ঢাকা: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার কারণে কয়েক লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। আব্দুল আজিজ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কাছে নির্যাতনের শিকার হন। বিবিসি বাংলার কাছে বর্ণনা করেছেন সেখানকার পরিস্থিতি এবং নির্যাতনের কথা। আব্দুল আজিজের কথা হুবহু বর্ণনা করা হল।
সেদিন ছিল বুধবার। বিকেলে আসরের নামাজ পড়তে বের হয়েছি। সেসময় আমাকে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
আমার বাড়ি রাখাইনের গারোতো বিলে। বাড়ি থেকে চোখ বেধে নিয়ে যায়, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিছু্ই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
চোখ খুললে বুঝতে পারলাম আমাকে একটা ‘গ্যারানের টেরায়’ (গোয়াল ঘরে) নিয়ে রাখা হয়েছে। দেখলাম ঘরভর্তি মানুষ। আমার মতোই তাদেরকেও ধরে নিয়ে আসা হয়েছে।
সেখানে আমাদেরকে নিয়ে গরুর রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। যখন বেঁধে রেখেছিল তখন দুইজন পাহারা দিয়েছে। কারোর বের হওয়ার সুযোগ ছিল না।
প্রচণ্ড মারধোর করে আমাকে। তারা মিয়ানমারে ভাষায় বলছিলো “লো কালা” অর্থাৎ তোরা আমাদের দেশি না, তোরা বাঙালি, তোরা ওখানেই চলে যা।
আমার সামনে কয়েকজনকে জবাই করছে আবার কাউকে কাউকে গুলি করে মেরেছে।
গুলি মারার পর তখনো যদি সে নড়তে থাকে তাহলে তাকে জবাই করে দেয়। পাহারাদাররা যখন দরজা থেকে সরে গেছে, তখন তাদের অবস্থান দেখে আমি পালিয়ে আসি। আমাকে ধরে নিয়ে গেছিলো আসরের সময় আর আমি পালিয়ে আসি এশার সময় ।
আমি যখন ওইখান থেকে বের হয়ে আসি তখন যাদেরকে তখনো হত্যা করেনি তাদের সবার হাত পা বাঁধা ছিল। এর পর কী করেছে আমি জানি না। আমি যখন এসেছি তখনো ওইখানে অনেক মানুষ ছিল। শুধু ছিল পুরুষ মুসলিম, কোনও মহিলা ছিল না ।
আমি যখন বাড়ি ফিরে আসি তখন দেখি আমার ঘর আগে যেরকম ছিল সেরকম আর নেই। আমার বাড়ি বোমা মেরে জ্বালিয়ে দিয়েছে নাকি ম্যাচের আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে সেটা আমি জানি না। কিন্তু আমার প্রতিবেশীরা বলেছে বোমা মেরে জ্বালিয়ে দিয়েছে।
এর পর থেকে আমার মা বাবার সাথে দেখা হয়নি, বাংলাদেশে এসেও তাদের খোঁজ পাইনি।
ওখানে মুসলিমের কোনও দাম নাই, খাবার পানি দেয় না ওরা। ভয়ে আতংকে আমার গলা শুকিয়ে আসছিল।
বন্দী অবস্থায় দুই আড়াই ঘণ্টা ছিলাম। তখন অন্যদের জিজ্ঞাসা করেছি এখানে কোনও খাবার পানি দেয় কিনা, তারা বলেছে কোনও খাবার বা পানি দেয় না।
ওইখানে আমার মতো যুবক যারা ছিল, তাদেরকে আগেই ধরে নিয়ে গেছে। তাদেরকে মেরে ফেলেছে, কেটে ফেলেছে। এর পরে ওখানে বেঁধে রাখা কতগুলো আছে।
ওখানে যুদ্ধ করছে এমন কোনও রোহিঙ্গা আমরা পাইনি। ওখানে যুদ্ধ করার মতো লোক আছে বলে আমার মনে হয় না।
টেকনাফে বিবিসি বাংলার সাথে তিনি এসব কথা বলেন।