ভারতে অবস্থান করা রোহিঙ্গা সদস্যদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া অব্যাহত রেখেছে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। গত তিন সপ্তাহে অন্তত ৫৭ রোহিঙ্গা সদস্যকে সীমান্ত দিয়ে সাতক্ষীরায় পুশইন করা হয়েছে।
সর্বশেষ আজ শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে সাতক্ষীরার হিজলদী সীমান্ত দিয়ে ১৮ রোহিঙ্গা সদস্যকে পুশইন করা হয়।
বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া রোহিঙ্গা সদস্যদের মধ্যে ১০ শিশু, পাঁচজন নারী ও তিনজন পুরুষ রয়েছে। তাদের সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নজরুল ইসলামের বাড়িতে রাখা হয়েছে।
ওই রোহিঙ্গারা হলেন—রুপিয়া খাতুন, রোকেয়া খাতুন, আবু তাহের, আবদুর রহিম, রেহানা খাতুন ও আলিমুদ্দিন। এ ছাড়া শিশুরা হচ্ছে শাহরুখ, আজিজুর, জিয়ারুল, জুবাইদ, সুমাইয়া, গুলশান আরা, এনায়েতুর, মাহবুব, সুফিয়া, জুবায়ের, রাশিদা ও সালমা খাতুন।
এর আগে গত বুধবার ১৯ রোহিঙ্গা সদস্যকে সাতক্ষীরার পদ্মশাঁকরা সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করে বিজিবি। এর আগে ৩ অক্টোবর সাত রোহিঙ্গা সদস্যকে কলারোয়ার হিজলদী সীমান্তের একটি বাজার থেকে আটক করা হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রথম সাতক্ষীরার কলারোয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ১৩ রোহিঙ্গাকে আটক করেছিল পুলিশ। তিন দফায় মোট ৩৯ জনকে আটক করা হয়।
আজ সাতক্ষীরার হিজলদী সীমান্ত দিয়ে পুশইন হওয়া রোহিঙ্গা সদস্যদের মধ্যে একজন আবু তাহের। তিনি জানান, বিএসএফের গণরাজপুর ক্যাম্প সদস্যরা তাঁর স্ত্রী পেদানা খাতুনকে (২০) ধরে রেখেছে। তিনি এক বছর বয়সী শিশুকে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন।
তবে বিএসএফ কেন পেদানা খাতুনকে আটকে রেখেছে, তা জানাতে পারেননি আবু তাহের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হিজলদী সীমান্ত চৌকির (বিওপি) নায়েক সুবেদার ওমর ফারুক জানান, রোহিঙ্গা সদস্যদের পুশইনের খবর পেয়ে তিনি ইউপি সদস্য নজরুলের বাড়িতে যান। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, বিএসএফ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাঁরা তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতে বসবাস করে আসছিলেন।
বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া রোহিঙ্গা সদস্যদের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন ওই বিজিবি কর্মকর্তা।
চন্দনপুর ইউপি সদস্য মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে ভারতীয় সীমান্তের দূরত্ব মাত্র ১০০ গজ। আজ সকাল ৭টার দিকে হঠাৎ করেই রোহিঙ্গারা আমার বাড়িতে উঠে পড়েছে। মানবিক কারণে আমি তাদের আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি।’
ইউপি সদস্য জানান, ১৮ রোহিঙ্গা সদস্যকে সীমান্ত পার করে দেয় ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগরের গণরাজপুর বিএসএফ ক্যাম্প সদস্যরা।
চন্দনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতীয়রা আমার ইউনিয়নে তাদের (রোহিঙ্গা সদস্য) পুশইন করে দিয়েছে। তাঁরা আশ্রয় নিয়েছে নজরুল ইসলামের বাড়িতে।’
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আরো বহু সংখ্যক রোহিঙ্গা সদস্য সাতক্ষীরা সীমান্ত অতিক্রম করার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদেরও সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশে পুশইন করতে সচেষ্ট রয়েছে বিএসএফ।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবস্থান করছে। এদের মধ্যে ১৬ হাজার রোহিঙ্গা জাতিসংঘের নথিভুক্ত শরণার্থী। সেখানে তাঁরা নানা প্রতিকূলতা ও চরম দরিদ্রতার মধ্যেই বসবাস করছেন।
সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যে ফের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-হত্যা-ধর্ষণ শুরু করলে পাঁচ লাখের অধিক রোহিঙ্গা বিপদসংকুল নদী ও সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। প্রতিদিনই রোহিঙ্গা আসছে বাংলাদেশে। এ সংখ্যা আট লাখে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে ধারণা করছে জাতিসংঘ। ২০১৬ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আরো প্রায় ৮৬ হাজার রোহিঙ্গা। আর এর আগ থেকেই বাংলাদেশে বসবাস করছিল চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক, যাদের বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘দেশহীন গোষ্ঠী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
কিন্তু ভারত রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। সীমান্তে তারা রোহিঙ্গাদের বাধা দিচ্ছে। উপরন্তু ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেশটিতে থাকা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এ নিয়ে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী আদালতের দ্বারস্থ হন। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আদালতকে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সন্ত্রাসের যোগের অভিযোগ এনে চিঠি দিয়েছে।