রাজধানীর উত্তরা থেকে অপহৃত জামালপুর সরিষাবাড়ী পৌর মেয়র মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান রোকনকে শ্রীমঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপহরণের চারদিনের মাথায় গতকাল শ্রীমঙ্গলের কালীঘাট ইউনিয়নের খোলা মাঠ থেকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোবাশশেরুল ইসলাম বলেন, কালীঘাট ইউনিয়নে একটি খোলা মাঠে তাকে চোখ বেঁধে ফেলে দেয়া হয়েছিল। উনি ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। প্রথমে তাকে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়। পরে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সুস্থ হওয়ার পর সেখানেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
এদিকে ওই ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ অশোক কানু বলেন, তাদের এলাকায় সেনাবাহিনীর মহড়া চলছিল। সকালে একজন লোক এসে বলে আমাকে বাঁচান। তখন আমি ওই লোকটিকে জিজ্ঞেস করি আপনি কে। তিনি বলেন, আমি মেয়র। তখন উনাকে নিয়ে আমরা ইউনিয়ন পরিষদে বসাই। দফাদার গৌড়া লাল ভৌমিক বলেন, দুপুর ১ টার দিকে একটি মাইক্রোবাস থেকে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় দু’জন লোক তাকে নিয়ে নামে। তখন তাকে সামনে হাঁটতে বলে। হাঁটতে হাঁটতে কালীঘাট ইউপি’র সামনে যাওয়ার পর গাড়িটি চলে যায়।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি কেএম নজরুল বলেন, ‘কালীঘাট ইউনিয়ন অফিসের সামনের একটি খোলা মাঠে দুপুর একটার দিকে একটি কালো মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে দিয়ে যায়। ইউনিয়নের লোকজন তাকে দেখে পুলিশকে খবর দিলে আমরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন তিনি। তবে পুরোপুরি কথা বলতে পারছেন না। নিখোঁজের আগের দিন রোববার রাত ৯টা ১৩ মিনিটে তার ফেসবুকে দেয়া একটি স্ট্যাটাসে বলা হয়েছিল, ‘নতুন প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান যে আমাকে হত্যা করা হলেও তোমাদের সিক্ত ভালোবাসা যেন অটুট থাকে এবং আমার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা তোমরা ধরে রাখবা’। দল পরিবর্তন করে পৌরসভার নির্বাচনে অংশগ্রহণ, পৌরসভার এক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা, দুই স্ত্রীর দাম্পত্য কলহ এবং ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বকে সামনে রেখে পুলিশ ও র্যাব নিখোঁজের ঘটনাটি তদন্ত করছে। গত সোমবার সকালে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের পার্কে প্রাতঃভ্রমণ করতে গিয়ে পৌর মেয়র রুকন নিখোঁজ হন। তিনি উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৪ নম্বর রোডের ৬০ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন। ঘটনার পর সোমবার রাতে তার বড় ভাই সাইফুল ইসলাম টুকুন উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি জিডি করেন। উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি মো. আলী হোসেন বলেন, জিডি হওয়ার পর পুলিশ তার অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করছে। কেন তিনি নিখোঁজ হলেন সে বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। পৌরসভার একটি সূত্র জানায়, রুকন আগে বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৫ সালের ৩০শে ডিসেম্বর পৌরসভার নির্বাচনের আগে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। এর সূত্র ধরে স্থানীয় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার একটি দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। পৌরসভার কর আদায়কারী মিয়া হাসান মাসুদ মুন্নাফের সঙ্গেও তার দ্বন্দ্ব চলছিল। গত বৃহস্পতিবার পৌর মেয়র তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। পৌরসভার কর্মচারীদের দাবি, ঘটনার দিন বরখাস্ত নিয়ে পৌর মেয়রের সঙ্গে মিয়া হাসানের বাক বিতণ্ডা হয়।
Check Also
প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …