কামাল হোসেন আজাদ / শাহনেওয়াজ জিল্লু : এবার মগসেনাদের নানান প্রলোভনে গুপ্তচরবাজিতে মেতে উঠেছে আরাকানি হিন্দুরা। রাখাইন রাজ্যে ভিটেবাড়িসহ সবকিছুতেই তাদের দখল ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভোগ করতে পারবে এমন লোভনীয় সুযোগ-সুবিধা দেখিয়ে আরাকানি হিন্দুগুপ্তচরদের রোহিঙ্গা মুসলমান বিরোধী হতে প্রশিক্ষিত করে তোলা হচ্ছে। যেটি ধর্মাবলম্বীগত সম্প্রীতি বিনষ্টেও চরমভাবে প্রভাব ফেলার আশংকা রয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দ্বীমুখী বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোরও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এসব গুপ্তচরদের বিরুদ্ধে।
সূত্রে প্রকাশ, দেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানাধীন কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, উনচিপ্রাং, লেদা, নয়াপাড়া, শামলাপুর এবং বান্দরবান জেলার নাইক্ষংছড়ি সীমান্ত এলাকায় গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে সক্রিয় রয়েছে বার্মিজ গুপ্তচর। রোহিঙ্গাদের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের প্রশাসনের ভূমিকা বর্মী সামরিক বাহিনীকে সময়ের সাথে সরবরাহ করতেই মূলত নিয়োগ করেছে এসব গুপ্তচর । গুপ্তচর হিসেবে বার্মিজ রাখাইন ও হিন্দুরা নিয়োজিত রয়েছে । হিন্দুগুপ্তচররা বাংলাদেশে আশ্রিত আরাকানি হিন্দুদের বর্মী প্রশাসনের পক্ষে এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিপক্ষে স্টেটমেন্ট দেওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করছে। আরাকানে প্রত্যাবসান করে গাড়ি-বাড়ি, জমি-জমা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে আশ্রিত আরাকানি হিন্দুদের কৌশলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বার্মায়।
এরই মধ্যে বার্মিজগুপ্তচরের সক্রিয় থাকার আলামতও মিলেছে। বার্মিজ হিন্দুগুপ্তচরদের সাথে উখিয়ার পশ্চিম হিন্দুপাড়ায় আশ্রিত পাঁচ শতাধিক আরাকানি হিন্দুর সাথে রয়েছে আঁতাত। তাদেরকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে রোহিঙ্গা মুসলমান বিরোধী মিথ্যাচার করতে ফুঁসলানো হচ্ছে। এরইমধ্যে ২ধাপে ৩৬ জন রোহিঙ্গাকে ক্যাম্প থেকে বের করে নিয়ে গেছে গুপ্তচররা । তাদেরকে সীমান্ত এলাকা থেকে সেনা হেলিকপ্টারে উঠিয়ে মংডুর সেনা সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । এ ৩৬ জনের মধ্যে সেই ৮হিন্দু নারীও রয়েছে, যারা ইতিপূর্বে বাংলাদেশীয় গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিল। সেসময় সাক্ষাৎকারে তারা বলেছিল, মুসলমানরা নয়, তাদের স্বামী ও বাবা-মাকে বার্মিজ মিলিটারি ও রাখাইনরা হত্যা করেছে। মুসলমানরা তাদেরকে বাংলাদেশে যেতে সহায়তা করেছে।
