কক্সবাজার: মিয়ানমারের রাখাইনে সে দেশের সেনাবাহিনী এবং পুলিশের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সহায় সম্বল রেখেই প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসছেন রোহিঙ্গারা।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নমনীয়তার সুযোগে কক্সবাজার টেকনাফ সীমান্তে আত্মগোপনে থাকা ইয়াবা চোরাকারবারিরা এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। ত্রাণের নামে এসব ইয়াবা চোরাচালানি সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের সাথে মিশে যাচ্ছেন। রোহিঙ্গা নারীদের দিয়ে তারা ইয়াবা আমদানি এবং রেখে আসা গরু, মহিষ ও ছাগল কৌশলে এপারে নিয়ে আসছেন। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পশু রাতের আঁধারে অবৈধ পথে এনে বিক্রি করে ইয়াবা-সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা অল্প দিনে কোটি টাকা আয় করেছেন। চোরাই পশু লাভজনক হওয়ায় সীমান্তের ইয়াবা-সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা এবার মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের গরু-মহিষ লুটে নিচ্ছেন।
হ্নীলা হোয়াইক্যংয়ের ইয়াবা-সংশ্লিষ্ট চার ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে নির্যাতিত বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের রেখে আসা গরু মহিষ ও ছাগল আনা হচ্ছে। এই চার ইউপি সদস্য গত দুই সপ্তাহে অন্তত কোটি টাকার উপরে আয় করেছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। সীমান্ত পাড়ের এই চার জনপ্রতিনিধি তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে ম্যানেজ করে চোরাই পথে পশু নিয়ে আসছেন এসব জনপ্রতিনিধি।
মঙ্গলবার ভোর রাতে হ্নীলার ফুলের ডেইল সীমান্ত দিয়ে জনৈক জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে মিয়ানমারের বেশ কিছু চোরাই পশু নিয়ে আসার পথে বিজিবি ১৯টি মহিষ আটক করতে সক্ষম হয়। ওপারে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা দেশে রেখে আসা পশু এপারের লুটেরাদের হাত থেকে রক্ষায় সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। গরু মহিষ এবং ছাগল যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বৈধভাবে নিয়ে আসতে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা সহযোগিতা কামনা করেন।
মিয়ানমার নাগাকুরা এলাকার পাগলা বশির, নুরুল কবির জানান, আমাদের চারটি পরিবারের বায়ান্নটি মহিষ হ্নীলা এলাকার এক মেম্বার জনৈক রাখাইন যুবককে দিয়ে চুরি করে নিয়ে আসার পথে বিজিবি উনিশটি আটক করে। বাকি মহিষ তারা লুটপাট করেছেন। মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা দালাল এবং সেখানকার মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সাথে যোগসাজশ করে রাতে অবৈধ পথে নিয়ে আসছে শত শত গরু-ছাগল এবং মহিষ। রোহিঙ্গারা ওপারে যেমনি নির্যাতিত হচ্ছেন এপারে এসে ইয়াবা চোরাচালানি সিন্ডিকেটের হাতে পশু বিক্রিতে আরও বেশি নির্যাতিত হচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসা এসব চোরাই পশু স্থানীয় ইজারাদারদের সহায়তায় ভুয়া কাগজ বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেকনাফ হ্নীলার ফুলের ডেইল, কাস্টমসঘাট, ওয়াব্রাং, মৌলভীবাজার, নাটমুরাপাড়া, হোয়াইক্যংয়ের খারাংখালী, নয়াবাজার, ঝিমংখালী, নয়াপাড়া, কাঞ্জরপাড়া, উনছিপ্রাং, লম্বাবিল, তুলাতুলী ও উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মিয়ানমারের চোরাই পশু আমদানি করা হচ্ছে।
টেকনাফ শুল্ক কর্মকর্ত এ কে এম মোশারফ হোসেন বলেন, মিয়ানমারে সংঘটিত ঘটনার পর থেকে সীমান্ত দিয়ে এক শ্রেণির লোক অবৈধভাবে চোরাই পশু নিয়ে আসছে। তিনি এ পর্যন্ত প্রশাসনের হাতে আটক ৪৩টি গরু মহিষ কাস্টমসে জমা দেয়ার কথা জানান।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন খাঁন জানান, রেহিঙ্গাদের সহায়তা এবং তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করার অপরাধে এ পর্যন্ত ১৪০ জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। ইয়াবার বদলে পশু আমদানিতে জড়িত জনপ্রতিনিধিসহ জড়িতদের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান