নির্বিষ বোলিংয়ে রান পাহাড়ে চাপা পড়ার পর ব্যাটিংয়েও নড়বড়ে শুরু। পচেফস্ট্র–মে আরেকটি হতাশার দিন কাটল বাংলাদেশের।
ডিন এলগার (১৯৯) ও হাশিম আমলার (১৩৭) সেঞ্চুরিতে তিন উইকেটে ৪৯৬ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করার পর সেই রানপ্রসবা উইকেটেই মাত্র ৩৬ রানে দুই উইকেট খুইয়ে বসে বাংলাদেশ।
শেষ পর্যন্ত তিন উইকেটে ১২৭ রানে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয়দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে সাত উইকেট হাতে রেখে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে এখনও ৩৬৯ রানে পিছিয়ে মুশফিকরা।
দলের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক ২৮ ও তামিম ইকবাল ২২ রানে অপরাজিত। এ দু’জন বড় ইনিংস খেলতে না পারলে পচেফস্ট্র–ম টেস্টে হার এড়ানো খুব কঠিন হয়ে যাবে বাংলাদেশের জন্য।
টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ওপেনিংয়ে নামতে পারেননি তামিম ইকবাল। চা-বিরতির আগে ফিল্ডিংয়ের সময় প্রায় ৫০ মিনিট মাঠের বাইরে ছিলেন তামিম।
চা-বিরতির ফাঁকেই হুট করে ইনিংস ঘোষণা করে বসে দক্ষিণ আফ্রিকা। নিয়ম অনুযায়ী তামিম যতক্ষণ মাঠের বাইরে ছিলেন ঠিক ততক্ষণ ব্যাটিংয়ে নামতে পারবেন না তিনি।
বাধ্য হয়ে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে প্রথমবারের মতো টেস্টে ওপেন করতে নামেন লিটন দাস। শুরুতেই ধাক্কা। ষষ্ঠ ওভারে কাগিসো রাবাদার শর্ট বল সামলাতে পারলেন না ইমরুল।
বল তার গ্লাভসে লেগে গালিতে মার্করামের হাতে জমা হয়। দুঃসময় আরও দীর্ঘায়িত করে সাত রানে ফিরলেন ইমরুল। শেষ ১৬ ইনিংসে মাত্র একটি ফিফটি রয়েছে তার।
১৪৬ ওভার কিপিংয়ের ক্লান্তি নিয়ে ওপেনিংয়ে নামা লিটন ভালোই খেলছিলেন। ১১তম ওভারে মরনে মরকেলের অফ-স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে তিনিও ফিরলেন ২৫ রানে।
এরপর তৃতীয় উইকেট জুটিতে একটু প্রতিরোধ। মুমিনুল হকের সঙ্গে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের ৬৭ রানের জুটি আশার আলো দেখাচ্ছিল দলকে।
কিন্তু ছয় ও ১৫ রানে কেশভ মহারাজের বলে দু’বার জীবন পেয়েও ফিফটির আগেই থামতে হল মুশফিককে। সেই মহারাজের বলেই ৪৪ রানে আউট বাংলাদেশ অধিনায়ক।
এরপর দিনের বাকিটা সময় নিরাপদেই পার করে দেন মুমিনুল হক ও পাঁচে নামা তামিম ইকবাল। এ দু’জনের দিকেই আজ তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।
বোলিংয়ে বাংলাদেশের সাফল্য বলতে দ্বিতীয়দিনের দ্বিতীয় সেশনে পাওয়া দুই উইকেট। তাতে অবশ্য রান পাহাড়ের পথে দক্ষিণ আফ্রিকার অগ্রযাত্রা এতটুকু ব্যাহত হয়নি।
ডিন এলগার ও হাশিম আমলার বিদায়ের পর চা-বিরতির আগে চতুর্থ উইকেটে ৫১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন টেম্বা বাভুমা ও ফাফ ডু প্লেসি।
এরপর চা-বিরতির সময়ই তিন উইকেটে ৪৯৬ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৪৬ ওভার বোলিং করে মাত্র দুটি উইকেট নিতে পেরেছেন বাংলাদেশের বোলাররা।
উইকেট দুটি ভাগাভাগি করে নিয়েছেন দুই পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ও শফিউল ইসলাম। স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ৫৬ ওভারে ১৭৮ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।
আগেরদিন ৯৭ রানে রানআউট হয়েছিনে অভিষিক্ত ওপেনার আইডেন মার্করাম। এরপর এলগারের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন আমলা।
আগেরদিন তারা যেখানে শেষ করেছিলেন, দ্বিতীয়দিনটা শুরু করেন ঠিক সেখান থেকেই। প্রথম সেশনে এ জুটিতে ভাঙন ধরাতে পারেনি বাংলাদেশ। দু’জনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে অনায়াসে ঘুরেছে রানের চাকা।
বাংলাদেশের নির্বিষ বোলিংয়ের বিপক্ষে তাদের ব্যাটিং হয়ে ওঠে আরও ক্ষুরধার। ৬৮ রানে দিন শুরু করা আমলা প্রথম সেশনেই তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২৭তম টেস্ট শতক।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে তার চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি রয়েছে শুধু জ্যাক ক্যালিসের (৪৫)। লাঞ্চের পর শফিউলের করা প্রথম বলেই মিরাজকে ক্যাচ দিয়ে ১৩৭ রানে থামেন আমলা। ভাঙে ২১৫ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। আমলার বিদায়ের পর ডাবল সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাওয়া ডিন এলগার শেষ পর্যন্ত পুড়েছেন এক রানের আক্ষেপে। ১৯৯ রানের মাথায় মোস্তাফিজের কাটারে বিভ্রান্ত হয়ে মিডউইকেটে মুমিনুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন প্রোটিয়া ওপেনার। টেস্ট ইতিহাসের মাত্র দশম ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৯৯ রানে আউট হলেন এলগার।
দুর্ভাগাদের এ তালিকায় আরও দু’জনের নাম যোগ করা যেতে পারে। জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও শ্রীলংকার কুমার সাঙ্গাকারা ১৯৯ রানে অপরাজিত ছিলেন।
এলগারের বিদায়ের পর টেম্বা বাভুমা (৩১*) ও অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসির (২৬*) ব্যাটিংয়ে লক্ষ্য করা যায়নি রান বাড়ানোর তাড়া। এ জন্য চা-বিরতির সময় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস ঘোষণা ছোটখাটো চমক হয়ে আসে।
দ্বিতীয় সেশনে ফিল্ডিংয়ের সময় প্রায় ৫০ মিনিট মাঠের বাইরে ছিলেন তামিম। নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতে তিনি ব্যাটিংয়ে নামতে পারবেন না, সেটা বুঝেই হয়তো হুট করে চা-বিরতির সময় ইনিংস ঘোষণা করে বসে দক্ষিণ আফ্রিকা। চমকটা বাংলাদেশের জন্য বড় ধাক্কা হয়েই আসে।