TOPSHOT - This September 15, 2017 photo shows Rohingya refugees from Myanmar gathering around a truck delivering clothes in Ukhia. The United Nations said this week there was an urgent need for a coordinated response to the massive influx of desperate people fleeing Myanmar for Bangladesh, most of whom have still had no assistance from aid agencies or the state. / AFP PHOTO / MUNIR UZ ZAMAN / TO GO WITH AFP STORY BANGLADESH-MYANMAR-UNREST-REFUGEE-ROHINGYA-AID,FOCUS BY CLAIRE COZENS

ত্রাণের জন্য কাড়াকাড়ি

সোনাবান। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে হাজার হাজার রোহিঙ্গার শরণার্থীর একজন। প্রতিদিনই তারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন কখন ত্রাণের ট্রাক আসবে আর খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করবেন।

গত তিন সপ্তাহে সহিংসতার কারণে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা অন্য প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর মতো সোনাবানও পুরোপুরি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল। এই ত্রাণ তৎপরতার ওপর সরকারি কোনো নজরদারি নেই,  এর সমন্বয়ও হচ্ছে যৎকিঞ্চিত।

শুক্রবার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের কাছে চার সন্তানের মা বিধবা সোনাবান অন্য ক্ষুধার্ত শরণার্থীদের ভিড়ের মধ্য হুড়োহুড়ি করে এক ব্যাগ চিড়া নিতে পেরেছেন।

কিন্তু রাখাইনে স্বামীকে মেরে ফেলার পর পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ১০ দিন আগে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৪৪ বছরের এই মা প্রায় সময়েই কাড়াকাড়ি করে কোনো ত্রাণ নিতে না পেরে খালি হাতে ফেরেন।

সোনাবান বলেন,  খাবারের তুলনায় শরণার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে যাদের গায়ে জোর আছে তারাই ট্রাকগুলোর কাছে যেতে পারে এবং সবার আগে খাবার পায়। কিন্তু যারা নারী ও শিশু তাদের পক্ষে ট্রাকের কাছে যাওয়া অনেক মুশকিলের।

জাতিসংঘ এ সপ্তাহে বলেছে,  রাখাইন থেকে আগত ব্যাপকসংখ্যক মরিয়া শরণার্থীর অনেকেই কোনো সংস্থা বা রাষ্ট্রের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ পায়নি। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে তাদের সমন্বিত সহায়তা করা প্রয়োজন।

সাধারণ বাংলাদেশিরা বিশৃঙ্খলভাবে ট্রাকে করে খাবার নিয়ে ক্রমেই বেড়ে চলা শরণার্থীদের নতুন নতুন বসতিতে যাচ্ছে।

কিন্তু তারা যে উপায়ে ত্রাণ বিতরণ করে থাকে, তাতে করে যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদের কাছে খাবার পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

প্রতিবারই হট্টগোলরত শরণার্থীদের কাছে ত্রাণের ট্রাকগুলো পৌঁছানোর পর স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের লক্ষ্য করে খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল ও কাপড় ছুড়ে মারেন। আর এসব নেয়ার জন্য শরণার্থীরা কাড়াকাড়িতে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

সাধারণত ট্রাকগুলো রাস্তায় গতি কমিয়ে দেয়ার পরপর ত্রাণ নিয়ে অন্যদের মাঝে মারামারি বেধে যাওয়ার সুযোগে গাড়িগুলোর পাশে উঠে পড়ে খাবারের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় শিশুরা।

ভিড়ের মধ্যে ছুড়ে মারা জিনিসের মধ্যে খাবারই সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত হলেও পোশাকও অনেককে আগ্রহী করে। শিশুরা মাটি ও কাদাপানিতে পড়ে থাকা কাপড় তুলে নিয়ে ধুলা ঝেড়ে তা ভাঁজ করে চালের খালি বস্তাতে ঢুকিয়ে নেয়।

লুঙ্গি পরা একজন রোহিঙ্গা পুরুষ দেখা গেল তিন একটি লাল বোতামের জিন্সের শার্ট তুলে নিয়ে মাথায় চাপালেন যাতে রোদ থেকে বাঁচতে পারেন।

নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

মোহাম্মদ আনিসুল ইসলাম। ২৩ বছর বয়সী শিল্পকলার ছাত্র। ত্রাণবাহী একটি ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়েছিলেন।

