আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন
জাতীয় পতাকা একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। বহু ত্যাগ-তিতীক্ষা ও সংগ্রামের মাধ্যমে এটা অর্জন করতে হয়। তেমনি জাতীয় সংগীত একটি জাতির প্রাণের স্পন্দন, জাতির আবেগ, সংগ্রাম ও ভালোবাসার সুর স্পন্দিত হয় তার মাধ্যমে। জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত যেকোন রাষ্ট্রের মূল্যবোধ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নৈতিকতার পরম আধার।
শিশুমন কোমলমতি মন। এই কোমল হৃদয়ে উপযুক্ত শিক্ষক মহাকাব্য গেঁথে দিতে পারে। কোমলমতি এইসব হৃদয়গুলো জাতির মহীরুহ হয়ে উঠতে পারে। প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর মননে, হৃদয়ে বড় প্রভাব ফেলে। জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের শিক্ষা একটি শিশুকে সুনাগরিক হতে উদ্বুদ্ধ করে। প্রাথমিক শিক্ষায় এই মূল্যবোধের দীক্ষা থাকা বাঞ্ছনীয়। শিশুদের কৌতূহলী মনকে যদি একটি জাতির সংগ্রাম, স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বের বীরত্বগাথা দিয়ে গেঁথে দেয়া যায় তবেই শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য অর্জিত হবে। প্রাথমিক শিক্ষার স্তরে এই বিষয়গুলোর চর্চা থাকা দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের জন্য কল্যাণকর। কেননা শিশুর মননে চেতনে হৃদয়ে যে শিক্ষা ভিত্তি গড়বে সেই শিক্ষাই তার জীবনকে পরিচালিত করবে। জাতীয় পতাকা ও সংগীতের ইতিহাসের গল্প, সংগ্রামের গল্প, বীরত্বের মহাকাব্যের গল্প শিখানো অত্যন্ত জরুরী, তবেই রাষ্ট্র একটি কল্যাণকামী, দেশপ্রেমী সুনাগরিক পাবে। লাল সবুজের পতাকা আমাদের পরিচয়। সবুজ আর লাল রং বহন করে এক তারুণ্যের উদ্দীপনা। বাংলা মায়ের লক্ষ সন্তানের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র পেলাম। লাখো বাঙালির চেতনা ধরে রাখা জাতীয় পতাকা, আমাদের ভালবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতীক। এর ভেতরে লুকিয়ে আছে আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের স্বপ্ন, আমাদের চেতনা, আমাদের অস্থিত্ব। হাজারো ত্যাগ-তিতীক্ষার বিনিময়ে অর্জিত এই পতাকা আমাদের চোখের সামনে নিমিষেই তুলে ধরে আমাদের প্রিয় জনভূমিকে। যে জন্মভূমিকে আমারা প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। জন্মভূমির প্রতি এই ভালবাসা মানেই আমাদের পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। কারণ, লাল-সবুজের এই পতাকা আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক আমাদের বিজয়ের প্রতীক।
অপরপক্ষে, ‘আমার সোনা বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই অনবদ্য সৃষ্টি আমাদের জাতীয় সংগীত। এই গানের মাধ্যমে ফুটে উঠে আবহামান বাংলার সৌন্দর্য। মাঠে, ঘাটে, পথে-প্রান্তে ছড়িয়ে আছে বাংলা মায়ের রূপ। এই বাংলার জল, এই বাংলার বাতাস, এই বঙ্গের মানুষদের লালন করে আসছে সেই হাজার বছর ধরে। এই গানের মধ্য দিয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। দেশের প্রতি, এই বাংলা মায়ের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।
বাঙ্গালি জাতির হাজার বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাস, সংগ্রাম, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের আবেগের বহি:প্রকাশ তার জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত। যে পতাকা তাকে আচ্ছাদিত করে, যেই সংগীত তাকে আবেগে তাড়িত করে সুরের মুর্ছনায় তাকে কখনো ভুলবার নয়।’
এই গৌরবের শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই গ্রহন করার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের নৈতিক কর্তব্য। প্রাথমিক শিক্ষায় এই জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের চর্চা অত্যবশাক। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছত্রীরা আগামীর ভবিষ্যত। তাদের মধ্য ছোটবেলা থেকেই এই বাংলা মায়ের সবুজ পরিবেশ, সেই সাথে রক্তাক্ত ইতিহাসের শিক্ষা দিয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে। আর এই জন্য তাদেরকে জানাতে হবে, পরিচিত করাতে হবে, সেই সাথে উপলব্ধি জাগ্রত করাতে হবে এই লাল-সবুজের পতাকাকে। নিয়মিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে শিশুমনে স্বদেশপ্রেম জাগ্রত হয়। তাই প্রাথমিক শিক্ষায় জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত চর্চার শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। লেখক: জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা
Check Also
সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। …