উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে নৌপথ সারা বছর নির্বিঘ্ন রাখতে চায় ভারত। খরা মওসুমে যাতে বড় বড় নৌযান বা ভেসেল বারানসি থেকে ব্রহ্মপুত্র হয়ে চলে যেতে পারে সে জন্য তারা বিপুল অংকের অর্থ খরচ করছে। এর পরিমাণ ২৪৪ কোটি রুপি। তবে এর পিছনে কারণ অন্য বলে মনে হচ্ছে। তা হলো দোকলামে চীন-ভারতের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা। গত ২৮ শে আগস্ট সেখান থেকে ভারত পিছু হটলেও এখনও চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির প্রায় এক হাজার সদস্য শিলিগুড়ির কাছে চুমবি উপত্যকায় অবস্থান করছে। ফলে শিলিগুড়ি হয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের যে সরু পথ সেখানে ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ জন্যই বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে নৌরুটকে ব্যবহার করা কথা মাথায় এসেছে ভারতের। তবে এক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধাও বেশি। কারণ, অল্প খরচে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে পণ্য পাঠানো যাবে। তাই ড্রেজিং করা নিয়ে বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নয়া দিল্লির কন্ট্রাক্ট হয়েছে। তারা বিপুল এই অংকের অর্থ খরচ করে বাংলাদেশের দুটি নদী ড্রেজিং করবে ভারত। ওই নদী দুটি হলো যমুনার সিরাজগঞ্জ থেকে ডাইখাওয়া পর্যন্ত এবং আশুগঞ্জ থেকে জকিগঞ্জ পর্যন্ত কুশিয়ারা। যমুনা নদীর ১৭৫ কিলোমিটার এবং কুশিয়ার ২৯৫ কিলোমিটার মিলে মোট ৪৭০ কিলোমিটার ড্রেজিং করবে ভারত। এ খাতে অর্থের যে খরচ হবে তা ৮০ঃ২০ অনুপাতে যথাক্রমে ভারত ও বাংলাদেশ বহন করবে। এখাতে ভারতের খরচ হবে ২৪৪ কোটি রুপি। তবে এখনও কাজের কন্ট্রাক্ট দেয়া হয় নি। এ বছরের শেষ নাগাদ কন্ট্রাক্ট চূড়ান্ত করা হতে পারে। এক্ষেত্রে দরপত্রে অংশ নিতে পারবে বাংলাদেশ ও ভারতের কোম্পানিগুলো। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে খনন কাজ বা ড্রেজিং শুরু হবে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে। এ জন্য ২.৫ থেকে ৩ মিটার করে এলএডি (লিস্ট অ্যাভেইল্যাবল ডেপথ) খননের জন্য কন্ট্রাক্টররা সময় পাবেন দু’বছর। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া। এতে বলা হয়, ভারত সরকার জুলাই মাসে ব্রহ্মপুত্র নদ ড্রেজিং খাতে বরাদ্দ করেছে ৪০০ কোটি রুপি। এই নদটির বেশির ভাগ অংশ পড়েছে ভারতে। বাকিটা বাংলাদেশে। এ জন্য এরই মধ্যে চারটি ড্রেজার নামানো হয়েছে। দুটি নামানোর পথে। প্রতিটি ড্রেজারে রয়েছে একটি করে কাটার সেকশন ড্রেজার (সিএসডি), একটি টাগ (যেটি সিএসডিকে উঠানামা করায়) এবং একটি হাউজবোট (রাত্রীকালীন অবকাশের জন্য)। প্রতিটি ড্রেজারের দাম পড়ছে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি রুপি। টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, দুই প্রতিবেশী দেশ এই কাজ সম্পন্ন করছে ২০২০ সালের মধ্যভাগের মধ্যে ‘চিকেন নেক’ বা সংকীর্ণ সংযোগ পথের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে পারবে ভারত। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির কাছে ২২ কিলোমিটার করিডোরকে বলা হয় চিকেন নেক, যা ভারতের বাকি অংশকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করেছে। বাংলাদেশে ড্রেজিং সম্পন্ন হলে ভারতের বিশাল সব নৌযান ন্যাশনাল ওয়াটারওয়ে-১ (এনডিব্লিউ-১, গঙ্গা) থেকে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে বারানসি থেকে এনডব্লিউ-২ (ব্রহ্মপুত্র) ও এনডব্লিউ-১৬ (বরাক) পর্যন্ত নৌ চ্যানেলগুলোতে চলে যেতে পারবে। এর ফলে ওই সরু করিডোরের ওপর নির্ভরতা কমে যাবে। ভারতের সড়ক, মহাসড়ক পরিবহন ও নৌ চলাচল বিষয়ক মন্ত্রী নিতীন গরকরি বলেছেন, বাংলাদেশে ড্রেজিং করার মাধ্যমে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। তবে বিকল্প এই নৌরুটের কৌশলগত গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি কথা বলেন নি। তবে টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছেন, এই বিকল্প নৌরুটের গুরুত্ব বোঝা যায় সম্প্রতি দোকলামে চীনা সেনাবাহিনীর তৎপরতায়। চীনের এমন আচরণে চিকেন নেক দিয়ে যাতায়াত ঝুঁকিতে পড়তে পারে। গত ২৮ শে আগস্ট থেকে ওই এলাকায় ভারতের আনুষ্ঠানিক কোনো অংশগ্রহণ নেই। তবে সাম্প্রতিক রিপোর্টগুলো বলছে, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির প্রায় এক হাজার সদস্য এখনও শিলিগুড়ির কাছে চুমবি উপত্যকায় অবস্থান করছে। তাই নৌরুটই হতে পারে নিরাপদ। আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল তাই বলেন, বৃটিশরা তো নৌবন্দর ব্যবহার করে আসাম থেকে জ্বালানি, কাঠ, কয়লা সহ বিভিন্ন পণ্য স্টিমারে করে নিয়ে গেছে ভারতের বিভিন্ন স্থানে। পরে ওই রুট পরিত্যক্ত হয়ে যায়। নতুন করে বাংলাদেশে ড্রেজিং করার মাধ্যমে ওই নৌরুটগুলো সারা বছরই ব্যাবহার উপযোগী থাকবে। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া উত্তর পূর্বাঞ্চল সমুদ্র বন্দরের সুবিধা পাবে। তবে শিলিগুড়ি করিডোর বিকল্প রুট হিসেবে রয়ে যাবে। কিন্তু ওই রুটের চেয়ে বিকল্প রুটে খরচ পড়বে অনেক কম। উপরন্তু এখন গঙ্গা ব্যবহার করে বারানসি থেকে হলদিয়া পর্যন্ত এবং ব্রহ্মপুত্র ব্যবহার করে গুয়াহাটিতে পান্দুয়া থেকে জোরহাটের নীমাতিঘাট পর্যন্ত যেসব পর্যটকবাহী নৌযান চলাচল করে তারাও পেয়ে যাবে নতুন রুট।
Check Also
৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …