তদন্তে অগ্রগতি নেই সাতক্ষীরার চুরি ও হত্যা মামলার

 এভিএএসডেস্করিপোট: সাতক্ষীরার চাঞ্চল্যকর যুবলীগ নেতা রাসেল কবীর, ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল হাসান ইমন হত্যা ও শহরের আধুনিক জুয়েলার্সে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তদন্তে অগ্রগতি নেই।
সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল রাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের কুচপুকুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা রাসেল কবীরকে(৪০) শহরের রাজারবাগান এলাকায় ভাড়া বাসার সামনে দুর্বৃত্তরা  উপর্যুপরি গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় ১১ এপ্রিল তার মা আমেনা খাতুন বাদি হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরদিন পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে এ মামলায় আরো চারজনকে গ্রেফতার করেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা  সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক সেকেন্দার আলী। একজন এ মামলায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। যদিও পরবর্তীতে মামলার তদন্তভার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহম্মেদ নিজেই দায়িত্ব নেন।
সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খুলনা কমার্স কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শহরের সুলতানপুরের শেখ হাসিবুল হাসান ইমনের লাশ সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের কামারডাঙা স্লুইজ গেটের সন্নিকটে আমতলা বিলের ইকবাল বিশ্বাসের মাছের ঘের থেকে উদ্ধার করা হয়। এর আগের দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে চাচা আলমগীর হাসান আলমের সঙ্গে দেখা করার পর বাড়িতে যেয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলে বড় বাজার হয়ে অন্যত্র চলে যায় ইমন। মৃত্যুর ঘটনায় ১৮ জানুয়ারি তড়িঘড়ি করে কারো নাম উল্লেখ না করে চাচা আলমগীর হাসান আলম বাদি হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় বাদির ইশারায় ইকতিয়ার হোসেন বিপ্লব, মোস্তাফিজুর রহমান মুরাদ ও মাস্তাফিজুর মোল্লা ওরফে রনি মোল্লাকে গ্রেফতার করেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আলমগীর কবীর। চাচা আলমগীর হাসান আলমের বিছানার জাজিমের তলা থেকে গত বছরের এপ্রিল মাসে আড়াই লাখ চুরি করে খুলনায় অবস্থান করা, বিক্রি করার জমির পৈতৃক অংশের টাকা দাবি, পরবর্তীতে পারিবারিক জমি নিয়ে নকশা অনুযায়ি দাবিকৃত জমি ও দহকুলা এলাকায় মাছের ঘেরের দাবিতে চাচা আলমগীর হাসান আলমের সঙ্গে বিরোধ চরম আকার ধারণ করার একপর্যায়ে ইমন নিহত হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পৈতৃক সম্পত্তি উদ্ধার করতে যেয়ে মাদকাসক্ত ও ঋণগ্রস্ত ইমনকে হত্যার বলি হতে হলো বলে অনেকেই মনে করেন। ছেলের মৃত্যু সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলে সাংবাদিকদের সঙ্গে নিহত ইমনের বাবা ইকবাল আলম লিটন ও মা হোসনেআরার সঙ্গে কথা বলতে দেননি বাদির লোকজন।
পরিকল্পিতভাবে ছেলে মুরাদকে গ্রেফতার করানোর অভিযোগে আলমগীর হাসান আলমের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলেও ফিরে আসতে বাধ্য হন শাহ আলম। হত্যার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আশাশুনি থানায় ২০০২ সালের ২ জুন ০১ নং হত্যা মামলার ২৪নং চার্জশীটভুক্ত আসামী  আলমগীর হাসান আলম সাংবাদিকদের কাছে নিহতের সঙ্গে রনি মোল্লার স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্ক ও বিপ্লবের কাছ থেকে ইমন দেড় লাখ টাকা ঋণ করার কথা প্রচার দেন। একপর্যায়ে বাদির দিকে হত্যার তীর ওঠায় তড়িঘড়ি করে নিহতের পিতা ইকবাল আলম লিটনকে দিয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করানো হয়।
পরবর্তীতে মামলাটির তদন্তভার সাতক্ষীরা সিআইডিতে ন্যস্ত হয়। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এ মামলায় তদন্তভার বেশিদূর এগোয়নি। তবে তদন্তকারি কর্মকর্তা বাদিকে সন্দেহের উর্দ্ধে রাখেননি। যদিও আলমগীর হাসান আলম সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে ভাল মানুষ দাবি করে ভাইপো ইমন হত্যার ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি করে আসছেন।
এদিকে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দিবাগত রাত দু’ টোর দিকে সাতক্ষীরা শহরের রাধারনগর সড়কের আধুনিক জুয়েলার্সে দুঃসাহসিক চুরি হয়। চোর চক্রের সদস্যরা ৩১৫ ভরি সোনার গহনা ও আড়াই লাখ টাকা নিয়ে যায় বলে মালিক সুভাষ রায়ের দায়েরকৃত অভিযোগ তেকে জানা যায়। একইসাথে অদ্রি জুয়েলার্সে সাত ভরি সোনার গহনা চুরি হয়। এ দু’ টি ঘটনায় দু’টি মামলা হলেও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান অদ্রি জুয়েলার্সের মালিক গোপী শঙ্কর দে, নৈশ প্রহরী অলিউর রহমান, বকচরার নবাব আলী, বাকাল ইসলামপুরের মুকুল চোর, শহরের নিউ মার্কেটের সিটি জুয়েলার্সের মালিক আবুল হোসেন, তালা উপজেলার মাছিহারা গ্রামের রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করে।
১৭ জানুয়ারি মুকুল গ্রেফতার হওয়ার পর লুকিয়ে রাখা সোনার গহনা হাটের মোড়ের বলাকা অয়েল মিলের পাশ থেকে নিয়ে উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামানের কাছে দেয় বলে প্রকাশ্য আদালতে বিচারক হাবিবুল্লাহ মাহমুদকে জানায়। ৬ ফেব্রুয়ারি সুভাষ রায় মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পরিবর্তনের আবেদন করায় তদন্তভার পাইক দেলোয়ারের কাছে যাওয়ার আগেই ৯ ফেব্রুয়ারি রিমাকে নিয়ে মুকুল চোরের জবানবন্দি পরিবর্তন করান উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান।
যদিও ইমন হত্যা ও আধুনিক জুয়েলার্সে চুরির ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিদের্শে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে ছিলেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন মোল্লা, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আলমগীর কবীর, পুলিশ পরিদর্শক সেকেন্দার আলী ও উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান। তদন্তকারি টিমের নেতৃত্ব দেন সদর সহকারি পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক পাইক দেলোয়ার বলেন, তিনি আধুনিক জুয়েলার্সে চুরির মামলায় কোন সোনার গহনা উদ্ধার করতে পারেননি। তিনি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এমন এক সময়ে কয়েকদিন আগে তাকে বদলী করা হয়।
সিআইডি’র সাতক্ষীরার পুলিশ উপপরিদর্শক হাবিবুর রহমান জানান, ইমন হত্যা মামলার কোন অগ্রগতি নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহম্মেদ জানান, রাসেল কবীর হত্যা মামলায় শুকুর আলী, আইয়ুব আলী ও ইকবাল হোসেনসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । স্পর্শকাতর এ মামলাটি তদন্ত চলছে।

Check Also

সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ড (রাজারবাগান ও সরকারপাড়া ইউনিট) এর উদ্যোগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।