তোফাজ্জল হোসেন কামাল : ‘মগের মুল্লুক’ বাংলায় বহুল প্রচলিত একটি বাগধারা । রাষ্ট্র ও সমাজ-জীবনের কোথাও অরাজকতা, অনাচার-অত্যাচার, নিপীড়ন-নির্যাতন, অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খল অবস্থা দেখা দিলে তাকেই বলা হয় ‘মগের মুলুক’।”(তথ্যসূত্র: বঙ্গে মগ-ফিরিঙ্গী ও বর্গীর অত্যাচার, মুহম্মদ আবদুল জলিল, বাংলা একাডেমি, পৃষ্ঠা ২৫)। এই বাগধারাটি সমাজজীবনের বিভিন্ন উপাধীর ক্ষেত্রে যুগে যুগে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একক জনগোষ্ঠী হিসেবে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী মগদের একক মুল্লুক সৃষ্টির কারণেই ওই বাগধারাটির উদ্ভব হয়েছে বহু বছর আগেই। সেই উপাধি এখনো উদাহরণ হয়ে আছে। আজকের মায়ানমার ( সাবেক বার্মা) অধিবাসীদের বাংলায় মগ বলা হয়। সেখানকার একটি রাজ্য রাখাইনের অধিবাসী রোহিঙ্গারা এখনো তাদের ভাষায় মায়ানমারের বৌদ্ধদের মগ বলে থাকে।
জানা যায় , ১৪৩৩ সালে বাংলার সুলতান জালালুদ্দিন মাহমুদ শাহের মৃত্যুর পর আরাকানের রাজা ১৪৩৭ সালে রামু দখল করে। ১৪৫৯ সালে চট্টগ্রাম দখল করে এবং ১৫৫৫ সালের মধ্যে ফেনী পার হয়ে ঢাকার নিকটবর্তী অঞ্চল দখল করে নেয় এবং ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত এই বাংলায় আরাকান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সুদীর্ঘ্য ২২৯ বছরে তারা বাংলায় হিন্দু- মুসলিম নির্বিশেষে যে অবর্ণনীয় অত্যাচার চালায় তারই প্রেক্ষিতে বাংলায় এই মগের মুল্লক প্রচলিত বাগধারাটির উৎপত্তি।
বাংলাদেশেও একসময় মগদের ভীষণ উপদ্রব ছিল৷ সে প্রায় ৪০০ বছর আগের কথা৷ আরাকান, অর্থাৎ আজকের মায়ানমার থেকে আসা মগ জলদস্যুরা সে সময় বাংলাদেশের এক বিস্তীর্ণ এলাকায় রীতিমতো ত্রাসের রাজত্ব বানিয়ে বসে৷ ফরাসি পরিব্রাজক বার্নিয়ের সে কথা বর্ণনা করে লুণ্ঠন ও অত্যাচারের যে বিবরণ দিয়েছেন, তা পড়ে এখনো আমাদের রক্ত হিম হয়ে আসে৷ ১৬৬৬ সালে শায়েস্তা খান চট্টগ্রাম জয় করার পর মগদের সন্ত্রাসের রাজত্বের অবসান হয়৷বর্তমান মায়ানমারের রাখাইন বৌদ্ধরাই হচ্ছে অতীতের ‘মগের মুল্লুক’-এর মগ নৌ-দস্যুদের বংশধর।
জানা গেছে ,“পর্তুগীজ নৌ-দস্যুদের সঙ্গে যখন আরাকানী বৌদ্ধরা হাত মিলিয়ে বাঙলার উপকূলীয় এলাকায় সম্ভ্রমহরণ-লুণ্ঠন-হত্যার মতো জঘন্য কর্মে লিপ্ত হয় তখন থেকেই ‘মগ’ ও ‘মগের মুলুক’ জাতি ও দেশবাচক শব্দ দুটি অরাজকতার নামান্তর রূপে ব্যবহৃত হতে থাকে। ‘মগ’ মানে আরাকানী আর ‘মগের মুলুক’ মানে আরাকান এ পরিচয় আজ অনেকের কাছেই অজ্ঞাত। এই বাংলার ধন-সম্পদের প্রাচুর্য দেখে বারংবার বিদেশী অবাঙালি ও অমুসলিম দস্যুরা এই ভূখন্ডে হানা দিয়েছে, যাদের মধ্যে ছিল পর্তুগীজ হার্মাদ নৌদুস্য, মগ নৌদস্যু, অশ্বারোহী মারাঠা বর্গী দস্যুদল প্রভৃতি। এর মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মগদের ভয়াবহ যুলুম নিয়ে ঐতিহাসিক শিহাবুদ্দীন তালিশ লিখেছিলেন- “চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত যাতায়াতের পথে নদীর উভয় পার্শ্বে একজন গৃহস্থও থাকলো না। এই মগের ধ্বংস ক্রিয়ার ফলে বাকলার মতো সমৃদ্ধশালী জনবসতি পূর্ণ জেলায় এমন একটি গৃহও ছিল না, যার মানুষ একটি প্রদীপ জ্বালাতে পারে।”
বাংলার ধন-সম্পদ লুণ্ঠনকারী ঐসব বৌদ্ধ মগ নৌদস্যুদের বংশধররাই হচ্ছে আজকের মায়ানমারের রাখাইন বৌদ্ধ সম্প্রদায়। মগ আর রাখাইন, এ দুটো একই জাতিগোষ্ঠীর দুটো ভিন্ন নাম। ‘মগ’ নামটি ইতিহাসের পাতায় কলঙ্কিত দেখেই তারা ‘রাখাইন’ নাম ধারণ করেছে বলে ধরা হয়। তবে নাম পরিবর্তন করলেও তাদের পূর্বপুরুষদের দস্যুরক্ত তাদের মাঝে এখনো রয়ে গেছে, যার ফলশ্রুতিতে ঐতিহাসিকদের বর্ণনানুযায়ী মানুষ নামের অযোগ্য এই হিংস্র রাখাইন বৌদ্ধরা নির্মমভাবে হতাহত করছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের।
বাংলার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা নৃশংস এই মগ নৌ-দস্যুদের দমন করেছিলেন ইতিহাসবিখ্যাত সুবাদার শায়েস্তা খাঁ। তার ছেলে বুযূর্গ উমেদ খাঁ কর্তৃক রোহিঙ্গা মুসলমানদের সহায়তায় মগদের দমন করার ঘটনা বাংলার ইতিহাসের পাতায় এখনো সমুজ্জ্বল।
আজ মায়ানমারের আরাকান প্রদেশ এক ‘মগের মুল্লুক’ । এটি নতুন এক ইতিহাস । আরাকান প্রদেশ ‘মগের মুল্লুক’ এটি গত তিন সপ্তাহের বাস্তবতা। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মগ জনগোষ্ঠীই ইতিহাসের জঘন্যতম ধারা সৃষ্টি করেছে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে। জরবদখল আর জুলুমের সর্বোচ্চ নজির স্থাপন করেছে মগ’রা। পাহাড়ি এ দেশটির আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করতে মরিয়া মগেরা।
রোহিঙ্গাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী আর সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে মায়ানমার সরকারও এই জুলুম-নির্যাতনে সায় দিচ্ছে। সেখানকার রাষ্ট্রীয় পুলিশ আর সশস্ত্র বাহিনী মগদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে রোহিঙ্গা নিধনের মিশনে ।
‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা’ গত ২৫ আগস্ট মায়ানমারের পুলিশ ফাঁড়ি আর সেনা ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ এনে সেনাবাহিনী ভয়ংকর নির্যাতন শুরু করে মুসলিম এই জনগোষ্টির ওপর। পুলিশ আর সেনাবাহিনী মিলেই মুসলিম প্রধান গ্রামগুলো পোড়াতে থাকে। রোহিঙ্গা যুবকদের নির্বিচারে হত্যা করতে শুরু করে। হত্যার শিকার হয় কোমলমতি শিশুরাও। ধর্ষণ করে তরুণীদের গায়ে আগুন দিয়ে মারার ঘটনাও ঘটছে। গলা কেটে হত্যা আর পুড়িয়ে মারছে নিরস্ত্র মানুষদের। আর এসব নির্যাতনের প্রতিটির সঙ্গেই সম্পৃক্ত বৌদ্ধ মগেরা। হত্যা, ধর্ষণ আর লুটতরাজ করে মুসলমানদের দেশত্যাগে বাধ্য করছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বী এই উগ্রবাদীরা।
সেনাবাহিনী আর মগদের নির্যাতনের ভয়ংকর বর্ণনা শোনা যায় সেখান থেকে জান নিয়ে পালিয়ে আসা নরনারীর মুখে মুখে । অপরিচিতরা গ্রামে গ্রামে প্রবেশ করে বাড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে ,এ সময় জ্বলে উঠে ঘরবাড়ি সহায় সম্পদ। চারিদিকে চলে গুলির শব্দ।
মায়ানমার সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মগদের বিরুদ্ধে চরম নির্যাতনের অভিযোগ আনা রোহিঙ্গাদের অভিযোগ,মায়ানমার সেনারা গত ৬ জুলাই তুমব্রু গ্রাম জ্বালিয়ে দিলে বাড়িঘরসহ সব পুড়ে ছাই হয়। তাদের অভিযোগ,মগদের এক ধর্মীয় নেতা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুসলিম বিদ্বেষী বয়ান দেয়ার পর থেকেই মুসলমানদের উপর নির্যাতন শুরু হয়। ওই ধর্মীয় নেতা সেনাবাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করেই সন্ত্রাস উসকে দিচ্ছেন। সংঘর্ষ হলেও আগে কখনও এমন নির্যাতন হয়নি। আগে সেনারাই এসে তাদের রক্ষা করত। আর এখন মগদের সঙ্গে সেনারাই গুলি করছে, হত্যা করছে। গোটা আরকান এখন মগের মুল্লুকে রূপ নিয়েছে।
মগজাতি অধ্যুষিত মায়ানমার সরকার প্রমাণ করেছে কেন তাদের দেশকে ‘মগের মুল্লুক’ বলা হয়ে থাকে। সে দেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিয়ে জাতিগত দাঙ্গা নিয়ে যে বর্বরতার উদাহরণ মিয়ানমার সৃষ্টি করেছে, তা বিশ্ব বিবেককে যুগপৎ লজ্জিত ও উৎকণ্ঠিত করে তুলেছে। কয়েক দশক জুড়ে এসব রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিয়ে সে দেশের সামরিক জান্তা সরকার ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলো যে বর্বর আচরণ করে চলেছে তা বর্তমান দুনিয়ায় অসভ্যতা, অমানবিকতার সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। পক্ষান্তরে, বাংলাদেশ মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের বৈধভাবে আশ্রয় এবং অবৈধভাবে বসতি স্থাপনকারীদের প্রতি মানবিক আচরণ করে যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে তাতে মায়ানমারের লজ্জিত হওয়া উচিত বলে বিভিন্ন সূত্রের দাবি।কয়েক দশক ধরে সে দেশের রাখাইন প্রদেশে (সাবেক আরাকান) রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নিপীড়ন নির্যাতন, ভোটাধিকার, নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে যে মনমানসিকতা দেখাচ্ছে এবং এতে করে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করে আশ্রিত হয়েছে তা বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে।রোহিঙ্গা ছাড়াও বাংলাদেশে মায়ানমারের মগ জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের শ্রেণী পেশার লোকজন বহু আগে থেকে এদেশে বসতি গেড়েছে। কক্সাজার, উখিয়া, টেকনাফ, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মিয়ানমারের মগ জাতিগোষ্ঠীর লাখ লাখ নারী-পুরুষ এদেশে বসতি গেড়ে নাগরিকত্ব নিয়ে শান্তিতে বসবাস করে যাচ্ছে। নিপীড়ন নির্যাতন তো দূরের কথা। সেক্ষেত্রে মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশী আখ্যায়িত করে সে দেশের সরকার এখনও পর্যন্ত যে অসভ্য আচরণ করে যাচ্ছে তার কোন ব্যাখ্যা সে দেশের সরকারী বেসরকারী বা সুশীল সমাজের পক্ষে দেয়ার কোন সুযোগ তিরোহিত।
জানা গেছে, সে দেশের মগ সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে তাদের বসতি গড়ে তুলে বৈধতা লাভ করেছে। কক্সাজার অঞ্চলে রাখাইন নামের বার্মিজরা তাদের একাধিক কলোনি মার্কেট ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সরকারী বেসরকারী চাকরিতে রত। পক্ষান্তরে, মায়ানমারের রোহিঙ্গারা সর্বক্ষেত্রে উপেক্ষিত। এরা সেদেশে উদ্বাস্তু। নাগরিক অধিকার বলতে কিছুই নেই। পরিসংখ্যান মতে সে দেশের ১৩ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলমান রয়েছে। পক্ষান্তরে, বাংলাদেশে রয়েছে এর চেয়ে বহুগুণে বেশি বর্মী নাগরিক। রাখাইন, মং, প্রুসহ নামের শেষে এ ধরনের নানা টাইটেল রয়েছে তাদের। মূলত এরা সবাই মগ জাতি এবং শ’ শ’ বছর আগে এরা সাবেক বার্মা থেকে এ অঞ্চলে এসে বসতি গেড়েছে। এক সময় বৃহত্তর চট্টগ্রাম আরাকান রাজ্যের অধীনে থাকার কারণে দু’অঞ্চলের মানুষ অবাধে বিনা পাসপোর্টে আসা যাওয়া করত এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করত। সে কারণে যার যেখানে ইচ্ছা এবং সুবিধা সেখানেই তারা বসতি গেড়েছে।
জানা গেছে , মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানরা গত কয়েক যুগ ধরে কেবলই দেশান্তর হচ্ছে। বাংলাদেশের শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত হয়েছে অসংখ্য। ইতোমধ্যে কিছু ফেরত গেছে। কিন্তু সরকারী পরিসংখ্যানে এখনও রয়ে গেছে ৩২ হাজার। অথচ বেসরকারী পরিসংখ্যানে তা ১০ লক্ষাধিক। আর রাখাইনসহ মগ জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন ছোট ছোট সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা লাখ লাখ। যারা এদেশের নাগরিক অধিকার নিয়ে, পাসপোর্ট পেয়ে সকল সুযোগ-সুবিধা অর্জন করে সুস্থ জীবনযাপন করছে।
সর্বশেষ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সমুদ্র উপকূলে যে অভিবাসী সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তাদের অধিকাংশ মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান। নারী, পুরুষ, শিশু আবাল বৃদ্ধ বনিতা নির্বিশেষে এরা মিয়ানমার ছেড়ে অজানা গন্তব্যে পাড়ি দিয়ে যাচ্ছে অতীতের মতো। তাদের এ দেশান্তর প্রক্রিয়ার সুযোগ নিয়েছে মানব পাচারকারী চক্রের হোতারা। এ চক্রের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মায়ানমার ও মালয়েশিয়ার একশ্রেণীর নরপশু, যারা মানবপাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত। মূলত রোহিঙ্গাদের এ দেশান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে সমুদ্র পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশী হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর কিছু মানুষ। রোহিঙ্গাদের দেখানো পথে এরা সওয়ারি হয়েছে।
মগের মুল্লুকের দেশ বলে খ্যাত মায়ানমার রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব না দিয়ে উল্টো বলছে ওরা বাংলাদেশী। কিন্তু বাংলাদেশ সে দেশের মগ সম্প্রদায়ের লোকজন যারা বাংলাদেশে বসতি গেড়েছে তাদের কখনও বলেনি ওরা বার্মিজ। বছরের পর বছর ধরে সামরিক শাসনের যাতাকলে থেকে মায়ানমার এখন গণতন্ত্রের পথে বলে বিশ্বব্যাপী প্রচার হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের দীর্ঘদিনের অবরোধ মায়ানমারের উপর থেকে তুলে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দু’বার মায়ানমার সফর করেছেন। আর শান্তির জন্য মায়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সুচিও যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সব সময় প্রাধান্য পেয়েছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সমস্যা নিয়ে। প্রেসিডেন্ট ওবামা মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট ও সুচিকে বার বার আহ্বান জানিয়েছেন রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে। বিপরীতে তারা তাতে সাড়া দিলেও কার্যত; কোন পদক্ষেপ নেন নি । উল্টো আজ নানা অজুহাতে দেশান্তরী হচ্ছে রোহিঙ্গারা । সে দেশ থেকে তাদেরকে তাড়ানোর যাবতীয় তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে মায়ানমার। এতে দলে দলে রোহিঙ্গা মুসলমানরা সে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। আশ্রয় নিচ্ছে বাংলাদেশে ।এ আশ্রয় নেওয়ার কাহিনীও বর্ণনাতীত , গা শিউরে ওঠার মত ।নানামুখী সন্ত্রাসের মুখে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে পালাবার সময়ও তারা নিরাপদ নয় । যারা কোনমতে পালাতে পেরেছেন তাদের শরীরে রযে গেছে মায়ানমারের জাতিগত বিভেদের ক্ষত । দিনে দিনে মায়ানমার ছেড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়ছেই , এ সংখ্যা এখন পাঁচ লাখ ছুই ছুই ।
গত ২৯ আগস্ট থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে ২৩টি নৌকাডুবির ঘটনায় গত শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ৫৭টি, নারী ৩২ জন, পুরুষ ২৩ জন।