কিন্তু সময়ের ¯্রােতে ওই হিন্দু নারীরা সুর পাল্টিয়ে নিয়েছে। বর্মী সেনা ক্যাম্পে তাদের রাখা হয়েছে জামাই আদরে। গাড়ি-বাড়ি, জমি-জমার প্রলোভনে পড়ে সুর পাল্টিয়ে বলছে, বাংলাদেশী গণমাধ্যমকে মিথ্যা বলতে তাদের বাধ্য করা হয়েছিল । সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের পিঠে অস্ত্র ও ছুরি ধরে রেখেছিল। বার্মিজ মিলিটারী নয়, তাদের স্বামী ও বাবা-মাকে বাঙ্গালি মুসলমানরা (আরসা) হত্যা করেছে ! তাদের দেয়া এ মিথ্যা বক্তব্যই এখন বার্মিজ মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মংডুর ফকিরাবাজারে গণকবর থেকে উদ্ধারকৃত মৃতদেহগুলো হিন্দুর এবং রোহিঙ্গা মুসলমানরা তাদের হত্যা করেছে এমন প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে বর্মী প্রশাসন। প্রশাসনের এ বানোয়াট বক্তব্যের ভিত্তি মজবুত করতে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া হিন্দুদের ব্যবহার করছে। হিন্দুগুপ্তচর নিয়োগ করে বাংলাদেশে আশ্রিত হিন্দুদের কাছে টানা হচ্ছে। বর্মী হিন্দুগুপ্তরচরদের সহযোগিতা করছে বাংলাদেশীয় কতিপয় অতিজাতীয়তাবাদী হিন্দু।
সূত্র জানিয়েছে, উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য (ইউপি মেম্বার) স্বপন শর্মা রনির সাথে যোগাযোগ আছে বর্মী গুপ্তচরদের। আরাকানি হিন্দুদের দেখভাল করার দায়িত্বও নেন তিনি। যেসব হিন্দুকে গুপ্তচররা বার্মায় নিয়ে গেছে তাতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছিল রনির। আশ্রিত হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশের প্রশাসন সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা রাখলেও, রনির সহযোগিতায় বর্মী প্রশাসনের প্রলোভনে আকৃষ্ট হচ্ছে আশ্রিতরা।
এব্যাপারে রনির কাছে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “যারা চলে গেছে তাদেরকে বর্মী গুপ্তচররা মোবাইলে যোগাযোগ করে নিয়ে গেছে । এতে আমার কোন হাত নেই। বর্বর দেশ বার্মায় তারা কেন চলে যাচ্ছে বুঝতেছি না”।
মাইনরিটি আ্যক্টিভিস্ট ফোরাম নামের একটি সংগঠনের সদস্য আশিষ দাশ বাংলাদেশী গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, “রাজকুমারী নামের মেয়েটির বাবা মাকে বার্মিজ মিলিটারী এক মাস আগে হত্যা করেছে সে কিনা কিছু না জানিয়ে বর্মী সেনাদের হাতে হাত রেখেছে । বর্মী সেনারা লোভ-লালসা দেখিয়ে নীরবেই হিন্দুদের সীমান্ত পার করে নিল ”।
এদিকে বাংলাদেশে আশ্রিত অন্যান্য হিন্দুরা এখনো বলছে, রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাথে তাদের কোনদিন বাক-বিতন্ডাও হয় না। তাদের গুটিকয়েক স্বজনদের হত্যা করেছে বার্মিজ মিলিটারি। ফলে ভয়ে মুসলমানদের সাথে বাংলাদেশে আশ্রিত হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত পার হলে, তাদের বুলিও যে পাল্টাবে না এমন নিশ্চয়তা নেই।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের কিভাবে সহযোগিতা করছে? কখন কোন কর্মকর্তা কোন ক্যাম্প পরিদর্শন করছে? রোহিঙ্গারা কি পদক্ষেপ নিচ্ছে? কোথায় ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে? কোথায় বৈঠক হচ্ছে? কারা ত্রাণ দিচ্ছে? কিভাবে দিচ্ছে? বাংলাদেশীয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া কি? এসব কিছু বর্মী সেনাবাহিনীদের নিয়মিত সরবরাহ করছে গুপ্তচররা। ত্রাণকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীরূপেও বার্মিজ গুপ্তচর সক্রিয় বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ১৩সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয়ার সীমান্ত এলাকা থেকে সন্দেহজনকভাবে ঘুরাফেরার সময় সাংবাদিক পরিচয়ধারী বার্মার দুই গুপ্তচরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।