সমুদ্রের গুপ্তধন ‘ঝাল মরিচ’ দৈনিক ২৫ কোটি টাকা আয়!

রং বেরংয়ের টিকিট। টিকিটের নামেও আকর্ষণ ‘সমুদ্রের গুপ্তধন’, ‘ঝাল মরিচ’ এবং ‘১০ গুণ বেশি ভাগ্যবান’।

চীনের তৈরি স্ক্র্যাচ কার্ডের টিকিট। ঘষে একই ধরণের তিনটি নম্বর আসলে ওই নম্বরের সমপরিমাণ পুরস্কার দেওয়া হবে টিকিট ক্রেতাকে। অথচ তিনটি ছবিই কখনো মিলে না বলে স্বীকার করেছেন স্বয়ং ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মরতরা।
‘সমুদ্রের গুপ্তধন’ টিকিটের ২০ টাকা, ‘ঝাল মরিচ’ এর দাম ৫০ টাকা এবং ‘১০ গুণ বেশি ভাগ্যবান’ টিকিটের দাম ১০০ টাকা। ২০ টাকার লটারিতে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার থেকে সর্বনিম্ন ২০ টাকা, ৫০ টাকার লটারিতে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ  থেকে সর্বনিন্ম ৫০ টাকা এবং ১০০ টাকার লটারিতে ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকার পুরস্কার দেওয়ার কখা লেখা আছে।

এভাবে ভূয়া লটারি বিক্রি করে দৈনিক ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা আয় করার অভিযোগ উঠেছে একটি প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে। এই চক্রের প্রধান চীনা এক প্রকৌশলী নাগরিক। প্রতারণার জাল বিস্তৃত নাইজেরিয়া থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত। বাংলাদেশে চক্রটি পেট্রো-নজরুল বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিবিডিএফ) নামে প্রতারণার কার্যক্রম চালাচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর দক্ষিণ খুলশীর এক নম্বর সড়কের গৌরি ভবনের পঞ্চম তলায় পিবিডিএফ নামক সংস্থার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে চীনা নাগরিকসহ ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে অভিযান চালায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও নগর গোয়েন্দা পুলিশ। আটক ১২ জনের মধ্যে আছেন চীনের নাগরিক শেন জিয়াং (৩৬)। বাকি ১১ জন বাঙালি, এর মধ্যে দুজন নারী। পিবিডিএফ এ কর্মকর্তা-কর্মচারীও আছে বলে জানা যায়।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি-বন্দর) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই সংঘবদ্ধ চক্রটি লটারি বিক্রি করে। গরিব-শ্রমজীবী মানুষকে লাখ লাখ টাকার লোভ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতিদিন সারা দেশে চক্রটি ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি করে। এই টাকার ১০-১৫ শতাংশ তারা পুরস্কার বাবদ ব্যয় করে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি-বন্দর) আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, ‘২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে তারা চারবার কার্যালয় পরিবর্তন করে। ৪১টি খুচরা দোকানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড, আকবর শাহ, তুলাতলী, ফয়সলেক, বাকলিয়াসহ গরিব-শ্রমজীবী মানুষের তারা এসব টিকেট বিক্রি করে। আটককৃতদের ১২ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ’

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, ‘শেন জিয়াং একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। দুই মাস পরপর তিনি বাংলাদেশে আসেন। এভাবে আরও ১১ জন চীনের নাগরিক আছেন যারা বাংলাদেশে অবস্থান করে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। প্রতিষ্ঠানটির মূল অফিস ঢাকার বনানীতে। বিক্রিত টিকিট চীন থেকে মুদ্রিত। পিবিডিএফ নামে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোল্লা নজরুল ইসলাম। তার নামে জারি হওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স এবং টিআইএন সনদের কপি বাঁধাই করে ওই প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে টাঙানো হয়েছে। ’

Check Also

‌‘আ.লীগ-বিএনপি বা যে কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা জামায়াতের নেই’

বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।