কেএম আনিছুর রহমান,কলারোয়া ::
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাতক্ষীরা-১ (তালা ও কলারোয়া) আসনে তৎপরতা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মহাজোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে এ আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীক নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনে তাকে হটিয়ে এ আসনে নিজেদের মধ্য থেকেই প্রার্থী দেওয়ার তোড়জোড় চালাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামী থেকে এ আসনের একক প্রার্থী অনেকটা চূড়ান্ত হয়েই আছে।
ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ধরে নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। বর্তমান কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত হাবিবুল ইসলাম ছাড়া এখন পর্যন্ত বিএনপির আর কোনো সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না। তাই দলীয় মনোনয়ন নিয়ে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের চিত্র ঠিক বিপরীত। ২০০৮ সালে বিএনপির হাবিবকে হারিয়ে এ আসনের সংসদ সদস্য হন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান। ২০১৪ সালে জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুস্তফা লুৎফুল্লাহ মনোনয়ন পান এবং নির্বাচিত হন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য আশানুরূপ উম্নয়ন করতে পারেননি। তার মদদে আওয়ামী লীগের মধ্যেও কোন্দল মাথাচাড়া দিয়েছে। তাই তালা-কলারোয়ার আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাই তার ওপর ক্ষুব্ধ। আগামী নির্বাচনে তাই তাকে হটিয়ে দলীয় প্রার্থীর দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন তারা।
দায়িত্বশীল কয়েক নেতা জানান, গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হতে পেরেছেন। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে বর্তমান সংসদ সদস্য ভোটের লড়াইয়ে টিকতে পারবেন না বলে সংশয় রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা-কর্মী তার পক্ষে না থাকায় জোটের প্রার্থী হিসেবেও খুব একটা সুবিধা তিনি পাবেন না বলেও মনে করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
এমন প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত সৈয়দ কামাল বখত ছাকির ছেলে ফিরোজ কামাল শুভ্র, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সরদার মুজিব, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স ম আলাউদ্দীনের মেয়ে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লায়লা পারভীন সেঁজুতি, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন এবং জাতীয় পার্টির সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত। তারা প্রত্যেকেই মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ আসনে জামায়াতে ইসলামীরও রয়েছে শক্ত অবস্থান। যদিও দশম জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার পর মামলা-হামলায় সাংগঠনিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ধর্মভিত্তিক এ সংগঠন; কিন্তু আগামী নির্বাচন ঘিরে নীরবে তাদের তৎপরতা চলছে বলে জানা গেছে। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ইজ্জত উল্লাহকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, গত নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত এ এলাকায় যে তান্ডব চালিয়েছে তা বন্ধ করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি আরও বলেন, তার মেয়াদকালে প্রতিশ্রুতির চেয়ে বেশি কাজ হয়েছে, এলাকার দৃশ্যপটের উম্নতি হয়েছে, তালা-কলারোয়াবাসীর জীবনমান উম্নত, সহজ ও আরামদায়ক হয়েছে। তাই আগামীবারও তিনি মনোনয়ন পাবেন এবং নির্বাচিত হবেন বলে আশাবাদী এ জনপ্রতিনিধি। আওয়ামী লীগের কোন্দলের জন্য তিনি দায়ী নন বলেও দাবি করেন লুৎফুল্লাহ।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য নেতাদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, গত নির্বাচনে জোটের নির্বাচনের হিসাব মেলাতে গিয়ে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। তার পরও তিনি নিজস্ব উদ্যোগে স্থানীয় বাসিন্দা ও দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছেন। তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। আগামী নির্বাচনে তাই মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী সাবেক এ সংসদ সদস্য।
জেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সরদার মুজিব বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের পাশে আছি। এলাকাবাসীর উম্নয়নের লক্ষ্যে নানা উদ্যোগে অংশ নিচ্ছি। সরদার মুজিবের আশা, আগামী নির্বাচনে নেত্রী তাকে মূল্যায়ন করবেন। গত নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়েছেন সরদার মুজিব। যদিও তার দাবি, দলকে সুসংহত করতেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথমে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে প্রতীক বরাদ্দের চিঠিও পান। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জোটের হিসাব মেলাতে গিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। শেখ নূরুল ইসলাম জানান, গত নির্বাচনে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। এরপর নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে আগামী নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলে দাবি করে শেখ নূরুল ইসলাম বলেন, আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার এবং বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে অদ্যাবধি তালা-কলারোয়ার সব নেতা-কর্মীর সঙ্গে তার আত্মার বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। আগামী নির্বাচনে নেত্রী সদয় হয়ে তাকে মনোনয়ন দিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে দাবি করেন তিনি।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত বলেন, তিনি মন্ত্রী থাকা অবস্থায় এ এলাকার ব্যাপক উম্নয়ন করেছেন। আগামীবার নির্বাচিত হয়ে আবারও এলাকাবাসীর জন্য কাজ করতে চান। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অনুমতি নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান সৈয়দ দিদার বখত।
বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের একক প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়, তাহলে এ আসনটি বিএনপির দখলে থাকবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
####