স্টাফ রিপোর্টার:সাতক্ষীরার আপ্যায়ন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয় করে ঠকানোর অভিযোগ তুলে বন্ধের দাবি জানিয়েছে ভূক্তভোগীরা। সাতক্ষীরা শহরের অদুরে রাজারবাগান সরকারি কলেজের প্রথম গেটে অবস্থিত আপ্যায়ন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট অবস্থিত। জৈনক ইকবল হোসেন কর্তৃক কয়েক বছর ধরে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে গড়ে ওঠা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টটিতে ক্রেতা অধিকার আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি মেয়াদ উত্তির্ণ পণ্যের রমরমা বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। জেলার সুনামধন্য শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ। এই কলেজে জেলার ও বাহিরের বিভিন্ন স্থানের ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা লাভের জন্য এবং বিভিন্ন পরিক্ষায় অংশ গ্রহন করতে আসেন। দুর দুরান্ত থেকে আগাত ছাত্র-ছাত্রীরা সামান্য নাস্তা বা খাওয়ার জন্য আসলে ভাগ্যে জোটে দূব্যবহার। এমনকি চাহিদা অনুযায়ী খাবার পেলেও অধিকাংশ গ্রহনের অযোগ্য আর মেয়াদ উত্তির্ণ। যা খেয়ে প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকে। এতে করে ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন অসুখ-বিসুখে ভুগছে। যেমনটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার বিকালে। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ, শ্যামনগর, দেবহাটা, পাটকেলঘাটা, তালা, কলারোয়াসহ কয়েকটি এলাকা থেকে অনার্স পরীক্ষা দিতে আসা কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী রেস্টুরেন্টে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে।
শ্যামনগর থেকে আসা পরীক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ জানায়,তারা পরীক্ষা দিয়ে হালকা নাস্তা করার জন্য সে খানে যান। যাওয়ার পর নাস্তার অর্ডার করেন। টেবিলে নাস্তা দেওয়া হয়। নাস্তা পরিবেশন কালে প্লেটে ও গ্লাস অত্যান্ত নোংরা অবস্থায় দেখতে পেয়ে প্রতিবাদ করে। পরে তা পরিবর্তন নতুন করে দেওয়া হয়।
কয়েকজন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাটকেলঘাটার জাহিদা জাহান মৌ, কালিগঞ্জের আশিকুর রহমান, সদরের মনিসংকর জানায়, তারা হালকা নাস্তা শেষে আর্ডার করে পেপসি কোম্পানির এক লিটারের কোকাকোলার। এবার তারা কয়েকটি গ্লাসে তা পরিবেশন করেন। মুখে নিতে কোকাকেলার স্বাদ ভিন্ন হওয়ায় মেয়াদ দেখতে চাওয়া হয়। এসময় হোটেল মালিক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরে বোতলের গায়ের লেবেল দেখাতে প্রমাণ মেলে মেয়াদ উত্তীর্ণের। বোতলে উৎপাদনের তারিখ ছিল ১৩/০৪/১৭ এবং মেয়াদ দেওয়া ছিল ১২/০৭/১৭। যা আরো ২মাসের বেশি সময় আগেই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। হোটেল মালিক মেয়াদ দেখে প্রথমে মানতে চাচ্ছিল না কিন্তু পরে নিজের দোষ এড়িয়ে গিয়েছেন। এমনকি তিনি কিছু করার নেই বলে জানান।
আরেক পরীক্ষার্থী দেবহাটার সুব্রত বিশ্বাস জানান, গত ৯ অক্টোবর পরীক্ষা শেষে আপ্যায়ন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে যায়। চপ পিয়াজী দেওয়া হলে সেগুলো বাঁসি ও পচা।
তবে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে দেখা মেলে হালচিত্র। হোটেলটি ভিতরের পরিবেশ কোন রকম হলেও খাবার তৈরীর স্থানটি অত্যান্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। ভিতরে গিয়ে দেখা মেলে এক গামলা পানিতে প্লেট ধোয়ার কাজ চলছে। যেখানে রান্না হচ্ছে সেখানে খাবার খুলে রাখা হয়েছে। আর চুলা থেকে ছাই ও ময়লা উড়ে পড়ছে। ভিতরে ভাত, মাছ, মাংস সহ বিভিন্ন খাবার একটি কাঠের ফ্রেমের ভিতরে রাখা থাকলেও সেটি খুবই নাজুক। হোটেলের ভিতরে পরিবেশ এত ছোট যে সুপরিকল্পিত কোন ব্যবস্থায় নেই। সবমিলে এটি হোটেল বা রেস্টুরেন্ট নিয়মের পরিপন্থি।
এবিষয়ে, আপ্যায়ন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে কর্তৃপক্ষ বাবলুর রহমানের সাথে কথা বললে কোন মতে নিজের দোষ শিকার এড়িয়ে বলেন, কোম্পানি তাদেরকে যেভাবে দিয়েছে তাই সেভাবে ক্রেতাদের কাছে বিক্রয় করছেন। তিনি আরো বলেন, মেয়াদ না থাকলে আমাদের তো কিছু করার নেই। কোম্পানি আসলে বিষয়টি তাদের জানাব। তাই সংবাদ প্রকাশ না করা ভালো বলে জানান তিনি। এমনকি তিনি রীতিমত সংবাদকর্মীকে ম্যানেজ করতে প্রচেষ্টা চালান।
তবে, ভোক্তাঅধিকার আইন ২০০৯ এর ৫১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি মেয়াদ উত্তীর্ণ কোন পণ্য বা ঔষধ বিক্রয় করিলে বা করিতে প্রস্তাব করিলে তিনি অনুদ্ধ ১বছরের কারাদন্ড বা অনাধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
আপ্যায়ন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নোংরা পরিবেশে মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয় করে ঠকানোর বিষয়টি জানার পর বিভিন্ন স্থানে সমালোচনার সৃষ্টির পাশাপাশি এমন অবৈধ্য হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে সুস্থ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন করতে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, সরকারি কলেজের অধ্যাক্ষসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভূক্তভোগীরা।
মীর খায়রুল আলম