ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্ট অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ১৫ বৈশ্বিক ঝুঁকি

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আগামীতে ১৫টি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ বা ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বেকারত্ব। এরপরই রয়েছে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো।

মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ এবং সন্ত্রাসী হামলাও বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া এসব চ্যালেঞ্জ বা ঝুঁকি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে এবং প্রতিবছর নতুন নতুন ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

অথচ এগুলো মোকাবেলায় বাংলাদেশের যথাযথ প্রস্তুতি নেই। সম্প্রতি প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্টে (ডব্লিউইএফ) এসব তথ্য উঠেছে। দেশের ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে এ রিপোর্ট প্রস্তুত করে সংস্থাটি।

রিপোর্ট অনুসারে, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও বাড়ছে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব ঝুঁকি বা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রকাশিত রিপোর্টে আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ১৫টি বৈশ্বিক ঝুঁকি বা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বেকারত্ব, অবকাঠামো সমস্যা, সামাজিক অস্থিতিশীলতা, জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য, অভ্যন্তরীণ সুশাসন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার অ্যাটাক, তথ্য চুরি, দুর্বল আর্থিক খাত, বনজসম্পদ ধ্বংস, মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কাছে সম্পদ কুক্ষিগত হওয়া, বিদেশে টাকা পাচার, তথ্যগত দুর্বলতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

রিপোর্টে দেশের ভেতরে অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় যেসব সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে- আর্থিক সেবার ব্যয় অনেক বেশি, দক্ষতার অভাবে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, শেয়ারবাজারের আইনকানুনে কিছুটা উন্নতি হলেও এখন পর্যন্ত পুঁজি সরবরাহের বিকল্প উৎস হয়ে উঠতে পারেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দেশের অর্থনীতির বড় অংশই আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমদানি, রফতানি, রেমিটেন্স এবং বিদেশি বিনিয়োগ ও অনুদানের সঙ্গে সরাসরি বৈশ্বিক অর্থনীতি জড়িত। ফলে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে কোনো অভিঘাত এলে এর প্রভাব এড়ানো যায় না।

তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম উঠানামার সঙ্গে বৈশ্বির প্রবৃদ্ধি জড়িত। এতে প্রবাসীদের শ্রমের মূল্যের ওপর প্রভাব পড়ে। তার মতে, টাকা দেশের অর্থনীতির অন্যতম সমস্যা।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, যে হারে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে, তা দেশকে সংকটে ফেলতে পারে। তার মতে, পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও সুখকর অভিজ্ঞতা নেই। টাকা পাচার রোধে এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। আগামীতে তা আরও উঠানামা করতে পারে। বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতেও এর প্রভাব পড়বে।

এতে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রিপোর্ট অনুসারে ৭টি কারণে বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে টাকা পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম কারণ হল রাজনৈতিক অস্থিরতা।

এ ছাড়া রয়েছে ব্যবসায়িক পরিবেশের অভাব, দুর্নীতি, কালো টাকা, উচ্চ কর, দুর্বল শেয়ারবাজার, সহিংসতা এবং সরকারের নজরদারির অভাব।

অপরদিকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রকাশিত একটি ব্লগে বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হল রাশিয়ার অর্থনীতির অনিশ্চয়তা।

আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস ইস্যুতে সিরিয়া এবং ইরাকে রাশিয়ার ভূমিকা আগ্রাসী রয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়ার আগ্রাসী ভূমিকার কারণে পূর্ব ইউক্রেনে সংঘাত তৈরি হয়েছে।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে রক্ষায় রাশিয়া অব্যাহত সাপোর্ট দিয়েছে। ফলে সাময়িকভাবে কিছুটা বাহবা পেলেও দীর্ঘমেয়াদে অঞ্চলগুলোতে রাশিয়ার ক্ষমতা কমবে।

এ ছাড়া নিন্মমুখী জনসংখ্যার হার, মাদকের কারণে মৃত্যুর প্রবণতা এবং উৎপাদন ও উদ্ভাবনের পরিবর্তে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর দেশটির নির্ভরশীলতা বেশি। এসব কারণে রাশিয়ায় বিনিয়োগ কমছে।

বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের রিপোর্টে আরও বলা হয়, চীনের সংস্কার আগামীতেও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।

২০১৬ সালে চীনের জিডিপি ছিল ১৯ হাজার বিলিয়ন ডলার। আর আগামীতে দেশটি স্বাভাবিক গতি এগোতে চাইলে ব্যবসায়িক খাতের সংস্কার করতে হবে। বিনিয়োগ, উৎপাদন এবং ভোগের মধ্যে একটি ভারসাম্য আনতে হবে।

রিপোর্টে বলা হয়, দেশটি মূল বাজার ছিল উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো। কিন্তু ইতিমধ্যে বেশকিছু দেশ নিজস্ব শক্তিতে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপে মন্দার কারণে দেশগুলোর চাহিদা কমেছে।

ফলে চীনের উৎপাদন কমছে। আর শেয়ারবাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। তবে ইতিমধ্যে দেশটি বেশকিছু সংস্কার এনেছে।

বিশেষ করে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়না এ বছর সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। বাজারের চাহিদা বিবেচনায় রেখে আগামীতে আরও সংস্কার করতে হবে।যুগান্তর

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।