রূপালী ইলিশকে লোনায় রূপান্তর নেপথ্যে সিন্ডিকেট

চাঁদপুরে সিন্ডিকেট চক্র ইলিশকে লোনা ইলিশে রূপান্তর করছে। আমদানিকৃত মাছ পচে-গেলেও তা কম দামে বিক্রি করছে না ওই সিন্ডিকেট চক্র। মাছ কেটে লোনা ইলিশে প্রক্রিয়াজাত করছে। আর ইলিশের ডিম চট্টগ্রাম হয়ে বিদেশে পাচার হচ্ছে। চাঁদপুরে হঠাৎ করে প্রচুর রূপালী ইলিশ আমদানি হওয়ায় ও বরফ সংকটে কারণে ইলিশে পচন দেখা দিলেও ইলিশ কমদামে বিক্রি না করে এক শ্রেণির মজুদদার ব্যবসায়ী পচন ধরা ও নরম হয়ে যাওয়া এ সব ইলিশ কম মূল্যে ক্রয় করে তা’ কেটে লবনজাত করে লোনা  ইলিশে রূপান্তরিত করছে। তারা এসব লোনা ইলিশ বৈশাখ মাসে দেশের বিভিন্ন জেলায় চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করে বেশি মুনাফা করার কাজে লিপ্ত রয়েছে। যার ফলে প্রচুর পরিমাণে ইলিশের আমদানি থাকলেও ক্রেতা সাধারণের চাহিদা অনুপাতে ইলিশ ক্রয় করতে পারছে না বলে অভিযোগ করছে। চাঁদপুরে ভর মৌসুমে ঝাঁকে-ঝাঁকে ধরা পড়া ইলিশ ১১টি আড়তে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শতাধিক ট্রলার ও ইঞ্জিনচালিত বোর্ডের মাধ্যমে এসব ইলিশ মাছঘাটে আসে। প্রচুর ইলিশের আমদানি এক সাথে হওয়ায় চাপের মধ্যে থেকে নিচের ও ইলিশ পচে যাচ্ছে এবং চাপ লেগে নরম হয়ে পড়ছে। ইলিশের অধিক আমদানি জন্য মাছ ঘাটের আড়ৎদাররা হিমশিম খাচ্ছে। এত ইলিশ এক সাথে আসার ফলে তারা বেচা বিক্রিতে দিশাহারা হয়ে পড়ছে। এরই ফাঁকে সিন্ডিকেট চক্র জেলেদের কাছ থেকে কম দামে ইলিশ ক্রয় করে  লোনা ইলিশে পরিণত করছে। সাধারণ ক্রেতারা জানান, চাঁদপুর মৎস্য আড়তে ব্যবসায়ীদের চাহিদার চাইতে আরো বেশি ইলিশ আমদানিতে হলেও সিন্ডিকেটের কারণে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ কম মূল্যে ক্রয় করতে পারছে না। সরজমিন চাঁদপুর মৎস্য আড়তে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দক্ষিণ অঞ্চলের ভাটি এলাকা কুয়াকাটা, পাথরঘাটা, মহিবুল, বরিশাল, চরফেশান, সামরাজ, হাতীয়া, রামগতি, ভোলাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ সব ইলিশ আমদানি হচ্ছে। গত এক মাস যাবত ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হলেও ইলিশ তেমন ধরা পরছিল না, জেলে ও ব্যবসায়ীরা হতাশায় দিন কাটাচ্ছিল। হঠাৎ করে গত আগস্টের মধ্য সময় থেকে প্রচুর ইলিশ আমদানী শুরু হয়েছে। মাছ বরফের সংকটে পচন শুরু হয়েছে তাই মাছ লবণ জাত করা হচ্ছে। এ লোনা ইলিশ আগামী বৈশাখ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য এখনই ইলিশকে লবন দিয়ে প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। আর ইলিশের পেটে থাকা ডিম প্লাস্টিকের বাক্সে করে সাথে সাথেই বিক্রির জন্য পাঠানো হচ্ছে চট্টগ্রামে। ব্যবসায়ীরা আরো জানান, এসব এলাকার ইলিশ, দক্ষিণাঞ্চলীয় বরিশাল, ভোলাসহ সাগরের ইলিশ ভরা মৌসুম সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বেশি ধরা পড়ে। অনেক সময় আমদানি বেশি হলে বরফ সংকটে ইলিশগুলো পচে যায়। সংরক্ষণ করতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ী এগুলোকে কেটে লবণ দিয়ে লোনা ইলিশে পরিণত করেন। আর বহু বছর ধরে এসব ইলিশের কদর বেশি জামালপুর, ময়মনসিংহ, সিলেটের মৌলভী বাজার, রংপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলায়। তবে জামালপুর জেলার শ্রমিকরাই লোনা ইলিশ সংরক্ষণের কাজে বেশি পারদর্শী। তবে স্থানীয় নারীরাও ইলিশ কাটার কাজে সহযোগিতা করেন। সোমবার বিকালে চাঁদপুর মৎস্য আড়ৎ সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কয়েকটি ঘরে লোনা ইলিশ প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। সকাল থেকেই শ্রমিকরা এ কাজ করছেন। শ্রমিক মনসুরুল ইসলাম বলেন, তিনিসহ আরো ছয়জন শ্রমিক মেসার্স খন্দকার ফিসিং এর আওতায়  লোনা ইলিশ প্রক্রিয়ার কাজে রয়েছেন, প্রতিদিন দৈনিক ৪শ’ টাকা হাজিরায় ৮ ঘণ্টা কাজ করছেন। খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা মহাজন করেছেন। তিনি আরো বলেন, ইলিশগুলো কেটে ডিম বের করে লবণ দিয়ে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এখন এসব ইলিশ আবার দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিকের বড় বড় ড্রামে ভর্তি করা হচ্ছে। আগামী চৈত্র-বৈশাখ মাস পর্যন্ত ড্রামে থাকলেও কোন ধরনের ক্ষতি হবে না। মৎস্য ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইলিশের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এবং অনেক ইলিশ ট্রলারযোগে আসতে সময় বেশী লেগে পঁচে ও নরম হয়ে যাচ্ছে। ওই সব ইলিশ সংরক্ষণের অভাবে কেটে লোনা ইলিশে পরিণত করা হচ্ছে। ৪শ’ থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশও কেটে লোনা ইলিশ হয়। তবে এ বছর বেশিরভাগ লোনা ইলিশের সাইজ ৩শ’ থেকে ৬শ’ গ্রামের মধ্যে। এখানকার মৎস্য ব্যবসায়ী মালেক খন্দকার, বাবুল হাজী, সবেবরাত, গফুর জমাদার, মানিক জমাদার, মেসবাহ মাল, ইদ্রিছ গাজী, হাজী সিডু মিজি, হাজী খালেক জমাদার প্রতি বছর এ মৌসুমে লোনা ইলিশ প্রক্রিয়াজাত করেন। লোনা ইলিশ ব্যবসায়ী ও চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবেবরাত বলেন, ইলিশের আমদানি বাড়লেই লোনা ইলিশ প্রক্রিয়াজাত হয়। আর এসব কাজে নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা দৈনিক হাজিরায়  কাজ করেন। জামালপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, ঠাকুরগাঁও জেলায় বিক্রির জন্য এসব লোনা ইলিশ চাঁদপুর থেকে ওই সব জেলার ব্যবসায়ীরা ক্রয় করেন।

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।