তার কথা হল- শরণার্থীদের যা কিছু করণীয় তার সব কিছুই বাংলাদেশ সরকার করলেও শোচনীয় পরিস্থিতিতে তিনিও সহযোগিতা করতে চান।

তিনি বলেন,  তাদের (শরণার্থী) অবস্থা দুর্বিষহ। তাদের কোনো খাবার নেই, কোনো আশ্রয় নেই; তাদের কেউই কোনো ধরনের মৌলিক মানবাধিকারের দেখা পাচ্ছে না।

আনিসুল বলেন,  বাংলাদেশ একটি বড় জনসংখ্যার দেশ। তাই আমরা চাই, রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে যাক,  কিন্তু শরণার্থীরা যখন এসে পড়েছে, তখন তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চাই আমরা।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র ভিভিয়ান তান বলেন,  চলমান অস্থায়ী আয়োজনের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বাংলাদেশ সরকার ত্রাণ বিতরণের জন্য কিছু কেন্দ্র নির্মাণ করতে চেষ্টা করছে।

তিনি এএফপিকে বলেন,  বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে সহযোগিতা করছে তা তাদের উদারতার প্রতিফলন। কিন্তু ট্রাকগুলোর ত্রাণ ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে সাহায্যের জন্য ছুটে যাওয়া শরণার্থীদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।

জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, যে ব্যাপক হারে শরণার্থীর ঢল নামছে এবং তারা বিভিন্ন স্থানে যেমন শরণার্থী শিবির, অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র এবং স্থানীয় গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে করে এটি জানা কঠিন হয়ে পড়ছে যে তারা সবাই কোথায় আছে এবং তাদের সবার কাছে যথাযথভাবে পৌঁছানো সম্ভব কি না।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ত্রাণ বিতরণের জন্য সেনা মোতায়েন করা হবে। শুক্রবার লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশিদুল হাসান এএফপিকে বলেন,  এরই মধ্যে দুর্গত এলাকায় সরকারি আদেশ পৌঁছেছে।

তিনি বলেন, আমরা নির্দেশনা পেয়েছি, বিদেশ থেকে যেসব ত্রাণসামগ্রী আসবে তা বিমানবন্দরে সেনাবাহিনী গ্রহণ করবে এবং তা কক্সবাজারে পৌঁছে দেবে।

কক্সবাজারে দুটি শিবিরে সরকারিভাবে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বসবাস করে আসছে। এ দুটির বাইরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টির যেসব শরণার্থী বসবাস করছে, বহু বছর ধরেই তাদের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর ব্যাপারে বিধিনিষেধের শিকার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা।

সংস্থাটি নতুন শরণার্থীদের নিবন্ধন করতে চাইলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং শরণার্থীদের থাকার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদানের বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করা হয়েছে।

তবে শরণার্থীদের ঢল বন্ধ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা না যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ তার কড়াকড়ির নীতির ব্যাপারে নমনীয় হয়েছে এবং নতুন শরণার্থীদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে। এমনকি মিয়ানমারকে সহিংসতা বন্ধ করে নিজ নাগরিকদের ফেরত নিতে চাপ দিচ্ছে বাংলাদেশ।

অবশ্য রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী বিবেচনাকারী বৌদ্ধ প্রধান দেশ মিয়ানমারের মধ্যে শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার মতো কিছু করার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

যদিও এটি এখনও স্পষ্ট নয় যে, নিবন্ধন শরণার্থীদের কোনো উপকারে আসবে,  তারপরও  হাজার হাজার রোহিঙ্গার আঙুলের ছাপ ও ছবি সংগ্রহ করে তাদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

কুতুপালং শিবিরে সেনাবাহিনীর কাছে নিবন্ধনের জন্য লম্বা লাইনে কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ফয়সাল করিম নামে ৭০ বছর বয়সী এক শরণার্থী এএফপিকে বলেন,  আমি এখনো যথাযথ সাহায্য পাইনি।

তিনি বলেন,  আমি মনে করি নিবন্ধিত হওয়ার পর এখানে অনেক দিন ধরে থাকা অন্য শরণার্থীদের মতো আমরাও যথাযথ ত্রাণ পাব।

Check Also

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করেননি সমাজী

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।