বিশেষ প্রতিনিধিঃসাতক্ষীরাঃ তিন দশকের ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরায় জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী। তারা এলাকায় সর্বমহলের সার্থে মিলে মিশে রাজনৈতিক চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে দলটির নেতাকমর্রিা অনেকা কোণ ঠাছা। প্রকাশ্যে দলের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে না পারলেও গোপনে দলটির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। সাতক্ষীরাতে জামায়াতের শক্ত অবস্থানে কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে সূত্য জানান।
ঐতিহাসিক কারণও রয়েছে। জেলার রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিরা বিশেষভাবে সাতচল্লিেিশর ভারত বিভক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, তখনো এ জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল হিন্দুরা। তারা এলাকা ছেড়ে যেতে শুরু করলে তাদের জায়গায় এসে বসবাস শুরু করে অভিবাসী মুসলমানরা। ঐতিহ্যগতভাবে এই অভিবাসীদের মধ্যে প্রবল ভারতবিদ্বেষ রয়েছে।
সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এখানে সব কয়টি আসন পেলেও আওয়ামী লীগের বিরোধীপক্ষ নেহাত কম ভোট পায়নি। স্থানীয় একাধিক রাজনীতিক জানান, পরিস্থিতি একেবারে বদলে যায় পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিকশিত হতে থাকে ধর্মীয় রাজনীতি।
১৯৭৯ সালের (জিয়াউর রহমানের আমলে) জাতীয় নির্বাচনে সাতক্ষীরার তিনটি আসনে মুসলিম লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেন। ওই নির্বাচনে সাতক্ষীরা সদর আসনে খান এ সবুর জয়লাভ করেন।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) জেলা শাখার সংগঠক আজাদ হোসেন বলেন, জাতীয় রাজনীতিতে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে আসা মুসলিম লীগের বিপর্যয়ের ওপরই নিজেদের ভিত গড়তে শুরু করে জামায়াত। প্রথমে মুসলিম লীগ সমর্থকদের দলে টানে তারা। তাদের দিয়েই জেলাব্যাপী শক্তিশালী একটি ঘাঁটি তৈরি করতে সক্ষম হয় জামায়াত। তখন থেকেই জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় জেলায় একের পর এক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এ জেলা ২৭৪টি মাদ্রাসা রয়েছে।
১৯৮৬ সালের নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে জামায়াতের আনসার আলী এবং সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে কাজী শামছুর রহমান নির্বাচিত হন। কাজী শামছুর রহমান একাত্তরে সাতক্ষীরায় শান্তি কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন। পরে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে তিনি সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসন থেকে নির্বাচিত হন।
সাতক্ষীরা তালা কলারোয়া আসনের বর্তমান এমপি মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, ১৯৮৬ সালের নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো সাতক্ষীরায় জামায়াতের ব্যাপক উত্থানটি স্পষ্ট হয়। এর আগে থেকেই সাতক্ষীরায় জামায়াত তাদের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। আর্থিকভাবে সহযোগিতা দিয়ে খেটে খাওয়া মানুষকে দলে টানে। তবে ওই নির্বাচনের পর বিভিন্ন অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষুদ্রঋণ পাইয়ে দিয়ে মাঠপর্যায়ের জামায়াতের নেতা-কর্মীদের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে তুলেছে তারা।
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সাতক্ষীরার পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটি আসনেই জামায়াতের প্রার্থী জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে একমাত্র সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে কাজী শামছুর রহমান নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে আবার সাতক্ষীরা ২, ৩ ও ৫ এই তিনটি আসন পায় জামায়াত।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরায় পাঁচটি আসনের বদলে চারটি আসন করা হয়। এ নির্বাচনে জামায়াত কোনো আসন পায়নি। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি দুটি করে আসনে জিতেছিল।
তবে তারা নির্বাচিত হয়ে উপদলীয় কোন্দল ও স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগে যেমন অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে, তেমনি যোজন দূরত্ব রয়েছে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির মধ্যে। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ যখন জিতে তখন সবাইকে পর করে দেয়।’ তিনি আত্মসমালোচনা করে বলেন, ‘আমরা বামপন্থীরাও অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছি।’
সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি, দেবহাটা ও কালীগঞ্জের একাংশ) আসন থেকে নির্বাচনে আট হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন সদ্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক। এর আগে ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি ওই আসন থেকে প্রথমবার নির্বাচন করে চার হাজার ভোটের জন্য হেরে যান। মূলত ওই নির্বাচনের আগেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।
২০১৩ সালের ইউপি নির্বাচনে জেলার সাতটি উপজেলার ৭৮টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬টি, বিএনপি ৩০টি, জামায়াত ২৭টি এবং জাতীয় পার্টি পাঁচটিতে নির্বাচিত হয়। এ ছাড়া সাতক্ষীরা ও কলারোয়া পৌরসভা দুটিতে পর পর দুবার বিএনপির সমর্থকেরা মেয়র নির্বাচিত হন।
২০১৩ সালের সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের একজন এবং বিএনপি-জামায়াতের ১৩ জন চেয়ারম্যান ছিল। তালায় ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ, বাকি ১০টিতে জামায়াত-বিএনপির সমর্থকেরা চেয়ারম্যান। কলারোয়ার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের তিনটি, বাকি নয়টিতে জামায়াত-বিএনপির সমর্থকেরা চেয়ারম্যান। দেবহাটায় পাঁচটির মধ্যে আওয়ামী লীগের দুজন ও জামায়াতের তিনজন চেয়ারম্যান। কালীগঞ্জে ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে জামায়াত-বিএনপির নয়জন এবং আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির তিনজন চেয়ারম্যান। শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০ জন জামায়াত-বিএনপি ও দুজন আওয়ামী লীগের সমর্থক চেয়ারম্যান রয়েছেন। আশাশুনিতে ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে আটটিতে আওয়ামী লীগ এবং বাকি চারটিতে জামায়াত-বিএনপির চেয়ারম্যান।
তবে পরবর্তি নির্বাচন গুলাতে জামায়াতের হাতে গোনা কয়েকটি ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। দলটির এক র্শীষ নেতা জানান নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সাতক্ষীরার সবকটি আসনে জামায়াত নির্বাচিত হবে।
Check Also
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে : অ্যাটর্নি জেনারেল
র্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল …