অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত সাতক্ষীরা জেলা আ’লীগ ও বিএনপি– সুবিধা জনক অবস্থানে জামায়াত

ক্রাইমবার্তা রিপোট:সাতক্ষীরাঃ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। জেলা থেকে শুরু করে সাতটি উপজেলা ও দু’টি পৌরসভা ইউনিটও জর্জরিত অভ্যন্তীণ কোন্দলে। এমনকি অনেক ইউনিটের সভাপতি ও সম্পাদকদের মধ্যে মুখ দেখাদেখিও বন্ধই বলা চলে। তবে সুবিধা জনক অবস্থনে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
চলতি বছরে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণানাকে কেন্দ্র করে দলের যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদেও মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।অবমূল্যায়ন করে সাধারণ সম্পাদক পদে দলের মধ্যে বিতর্কিত একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে দলটির মধ্য থেকে। জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা এটাকে সর্বকালের সেরা তামাশার কমিটি বলে মন্তব্য করেছেন ফেসবুকে। সাবেক একজন সংসদ সদস্যকে তারা দায়ী করে বলেছেন তার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কারণে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপিতে যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয়নি। কমিটিসহ সভাপতি হিসেবে স্থান পাওয়া এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এটা কেন্দ্রীয় কমিটির একটা জোকস ছাড়া আর কিছুই নয়। কেন্দ্র আমাদের কথার কোনো গুরুত্ব না দিয়ে সাবেক ওই সংসদ সদস্যকে গুরুত্ব দিয়ে একটি পকেট কমিটি গঠন করে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। তবে জেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক তারিকুল হাসান জানান,তার নের্তত্বে সাতক্ষীরা বিএনপি আবারো ঘুওে দাড়িয়েছে। বার বার কারাবরণ করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় তার দল জেলাতে সঠিক ভাবে দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পালন করছে। তিনি আরো বলেন, যারা সমালোচা করে তারা দলের জন্য কোন কাজ করেনা।
এদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীীণ কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এই নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনসুর আহমেদ দলীয় মনোনয়ন পেলেও বিজয়ী হন বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।
আর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দু’ভাগ হয়ে যান জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। একই সাথে দু’ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েন জেলার সাতটি উপজেলা ও দুটি পৌরসভা ইউনিটের নেতা-কর্মীরাও। এছাড়া আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠনগুলোও সভাপতি ও সম্পাদকের পক্ষে পৃথক অবস্থান নেয়।
এই কোন্দল কেন্দ্রের দৃষ্টিগোচর হলে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তা নিরসনের উদ্যোগ নেন দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত ৪ মে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনসুর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য স ম জগলুল হায়দারকে ডেকে পাঠান তিনি। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সম্পাদকের বক্তব্য শুনে তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের। তার সামনেই কোলাকুলি করে বের হয়ে আসেন জেলা সভাপতি ও সম্পাদক। কিন্তু তারপরও দৃশ্যত অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। জেলা আ’লীগের সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম জানান,তার দলের মধ্যে কোন কোন্দল নেই। বড় দল হওয়াতে দলের মদ্যে ক্ষোভ থাকতে পারে। বর্তমানে জেলার সবকটি ইউনিটে দলীয় কার্যক্রম চালু রয়েছে।
এদিকে তিন দশকের ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরায় মাটি ও মানুষের সাথে মিশে আছে জামায়াতে ইসলামী। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে দলটির অনেক সদস্য বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে দলটির জেলা অফিস বন্ধ রয়েছে। কয়েক দফায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দলটির জেলা কার্যালয় থেকে আসবাবপত্র ট্রাকে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুন্সি পাড়াস্থ জেলা কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ।
সাবেক আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডল সহ কয়েকশ নেতা কর্মী এখনো জেলে রয়েছে। প্রায় ১০ হাজার দলীয় নেতা কর্মীর নামে মামলা রয়েছে। পুলিশ এখনো জামায়াতের নেতাকর্মীরে গ্রেফতার অব্যাহত রখেছে। নতুন নতুন মামলা দিয়ে জনপ্রিয় এ দলটির নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। গুম করেছে শিবিরের জেলা নেতাকে। বর্তমানে দলটির কার্যক্রম জেলাতে স্থমিত।
এর পরও আওয়ামীলীগের এক নেতা জানান, সাতক্ষীরতে জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী। তারা এলাকায় সর্বমহলের সার্থে মিলে মিশে রাজনৈতিক চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে দলটির নেতাকমর্রিা অনেকা কোণ ঠাসা। প্রকাশ্যে দলের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে না পারলেও গোপনে দলটির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।সাতক্ষীরাতে জামায়াতের শক্ত অবস্থানে কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে সুত্র জানান।
সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এখানে সব কয়টি আসন পেলেও আওয়ামী লীগের বিরোধীপক্ষ নেহাত কম ভোট পায়নি।১৯৭৯ সালের (জিয়াউর রহমানের আমলে) জাতীয় নির্বাচনে সাতক্ষীরার তিনটি আসনে মুসলিম লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেন। ওই নির্বাচনে সাতক্ষীরা সদর আসনে খান এ সবুর জয়লাভ করেন।
১৯৮৬ সালের নির্বাচনে সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে কাজী শামছুর রহমান নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে তিনি সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসন থেকে নির্বাচিত হন।
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সাতক্ষীরার পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটি আসনেই জামায়াতের প্রার্থী জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে একমাত্র সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে কাজী শামছুর রহমান নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে আবার সাতক্ষীরা ২, ৩ ও ৫ এই তিনটি আসন পায় জামায়াত।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরায় পাঁচটি আসনের বদলে চারটি আসন করা হয়। এ নির্বাচনে জামায়াত কোনো আসন পায়নি। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি দুটি করে আসনে জিতেছিল।
২০১৩ সালের দিকে জেলার সাতটি উপজেলার ৭৮টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬টি, বিএনপি ৩০টি, জামায়াত ২৭টি এবং জাতীয় পার্টি পাঁচটিতে নির্বাচিত হয়। এ ছাড়া সাতক্ষীরা ও কলারোয়া পৌরসভা দুটিতে পরপর বিএনপি-জামায়াত সমর্থকেরা মেয়র নির্বাচিত হন।
সেই ইউপি নির্বাচনে সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের একজন এবং বিএনপি-জামায়াতের ১৩ জন চেয়ারম্যান রয়েছেন। তালায় ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ, বাকি ১০টিতে জামায়াত-বিএনপির সমর্থকেরা চেয়ারম্যান। কলারোয়ার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের তিনটি, বাকি নয়টিতে জামায়াত-বিএনপির সমর্থকেরা চেয়ারম্যান। দেবহাটায় পাঁচটির মধ্যে আওয়ামী লীগের দুজন ও জামায়াতের তিনজন চেয়ারম্যান। কালীগঞ্জে ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে জামায়াত-বিএনপির নয়জন এবং আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির তিনজন চেয়ারম্যান। শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০ জন জামায়াত-বিএনপি ও দুজন আওয়ামী লীগের সমর্থক চেয়ারম্যান রয়েছেন। আশাশুনিতে ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে আটটিতে আওয়ামী লীগ এবং বাকি চারটিতে জামায়াত-বিএনপির চেয়ারম্যান।
বর্তমানে জেলা দিকে বড় দু’দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে চরম গ্রুপিং কাজ করছে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেওে প্রকাশ্যে জেলা মৎস দলের সভাপতি আমানুল্লাহ আমান হত্যাকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপির নেতা ও কর্মীরা একে অপরে বিরুদ্ধে বিষাদগারে ব্যস্থ। শতাধিক নেতা দলীয় নেতা হত্যা মামলার আসামী। তাই নিয়ে ব্যস্থ জেলা বিএনপি।
এমন পরিস্থিতে জেলা সাধারণ মানুষের ভাবনা ভিন্ন। বিএনপির জেলখাটা কর্মীরা জানান,বিপদের সময় দলের কোন নেতাকে পাশে পায়নি। তাই বিএনপির প্রতি তাদের আস্থা কমে গেছে। অন্যদিকে জামায়াতের যে সব নেতাকমীরা জেল খেটেছে- তাদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করেছে দলটি। এমনকি বিপদের সময় দলটির কার্যক্রমে সন্তুষ্টি হয়ে জেল থেকে বের হয়েছে অনেকে জামায়াতের সদস্য হয়েছে। এমন পরিস্থিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্টু হলে সাতক্ষীরার সবকটি আসন জামায়াতের ঘরে উঠবে বলে সাধারণ ভোটারেদের ধারণা

Check Also

সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ড (রাজারবাগান ও সরকারপাড়া ইউনিট) এর উদ্যোগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।