মনি: আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অষ্টম শ্রেণির মাদ্রাসা পড়–য়া ছাত্রীকে সাতক্ষীরা সদরের বালিথায় গণধর্ষণের মামলা ১৩ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। মূল আসামী সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে সদর হাসপাতালের ডাক্তারি সনদের প্রতিদবেদন পরিবর্তণ করানোর অভিযোগ ছাড়াও বাদি ও সাক্ষীরা যাতে আদালতে সাক্ষী দিতে না আসে সেজন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সম্প্রতি আসামী সোহরাব ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতে আবেদন করে মামলার বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত করা ও প্রভাব খাটিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পরিবর্তণ করে নিজেকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের নিজ গ্রামের ঘের কর্মচারি বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে তার মাদ্রাসা পড়–য়া মেয়েকে নতুন পোশাক কিনে দেওয়ার নাম করে গত বছরের ২০ আগষ্ট বাড়ি থেকে ডেকে আনে একই গ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেন (৪২)। নিজের ছেলে ও মাদ্রাসা ছাত্রীর ভাইয়ের সঙ্গে মোজাফফর গার্ডেনসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে শহরের চায়না বাংলার সামনে নিয়ে আসতে বলা হয়। পথিমধ্যে ছেলে চলে যায়। হোটেল কর্মচারি হওয়ার সুবাদে চায়না বাংলার সামনে বোনকে সোহরাবের কাছে দিয়ে ভাই চলে যায়। এরপর ৬০০ টাকা দামের এক ব্যাগ কেনার পর একটি হোটেলে ফুচকার সঙ্গে নেশা জাতীয় কোমল পানীয় পান করিয়ে বালিথা গ্রামের ডালিয়া খাতুনের বাসায় নিয়ে যেয়ে সোহরাব হোসেন, বাইদুল¬াহ ও নুরুল হক ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করে ডাক্তারখানায় নিয়ে যাওয়ার নাম করে ডালিয়া খাতুনের বাড়ির পার্শ্ববর্তী লিয়াকতের আমগাছের নার্সারীর ভিতরে ফেলে বালিথা গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর সহায়তায় বায়দুল্লাহ ও নুরুল হক তাকে দ্বিতীয় দফায় ধর্ষণ করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পুলিশের সহায়তায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পুলিশ ধর্ষণে সহযোগিতাকারি ডালিযা আক্তারকে আটক করেও পরে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনায় ধর্ষিতার মা বাদি হয়ে আশাশুনি উপজেলার সুভদ্রকাটি গ্রামের শওকত সানার ছেলে সোহরাব হোসেন, সাতক্ষীরা সদরের বালিথা গ্রামের শেখপাড়ার অহেদ সরদারের ছেলে বাইদুল¬াহ, হাশেম সরদারের ছেলে নুরুল হক, মাহাফুজুর সরদারের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান সরদার ও রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ডালিয়া আক্তারের নাম উল্লেখ করে পরদিন ২১ আগস্ট সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা (জিআর-৪৪০, সদর) দায়ের করেন। পুলিশ এজাহারভুক্ত আসামী সোহরাব হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়। গ্রেপ্তারকৃত মোস্তাফিজুর রহমান বাবু কিভাবে সোহরাব, বায়দুল¬াহ ও নুরুল হক ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ করে পুলিশের কাছে তার বর্ণনা দেয়। এ সময় পুলিশসহ উপস্থিত জনগনের সামনে ও সোহরাব ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করলেও জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সে অস্বীকার করে। গত বছরের ২২ আগস্ট ধর্ষিতা সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম হাবিবুল¬াহ মাহমুদের কাছে সোহরাব হোসেনসহ তিন জনের দু’ দফায় গণধর্ষণের বর্ণনা দিয়ে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এদিকে শহরের মুনজিতপুরে বাড়ি তৈরির সূত্র ধরে সোহরাব স্থানীয় এক সাংসদের কাছে মামলা থেকে বাঁচতে ধর্ণা ধরতে থাকে। একপর্যায়ে জেলে থেকেও আর্থিক সুবিধা দিয়ে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ডাক্তারি পরীক্ষার সনদপত্রে ধর্ষণের কোন আলামত নেই লিখিয়ে নিতে সমর্থ হয়। এ প্রতিবেদন দেখিয়ে যদিও গত বছরের ১৭ নভেম্বরের ঢাকা মহাখালির ফরেনসিক প্রতিবেদনে ধর্ষিতার শালোয়ারে পুরুষের বীর্য পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ থাকায় সোহরাব হোসেনের পরিকল্পনা হোঁচট খায়। একপর্যায়ে গত ৩১ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক নাজমুল হোসেন এজাহারভুক্ত পাঁচজনের নাম উলে¬খ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলায় বায়দুল¬াহ, নুরুল হক ও ডালিয়া আক্তার পলাতক রয়েছে। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মামলার বাদির অভিযোগ, সালোয়ারে ধর্ষণের আলামত পাওয়ার পর সোহরাব হোসেন বেপরোয়া হয়ে পড়ে। তারা সোহরাবের ভয়ে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করতে ভয় পাচ্ছেন। একপর্যায়ে তাকে ও মামলার একাধিক সাক্ষীকে ভয় দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। মামলার কার্যক্রম দীর্ঘায়িত করার জন্য আদালতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আবেদন করে সোহরাব। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভিকটিমকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নিয়ে যান মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক নাজমুল হোসেন। সোহরাব নিজেকে মামলা থেকে বাঁচাতে আগামি ধার্য দিন ৪ অক্টোবরের মধ্যে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপপাতালের সংশ্লি¬ষ্ট ডাক্তারদের ম্যানেজ করে ডিএনএ প্রতিবেদন পরিবর্তণ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন তিনি(বাদি)। এ ব্যাপারে সোহরাব হোসেন ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ ও আর্থিক সুবিধা দিয়ে ডাক্তারি সনদ পরিবর্তন ও বাদিকে মামলা তুলে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
Check Also
আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …