টাঙ্গাইলের বাসাইলে আনিছুর রহমান সোনা মিয়া (৬৫) নামে এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষণের শিকার হয়ে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ৪ সন্তানের জনক আনিছুর রহমান সোনা মিয়া উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের নথখোলা গ্রামের মৃত মইনউদ্দিনের ছেলে। ২০০৩ সাল থেকে নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পেয়ে আসছিল তিনি। ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রী করটিয়া আবেদা খানম গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী। এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে মিমাংসার কথা বলে সপ্তাহ পার করলেও কোন প্রতিকার না পেয়ে পরিবারটি সোমবার রাতে বাসাইল থানায় মামলা দায়ের করেছে। ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীর পরিবার এবং মামলা সূত্রে জানা যায়, স্বামী পরিত্যক্তা হওয়ায় বিভিন্ন সময় টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করতো অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা সোনামিয়া। এ বছর মার্চ মাসে ধর্র্ষিতা স্কুলছাত্রীর মা গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে মেয়েকে মুক্তিযোদ্ধা সোনা মিয়ার বাড়িতে এক হাজার টাকার জন্য পাঠায়। থাকার ঘর থেকে টাকা এনে দেয়ার কথা বলে নির্জন বাড়িতে সোনা মিয়া স্কুলছাত্রীকে ঘরের ভিতর নিয়ে যায় এবং জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এসময় মেয়েটি চিৎকার করলে তার মুখে কাপড় গুজে দিয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের বিষয়টি কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয় ছাত্রীকে। সম্প্রতি ছাত্রীর শারীরিক পরিবর্তন দেখে তার পরিবার এবং প্রতিবেশীরা পেটে পাথর জাতীয় কিছু হয়েছে এমন ধারণায় গত ১লা অক্টোবর করটিয়ার একটি ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করায়। রিপোর্টে ডাক্তার ছাত্রীটি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে জানায়। রিপোর্ট পাবার পর ওই দিন রাতে ছাত্রী তার পরিবারের কাছে ধর্ষণের বিবরণ দেয়। রাতেই অন্তঃসত্ত্বা হবার বিষয়টি অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা সোনা মিয়াকে জানালে সে পেটের সন্তানটিকে নষ্ট করা জন্য এক লাখ টাকা দিয়ে মিটমাট করার প্রস্তাব দেয়। ধর্ষিতা ছাত্রী জানায়, সোনা মিয়া জোরপূর্বক ধর্ষণ করার সময় আমি চিৎকার করার চেষ্টা করলে মুখে কাপড় গুজে দেয় এবং বিষয়টি কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তাই কাউকে জানাইনি। আলট্রাসনোগ্রামের পর সবাই জেনে গেছে। সে আমাকে ও মাকে মেরে ফেলবে। ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীর মা বলেন, এই মেয়ে পেটে আসার পর স্বামী অন্যজনকে বিয়ে করে আমাকে ছেড়ে চলে যায়। তখন থেকে আমি ভাইয়ের সংসারে থাকি। মেয়েটা লেখাপড়ায় ভাল হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা সোনা মিয়া বিভিন্ন সময় টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করতো এবং মুক্তিযোদ্ধার ক্ষমতায় মেয়েটিকে চাকরি নিয়ে দিবেন বলে বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতো। এবছর মার্চ মাসে আমি ভীষণ অসুস্থ হলে এক হাজার টাকা ধারের জন্য ওই বাড়িতে পাঠালে সোনা মিয়া জোরপূর্বক আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে এবং বিষয়টি কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আনিছুর রহমান সোনা মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল নাম্বারও বন্ধ পাওয়া গেছে। তার স্ত্রী মালেকা বেগম জানান, উনি পালিয়ে গেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন, ওই ছাত্রীর বাড়ি পরিদর্শন করেছি। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক নাসিম বলেন, থানায় মামলা দায়ের করেছে ভিকটিমের পরিবার। আজ মঙ্গলবার ছাত্রীর মেডিকেল সম্পন্ন হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২২ ধারা মোতাবেক জেলা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমিনুল ইসলামের আদালতে ভিকটিমের জবানবন্দী নেয়া হয়েছে। আসামী গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে।
Check Also
প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …