রাখাইনে মসজিদে আজান দেয়ার ও নামাজ আদায়ের কেউ নেই!

কক্সবাজার: মিয়ানমারের আরাকানে চলমান গণহত্যায় নারী ও শিশুদের পাশাপাশি সহস্রাধিক আলেম ওলামাকেও হত্যা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আহমদ হোছাইন (৯০)। এছাড়া পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে কয়েকশ’ মসজিদ-মাদরাসা ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনা। বিছিন্নভাবে কিছু মসজিদ টিকে থাকলেও সেগুলোতে আজান দেয়া ও নামাজ আদায়ের কেউ নেই। জীবন বাঁচাতে সবাই পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা আরাকান থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের নাম নিশানা মুছে দিতেই পরিকল্পিতভাবে মুসলমান রোহিঙ্গাদের গণহত্যা শুরু করেছে। রোহিঙ্গাদের নেতৃত্বশূন্য করতে বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছে আলেম ওলামা ও পীর মশায়েখদের। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
উখিয়ার বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া হাফেজ আইয়ুব নামের একজন জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সেনা ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে, নারী, শিশু ও পুরুষদের হত্যা করে এবং যুবতীদের ধর্ষণ করেই থামছে না। তারা পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে আরাকানের ঐতিহ্যবাহী মসজিদ-মাদরাসা ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোও জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এপর্যন্ত তারা দুই শতাধিক মসজিদ, অর্ধশত মাদরাসা ও অসংখ্য খানাকাহ পুড়িয়ে দিয়েছে।
কিছু আলেম-ওলামা সেনা-পুলিশ ও উগ্র বৌদ্ধদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিতে পারলেও অধিকাংশ বয়স্ক আলেম-ওলামা ও পীর মশায়েখকে হত্যা করেছে তারা। এতে করে গত ২৪ আগস্ট থেকে আজান ও নামাজ বন্ধ হয়ে গেছে জনশূন্য আরাকানের বাকি মসজিদগুলোতে। আরাকানের ২০টি দাওরায়ে হাদিস (কামিল) মাদরাসার সাথে মাধ্যমিক স্তরের আরো ৩০টি মাদরাসা এখন বিরান।
সায়দুল্লাহর চর এলাকার বড় মাদরাসার মুহাদ্দিস প্রবীণ আলেমে দ্বীন মাওলানা আহমদ হোছাইনকে (৯০) বর্মী সেনারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তিনি ছিলেন ওই মাদরসার মুহাদ্দিস ও পরিচালক। গত ৬০ বছর ধরে তিনি হাদিসের দরস দিয়ে আসছিলেন।
গত ৩০ আগস্ট সেনা-পুলিশ ও মগদের একটি দল সায়দুল্লাহর চর এলাকা ঘেরাও করে ওই মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের কাউকে গুলি করে আবার কাউকে ধারালো ছুরি দিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। কেউ বা পাশের বনে জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে পরে বাংলাদেশে পালিয়ে চলে আসেন।
সবার শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন মাওলানা আহমদ হোছাইন কোথাও যেতে পারেননি। তিনি মাদরাসায় থেকে যান।
সেখান থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, তারা দূর থেকে দেখেছেন সেনা-পুলিশ ও মগরা তাকে প্রথমে গুলি করে হত্যা করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়। পরপর কয়েকটি গুলি করলেও একটিও তার শরীরে না লাগায় তারা ক্ষেপে যায়। এরপর দা দিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে হত্যা করে।
একইভাবে টেকিবনিয়ার কোয়াইংচিবং মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা নুর আহম্মেদকে নামাজরত অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। তার পুরো পরিবারকের হত্যা করেছে সেনা ও উগ্রপন্থী মগরা।
মৌলভী ইউসুফ নামের পালিয়ে আসা একজন রোহিঙ্গা বলেন, কোনো আলেম ওলামাকে তারা জীবিত রাখেনি। কোনো কোন আলেমকে হাত-পা কেটে পুরো শরীর টুকরো টুকরো করা হয়েছে।

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।