বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে
কালিয়াকৈরে পোশাক কারখানা ভাংচুর, কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ ॥
শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ॥ গুলি ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ ॥
পুলিশসহ আহত ১৯ ॥
গাজীপুর সংবাদদাতা ॥ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে বৃহস্পতিবার এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্ম বিরতি, বিক্ষোভ ও ভাংচুর করেছে। এসময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের কয়েক দফা সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার সেল ও সর্টগানের গুলি ছুড়েছে। এঘটনায় পুলিশের ৪ সদস্য ও অন্ততঃ ১২ জন শ্রমিক আহত হয়েছে।
শিল্প-পুলিশ গাজীপুর-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মকবুল হোসেন ও শ্রমিকরা জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা পল্লীবিদ্যুৎ এলাকাস্থিত আয়মন টেক্সটাইল এন্ড হোসিয়ারী লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের পাওনা ঈদের আগের মাসের (আগস্ট) ১০ দিনের বকেয়া বেতন ও ওভার টাইমের ভাতা পরিশোধের দাবী জানিয়ে আসছিল। কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনাদি গত ১০ সেপ্টেম্বর পরিশোধের আশ্বাস দিলেও তা পরিশোধ করে নি। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে কর্তৃপক্ষ বৃহষ্পতিবার শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধের আশ্বাস দেয়। এদিন সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে তাদের বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। পরিবহন সমস্যার কারনে ঢাকা থেকে বেতন ভাতার টাকা নিয়ে কারখানায় পৌছতে দেরী হওয়ায় বেতন ভাতা পরিশোধ করা হবেনা বলে শ্রমিকদের মাঝে গুজব ছড়িয়ে। এর জের ধরে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে দুপুরে কারখানার ভিতরে বিভিন্ন মালামাল ও মেশিন এবং আসবাবপত্র ভাংচুর করে। এসময় তারা কারখানার ভিতরে কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে গেইটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। এক পর্যায়ে বিকেলে টাকা বহনকারী গাড়ি কারখানার গেইটে পৌছলে শ্রমিকদের মাঝে আবারো উত্তেজনা দেখা দেয়। এসময় টাকা বহনকারী গাড়ি নিয়ে পুলিশ ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে শ্রমিকরা বাধা দেয়। ওই গাড়িতে টাকা নেই এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত শ্রমিকরা পুলিশের উপর হামলা চালায় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে পুলিশের ৪ সদস্য আহত হয়। এসময় শ্রমিকরা টাকা বহনকারী গাড়িটিও ভাংচুর করে। এসময় পুলিশ লাঠিচার্জ করলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ৪রাউন্ড টিয়ার সেল এবং ১২ রাউন্ড সর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এঘটনায় পুলিশের ৪ সদস্য ও অন্ততঃ ১২ জন শ্রমিক আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে বিকেলের দিকে শ্রমিকদের বেতন ভাতাদি পরিশোধের কার্যক্রম শুরু হয় এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত তা চলছিল।
কারখানার এজিএম নাসির উদ্দিন বালী জানান, বেতন দেয়াকে কেন্দ্র করে ভূল বোঝাবুঝির কারণে এঘটনা ঘটেছে। বেতন দেয়া শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
শিল্প-পুলিশ গাজীপুর-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মকবুল হোসেন জানান, শ্রমিকদেও হামলায় ও তাদেও ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের ৪ সদস্য আহত হয়েছে। একপর্যায়ে পুলিশ ৪ রাউন্ড টিয়ার সেল ও ১২ রাউন্ড সর্টগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গাজীপুরে কাশিমপুর কারাগার থেকে
ইয়াবাসহ কারারক্ষী আটক
গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর এক কারারক্ষীকে বৃহষ্পতিবার ছয়শত পিস ইয়াবাসহ হাতে নাতে আটক করা হয়েছে। আটককৃত ওই কারারক্ষীর নাম আজিজার রহমান। তিনি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার পোড়ানগরী ছয়গড়িয়া গ্রামের নবাব আলীর ছেলে।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, কারারক্ষী আজিজার রহমান ইয়াবা সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এমন তথ্য কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পূর্বে থেকেই ছিল। এরপর থেকে তার প্রতি বিশেষ নজরদারী করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কারারক্ষী আজিজারকে চ্যালেঞ্জ করে তার দেহ তল্লাশী করা হয়। এসময় তার সঙ্গে থাকা ৬’শ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে জয়দেবপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
জয়দেবপুর থানার কোনাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আঃ হামিদ জানান, কারাকর্তৃপক্ষ ওই কারারক্ষীকে ইয়াবাসহ আটক করে। পরে পুলিশে খবর দিয়ে তাকে ফাঁড়িতে আনা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে বন্দির মৃত্যু
গাজীপুর সংবাদদাতা ॥ গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে বৃহ¯পতিবার এক বন্দির মৃত্যু হয়েছে। তার নাম শুক্কুরী বেগম (৪২)। সে কুমিল্লার লাকসাম থানার গাজীর মোড়া এলাকার হায়দার আলীর স্ত্রী। তিনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বড়বাড়ি এলাকায় সপরিবার বসবাস করতেন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শাহজাহান আহমেদ জানান, এ কারাগারে বন্দি শুক্কুরী বেগম ডায়াবেটিসসহ হৃদরোগে ভুগছিলেন। বুধবার রাত ৮টার দিকে বুকে ব্যাথার কথা বললে প্রথমে তাকে কারা হাসপাতালে, পরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি জানান, শুক্কুরী ঢাকার ভাসানটেক থানার একটি মাদক মামলায় গত ৮ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হলে পরদিন এ কারাগারে পাঠানো হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, শুক্কুরী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
শ্রীপুরে গলিত লাশ উদ্ধার ॥
গাজীপুর সংবাদদাতা ॥ গাজীপুরের শ্রীপুরে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় এক জঙ্গল থেকে গলিত মানব লাশের মাথার খুলি ও হাত-পাসহ হাড় উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের পরিচয় সনাক্ত করা যায় নি।
শ্রীপুর মডেল থানার এসআই মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার বেতজুরি গ্রামের তুলা উন্নয়ন ও গবেষণা কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এক জঙ্গলে স্থানীয়রা বৃহষ্পতিবার এক ব্যাক্তির গলিত লাশ দেখতে পায়। খবর পেয়ে পুলিশ সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল থেকে লাশের মাথার খুলি, দু’পা-হাত ও মেরুদন্ডেরসহ হাড় উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজ উদ্দীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। লাশ গলে যাওয়ায় লাশটি পুরুষ না-কি মহিলার সে পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয় নি। ধারণা করা হচ্ছে, অন্ততঃ দেড় মাস আগে হত্যা করে লাশ সেখানে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
গাজীপুরে হত্যা মামলায় ১৪ আসামির
১০ করে বছর কারাদ-
গাজীপুর সংবাদদাতা ॥ গাজীপুরের কাপাসিয়ায় আক্তার হোসেন হত্যা মামলায় ১৪ জনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত। জরিমানা অনাদায়ে প্রত্যেককে আরো ছয় মাস করে সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহ¯পতিবার বিকেলে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১-এর বিচারক ফজলে এলাহী ভূইয়া এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে একই সঙ্গে অন্য পৃথক দুটি ধারায় দেড় বছর করে সশ্রম কারাদন্ড এবং দুই হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো দুই মাস করে সশ্রম করাদন্ড দেয়া হয়েছে।
দ-প্রাপ্তরা হলেন গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার খিরাটি গ্রামের ইসমাইল, লেহাজ উদ্দিন, আকরাম হোসেন, রফিকুল ইসলাম, রুবেল, কাজিম উদ্দিন, আবুল কালাম, তানজিল, ঘাগটিয়া গ্রামের উকিল মিয়া, মোফাজ্জল হোসেন, আক্তার মিয়া, নুরুজ্জামান, সনমানিয়া গ্রামের আবদুল মোতালিব ও সিংগুয়া গ্রামের সুরুজ মিয়া।
রায় ঘোষণার সময় দ-প্রাপ্ত আসামি ইসমাইল, রুবেল, তানজিল ও সুরুজ মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অপর আসামি সনমানিয়া গ্রামের মানিক মিয়াকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব শত্রুতা ও মামলা মোকদ্দমার জের ধরে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার খিরাটি গ্রামের আক্তার হোসেনের কাছে আসামিরা ভিসিপি কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় ২০০২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে তাকে প্রথমে পিটিয়ে ও পরে বিদ্যুৎ¯পৃষ্ট করে হত্যা করা হয়।
রাষ্ট্র পক্ষে মামলা মামলা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি মকবুল হেসেন কাজল, আসামি পক্ষে ছিলেন বেগম শেফালী আক্তার চৈতি ও অ্যাডভোকেট ফয়েজ উদ্দিন।