রোহিঙ্গাশিবিরে অনেকের সাত দিন গোসল নেই

গেলাম আজম খান উখিয়া, কক্সবাজার থেকে:উখিয়ার আশ্রয়শিবিরগুলোতে পানি সমস্যা প্রকট। একই সাথে স্যানিটারি ল্যাট্রিনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা-নির্যাতনে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা প্রথমে উখিয়া-টেকনাফের প্রধান সড়কের দুই পাশে আশ্রয় নিলে সেখানে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু নলকূপ বসানো হয়েছিল। পরে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়ায় তারা রোহিঙ্গাদের রাস্তা থেকে ভেতরে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত স্যানিটারি ল্যাট্রিন অথবা পানির ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। দ্রুততার সাথে কিছু নলকূপ বসানো গেলেও সেগুলো থেকে দুর্গন্ধযুক্ত ঘোলাপানি বের হয়। ফলে এ পানি শরণার্থীরা পান করতে চান না। আবার রান্নার কাজেও ব্যবহার করতে চান না দুর্গন্ধের কারণে। অনেকেই দূরে গিয়ে পুরনো বসতিতে বসানো নলকূপের পানি সংগ্রহ করে নিয়ে আসছেন। নলকূপের অপর্যাপ্ততার সাথে ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা না থাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চার দিক।
সাত দিন ধরে গোসল করতে পারেন না রোহিঙ্গা নারী আয়শা (২৪)। তার সাথে আছে পাঁচটি শিশু। এদের সবারই গায়ের কাপড়চোপড় বেশ নোংরা। কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের ভেতরে কথা হচ্ছিল আয়শার সাথে। আয়শা এক কাপড়েই শিশুদের নিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। অন্যরা হাতে কিছু নিয়ে এলেও আয়শা কিছুই আনতে পারেননি। আয়শা বলছিলেন, গোসল করতে না পারায় বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। দূর থেকে পানি সংগ্রহ করা গেলেও অথবা সেখানে গিয়ে অনেকেই গোসল করে আসছেন। কিন্তু আমি পারছি না। তিনি বলেন, আমার অন্য কোনো কাপড় নেই। সাথে কোনো টাকা পয়সা নিয়ে আসতে পারিনি যে এখান থেকে কাপড় কিনব। সে কারণে সাত দিন ধরে গোসল না করেই আছি।
আশ্রয়শিবিরে শিশুদের নিয়ে অনেকটা নির্বাক হয়ে বসেছিলেন শরীফা (৩০)। তার কোলে একটি শিশু। ওর বয়স ছয় মাসের বেশি হবে না। সবচেয়ে বড় শিশুটির বয়স সাত বছরও পার হয়নি। চারটি শিশুকে ধরে সামনের দিকে চেয়ে তাকিয়ে ছিলেন শরীফা আর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল।
চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় কথা বললেই কেবল বুঝতে পারেন শরীফা। প্রশ্ন করার অনেকক্ষণ পর শরীফা জানান, এর আগে কখনোই একনাগাড়ে অনেক দিন গোসল ছাড়া থাকেননি। এখন থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ অতিরিক্ত কোনো কাপড় নেই। অন্যরা ত্রাণের জন্য বাইরে যেতে পারলেও ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে কোথাও যাওয়া যাচ্ছে না। স্বামী কোথায় জানতে চাইলে শরীফা জানান, তার স্বামীকে মগেরা গুলি করে মেরে ফেলেছে। স্বামী তাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকার কথা বলে আরেকজনকে খবর দিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বাড়ির কাছাকাছি এলে মগ সৈন্যদের সামনে পড়ে যান। তাকে দেখামাত্রই মগেরা ব্রাশফায়ার করে এবং সাথে সাথে মারা যান স্বামী। শরীফা ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিলেন না। চোখ দিয়ে কেবল পানি গড়িয়ে পড়ছিল।
হাসিম আলী (৬০) জানান, পানি ও ল্যাট্রিনের সমস্যাটা অনেক বেশি। আরো অনেকগুলো ল্যাট্রিন করে দিতে পারলে ভালো হতো। আমি বুড়া মানুষ, পায়খানার বেগ সহ্য করতে পারি না। অনেক সময় কাপড়েই পায়খানা করে দিতে হয়। এত মানুষের সামনে খোলা জায়গায় পায়খানা করতে পারি না।
এ ধরনের সমস্যার কথা আরো অনেকেই জানান রোহিঙ্গাশিবিরের বাসিন্দারা। তারা জানান, হঠাৎ অনেক মানুষকে এক সাথে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়ায় সব সমস্যা দ্রুত সমাধান করাও সম্ভব নয়। কিন্তু ভালো পানি ও পর্যাপ্ত ল্যাট্রিনের ব্যবস্থাটা দ্রুত করে দিতে পারলে ভালো হয়।

Check Also

আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।