২০ কূটনীতিকের রাখাইন সফর নিয়ে কানাডায় ক্ষোভ

মিয়ানমার সরকারের তত্ত্বাবধানে ২০ দেশের কূটনীতিকদের রাখাইন সফরে নিয়ে যাওয়া নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার গ্রুপগুলো এমন সফর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কারণ, ওই সফর আয়োজন করেছিল মিয়ানমার সরকার। কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ। ফলে তারা স্বাধীনভাবে আক্রান্ত রাখাইন পরিদর্শন করতে পারেন নি বলে অভিযোগ মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো। স্বাভাবিকভাবেই সরকারি এমন সফরের সময় সরকার তার নিজের প্রপাগান্ডা চালানোর চেষ্টা করে। তারা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। যে অঞ্চলে তারা নৃশংসতা চালিয়েছে সে এলাকায় কূটনীতিক বা পর্যবেক্ষকদের প্রবেশ করতে দেয় না। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতাকে জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ ও কানাডা। ফলে কানাডায় এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বার্তা সংস্থা এপি’কে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে কানাডার পত্রিকা দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল। এতে বলা হয়, রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সীমাহীন নৃশংসতা চালানো হয়েছে। নৃশংসভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ২০ জন কূটনীতিককে রাখাইনের এক প্রত্যন্ত এলাকা সফরে নিয়ে যায় মিয়ানমার সরকার। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য কূটনীতিকদের এই সফরকে সরকার প্রপাগান্ডা হিসেবে ব্যবহার করবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কানাডা শাখার পরিচালক ফরিদা ডেইফ বলেন, এমন সফর অত্যন্ত সমস্যাবহুল। কারণ, সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগ আছে। আমরা তো সেসব নির্যাতনের ঘটনা দেখেছি। গত মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে স্থল বোমা পুঁতেছে। রোহিঙ্গা বিষয়ক বার্তা সঙস্থাগুলো বলেছে, রাখাইনে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে বর্ডার গার্ডরা। তারা গণধর্ষণ করেছে। ২০১৬ সালের শেষের দিকেও তারা একই কাজ করেছিল। এতে আরো বলা হয়েছে, ২০০৮ সালের সংশোধিত সংবিধানের অধীনে নেত্রী অং সান সুচির হাতে নিরাপত্তায় কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বর্ডার গার্ড পুলিশ রিপোর্ট করে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আর এই মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে সেনাবাহিনী। কূটনীতিক, সাংবাদিক বা মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলোর জন্য রাখাইনে প্রবেশাধিকার অতি মাত্রায় সীমিত। এরই প্রেক্ষিতে, কানাডা সরকারের এক কর্মকর্তা বলেছেন, মিয়ানমার সরকারের আয়োজনে ওই এলাকা পরিদর্শনে যাওয়া ছিল একমাত্র উপায়। কানাডা শাখা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাপরিচালক অ্যালেক্স নেভে বলেন, যদি এমন মিশনে মিয়ানমার সরকার তার সংগঠনকে আমন্ত্রন জানাতো তাহলে তারা কখনোই তাতে রাজি হতেন না। কিন্তু একজন কূটনীতিক সেই আমন্ত্রণ অগ্রাহ্য করতে পারেন না। সব সময়ই কূটনীতিকদেরকে সরকারের চ্যানেলের সঙ্গে থেকে কাজ করতে হয়। তাই এ সফর তাদের জন্য কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। এই সফরে কানাডার রাষ্ট্রদূত ছাড়াও ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানির রাষ্ট্রদূত। সফরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। এরপর তারা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে তাদের কথা উল্লেখ করা হয় নি। মিয়ানমারের পরিস্থিতিতে কানাডা সম্প্রতি যে বিবৃতি দিয়েছে এটা তার ব্যত্যয়। কানাডা সরকার ওই বিবৃতিতে সরাসরি রোহিঙ্গাদের কথা উল্লেখ করেছিল। ফরিদা ডেইফ বলেন, কূটনীতিকদের বিবৃতির সঙ্গে সরকারের বিবৃতির এই ফারাক থেকে একটি কথা উঠে আসতে পারে। তা হলো, অটোয়া সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ওই নিন্দা জানিয়েছে। এটা অত্যান্ত ভয়াবহ এক বার্তা দেয়। তবে কানাডা সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, মিয়ানমারে অবস্থান করে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ করা খুবই স্পর্শকাতর। কারণ, তাদেরকে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হয়।

Check Also

পরপর পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় দেশজুড়ে নতুন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি

(২৫ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে মধ্যরাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের আগে রাজধানীর ইস্কাটন এলাকায় সচিব …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।