জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্টেনিও গুটেরেস বলেছেন, মিয়ানমারে সহিংসতা বর্তমানে বিশ্বের দ্রুততম শরণার্থী সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এতে করে মানবাধিকার পরিস্থিতিকে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় নিয়ে গেছে।
জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মহাসচিব মিয়ানমার সরকারকে সেই সেনা অভিযান বন্ধের আহ্বান জানান। এই অভিযানের ফলে গত মাসে প্রায় পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে দেশছাড়া করেছে।
তিনি তার বক্তব্যে সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করেন।
রাখাইনে জাতিসঙ্ঘ এবং অন্যান্য সংস্থার প্রতি দেশটির বৈরী আচরণে গুটেরেস তার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেন, অবিলম্বে সেখানে মানবিক সহায়তা প্রবেশের দাবি জানান।
গুটেরেস বলেন, রাখাইনে সেনা অভিযান বন্ধ করতে হবে, সেখানে মানবিক সহায়তার সুযোগ দিতে হবে।
পাশাপাশি পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদে কোনো বৈষম্যছাড়াই নিজ গ্রামে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতিও আহবান জানান।
তিনি রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা মিয়ানমারের অন্য এলাকাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দেন।
তবে নিরাপত্তা পরিষদের এ বৈঠকে চীন ও রাশিয়া আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
এ বৈঠকে মিয়ানমারের একজন প্রতিনিধি ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিও বক্তব্য দিয়েছেন।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিক্কি হেলি রাখাইনের পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি না করার আহবান জানিয়েছেন।
বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের অধিকাংশ সদস্যই মিয়ানমারে জাতিগত নিধন ও গণহত্যা বিবরণ তুলে ধরেন।
তবে মিয়ানমার প্রতিনিধি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
রাখাইনে জাতিসঙ্ঘ তদন্ত দলকে ঢুকতেই দিলো না মিয়ানমার
বাসস
রাখাইনে জাতিসঙ্ঘ তদন্ত দলকে ঢুকতেই দিলো না মিয়ানমাররাখাইনে জাতিসঙ্ঘ তদন্ত দলকে ঢুকতেই দিলো না মিয়ানমার
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিসঙ্ঘ তদন্ত দলের নির্ধারিত সফর মিয়ানমার সরকার হঠাৎ করেই বাতিল করে দিয়েছে। ইয়াংগনে জাতিসঙ্ঘ মুখপাত্র স্তানিস্লাভ সেলিঙ বিবিসিকে জানান, সরকার এই সফর বাতিল করার পেছনে কোনো কারণ দেখায়নি।
রোহিঙ্গা মুসলমানরা কেন পালাতে বাধ্য হয়েছে সেটা রাখাইনে গিয়ে তদন্ত করার জন্য জাতিসঙ্ঘ মিয়ানমারের ওপর চাপ দিয়ে আসছিল।
মাস খানেক আগে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান, বৌদ্ধ এবং হিন্দু ঘরবাড়ি ছেড়ে রাখাইন রাজ্যে ভেতরেই সাময়িক আশ্রয়ে রয়েছে।
চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশে।
জাতিসঙ্ঘের সংস্থাগুলো বলছে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের সংখ্যা গত কয়েক দিনে লক্ষণীয় রকমে কমে গেছে।
তবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম-এর একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, মিয়ানমার ছেড়ে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা যে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে এমন কথা বলার সময় এখনো আসেনি।
ওদিকে, মিয়ানমারে কর্মরত একটি ত্রাণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রধান এবং সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড মিলিব্যান্ড বলেছেন, যে সব দেশ বর্মী সেনাবাহিনীকে সমর্থন দেয় তাদের উচিত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের জন্য তাদের প্রভাবকে কাজে লাগানো।
তিনি বলেন, এ সমর্থনকে মানবাধিকার লংঘনের কাজে ব্যবহার করা চলে না।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে তাতে সেখানে ‘জাতিগত শুদ্ধি অভিযান’ চলছে বলে অভিযোগও উঠেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ‘বিশাল পরিমাণে’ আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন।
শরণার্থী সংক্রান্ত জাতিসঙ্ঘ হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে বলেছেন, এ এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।