একটি মামলা করলে চেয়ারম্যান তোমাকে তোমার ভারতীয় বাবা-মার হাতে তুলে দিতে পারবেন না। তুমি নানা ধরনের সুবিধাও পাবে।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, নিজ দলের লোকজনের কোন্দলের জেরে এমন একটি মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
Check Also
আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আশাশুনি উপজেলা শাখার ২০২৫-২০২৬ সেশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন ও …