বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজায় বৃহস্পতিবার মহাষ্টমী। শারদীয় দুর্গোৎসবে পূজারি ও ভক্তরা মহাষ্টমীকে বিশেষ জাঁকজমকপূর্ণ করে পালন করেন। অষ্টমী পূজাকেই শারদীয় দুর্গোৎসবের ‘ক্লাইমেক্স’ হিসেবে গণ্য করা হয়। মহাষ্টমীর দিনে রামকৃষ্ণ মঠ ও মন্দিরগুলোতে অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজা। স্বামী বিবেকানন্দ শারদীয় দুর্গোৎসবে এই কুমারী পূজার প্রচলন করেন। বুধবার ছিল মহাসপ্তমী। সকালে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মধ্যদিয়ে শুরু হয় শুভ সপ্তমী। জেলার বিভিন্ন পূজামন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে সপ্তমী পূজার মহোৎসব।
মহাসপ্তমীতে পূজার উপাদান হিসেবে সকালে দেবী দুর্গার চক্ষুদান, আসন, বস্ত্র, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা দেয়া হয়। দুপুরে মন্ডপে চলে প্রসাদ বিতরণ। এছাড়া সপ্তমীর সন্ধ্যায় ভক্তিমূলক গান, আরতি দিয়ে সাজানো হয় অনুষ্ঠানমালা।
কুমারী পূজা কেন করা হয়- এ প্রশ্নের জবাবে শ্রীরামকৃষ্ণের কথামতে বলা রয়েছে, সব স্ত্রীলোক ভগবতীর এক স্বরূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। সব নারীতে মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার প্রধান লক্ষ্য।
হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজার উল্লেখ রয়েছে। ব্রাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পূজা করার বিধান রয়েছে। বয়সভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন। শাস্ত্রমতে; এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কালিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে উমা, সাতে মালিনী, আটে কুব্জিকা, নয়ে অপরাজিতা, দশে কালসন্ধর্ভা, এগারোয় রুদ্রাণী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরোয় ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোল বছরে অম্বিকা বলা হয়ে থাকে। এদিন নির্বাচিত কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। হাতে দেয়া হয় ফুল, কপালে সিঁদুরের তিলক ও পায়ে আলতা। ঠিক সময়ে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপচারে পূজা করা হয়। চারদিক মুখরিত হয় শঙ্খ, উলুধ্বনি আর মায়ের স্তব-স্তুতিতে।সপ্তমীর বিকেল থেকেই দূরের অনেকেই অটোবাইক, সিএনজি স্কুটার ও মাইক্রোবাস ভাড়া করে সাতক্ষীরা জেলা শহর ও উপজেলা শহরের পূজা দেখতে ছুটে আসে। পূজামন্ডপগুলো কমিটি তাদের নানাভাবে সাজিয়েছে। পূজামন্ডপ দর্শণার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে সাতক্ষীরার প্রতিটি পূজাম-পের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে এ পূজার আয়োজন করায় এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধারে যাত্রার আগে শ্রীরাম চন্দ্র দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবস্যা তিথিতে। এ জন্যই দেবীর শরৎকালের এ পূজাকে অকালবোধনও বলা হয়।
Check Also
সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। …