!বি এইচ মাহিনী: ‘বাওড়’ কী? বৃত্তাকারে আবদ্ধ সু-বিশাল জলরাশির নাম ‘বাওড়’। যতদুর চোখ যায় শুধুই জল আর জল। কূলের দেখা মেলেনা এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের। কালো জল খেলা করছে সানন্দে। জলবাশির চারিদিকে বিচ্ছিনভাবে পদ্মপাতা ও শালুকের মেলা। চারিদিকে হাজারো বৃক্ষের সমাহার। ফাগুনের হাতছানিতে বৃক্ষগুলো যেন নতুনভাবে সাজতে প্রস্তুত। অভয়নগরের পুড়াখালী ‘বাওড়’ বাংলাদেশের একটি দৃষ্টিনন্দন ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান। যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া বাজারঘাট পার হলেই শংকরপাশা গ্রাম। এখান থেকে মাত্র ১০টাকার পথ দিয়াপাড়া নতুন বাজার। আর এ বাজার থেকেই চোখে পড়ে এ নান্দনিক বাওড়টি। অভয়নগরের দর্শনীয় ও নান্দনিক স্থান সমূহের মধ্যে পুড়াখালি বাওড়টি অন্যতম। এ বাওড়ের আয়তন ৫৪.২৫ হেক্টর। বাওড়টি প্রকৃতির অনুপম সাজে সজ্জিত। যেন একটি নির্ঝর, সজ্জিত উর্বর জলাভূমি। বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক, লেখক ড. মোহাম্মদ আমীন তার ‘অভয়নগরের ইতিহাস’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘২০০০ খিষ্টাব্দের পূর্বেও বাওড়টি কুচুরিপানা ও হাজিবনে পরিতক্ত্য ছিল। ২০০০ সালের ২০ জুলাই ইফাদ প্রকল্পের আওতায় বাওড়টি সংস্কার করে আধুনিক পদ্ধতিতে মৎসচাষের আওতায় এনে ১০৮ জন মৎসচাষীকে মৎস্য চাষের জন্য হস্তান্তর করা হয়।’ ১০৮ জন কৃষকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ‘পুড়াখালি বাওড় ব্যবস্থাপনা কমিটি’র সভাপতি আব্দুর রহমান জানান, জেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে ও উপজেলা ভূমি অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বর্তমানে বাওড়টিতে মৎস চাষ পরিচালিত হচ্ছে। এখানে সাধু পানির মাছ চাষ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে রুই, মৃগেল, কাতল, সিলভার কাপসহ আরো অনেক মাছ। এখন বাওড়টি কাজল কালো জলের টলমল লাবনী; চারদিক পরিষ্কার যতেœর ছাপছাপ ছোঁয়ায় যেন নিকোষ মাধুরী। ভেড়ীবাধ, অভয়াশ্রম, ফিস ল্যান্ডিং সেন্টার, পাঁটা, বাঁধ ইত্যাদি পরিকল্পিত ব্যবস্থা গুলোর মাধ্যমে বাওড়টি মৎস ও মনুষ্য উভয়ের জন্য একটি চমৎকার স্থানে পরিণত হয়েছে। বাওড়ের নিকোষ কালো জলবাশির দিকে তাকালে মত উদারতার ব্যকুল হয়ে উঠে। হারিয়ে যায় প্রকৃতি বিশাল নীলিমায়। বাওড়টি শুধু মানুষ ও মাছের জন্য নয়; অতিথি পাড়ির জন্যও বিখ্যাত। এ বাওড়টি হাজার হাজার অতিথি পাখির চিৎকারে গগণ মুখরিত থাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সকল ঋতু ও দিনে। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের কারণে পাখি মারা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাই প্রতিদিন প্রতিবছর প্রচুর অতিথি পাখি পুড়াখালি বাওড়ে নিঃসঙ্কায় চড়ে বেড়ায়, মনের আনন্দে সাঁতার কাঁটে। অতিথি পাখির মাধ্যে সাইবেরিয়া থেকে আগত বিভিন্ন প্রকার হাঁস উল্লেখযোগ্য। অতিথি পাখির মধ্যে প্রচুর পাতিহাঁস, কাঁদাখোচা, বক, ডাহুক, পানকৌড়ি, দেখা যায়। বাওড়ের পাড়ে পাড়ে বেড়ায় শালিক, ঘুঘু, মাছরাঙা, গাংচিল। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এই নয়ানাভিরাম বাওড়টি দেখতে আসেন। কেউবা আসেন বিকেলের পড়ন্ত সূর্যের লালিমা মাখা রোদ্দুর পোহাতে। বাওড়ের পাড়ে দাড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার অনুভূতি সত্যিই অবর্ননীয়। বিকেলের শেষভাগে ও সন্ধ্যার প্রারম্ভে সূর্য একটি রক্তিম থালার ন্যায় দৃশ্যমান হয়। এভাবে আস্তে আস্তে সূর্যিমামা মলিন হতে থাকে ও এক পর্যায়ে দর্শকদের দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে হারিয়ে যায় গহিন অতলে। সে যে কী মনোরম দৃশ্য! তা চর্মচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস হবার নয়। নয়নাভিরাম এ বাওড়টি সারা বছরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটক এসে থাকে বলে জানান ৫ নং শ্রীধরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ আলী। এ প্রতিবেদককে তিনি আরো জানান, এখানকার সৌন্দর্য দেখতে বহু মানুষ পিকনিক, শিক্ষাসফর বা অবসর সময় কাটানোর জন্য এসে থাকে। পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রসংঙ্গে তিনি বলেন, বাওড় ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে পিকনিক স্পট বরাদ্দ নিলে বা তাদের অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলে সাধারণত তেমন কোন অসুবিধা হয় না। তবে আশে পাশের কিছু বখাটে ছেলে-পেলে সুযোগ বুঝে আনেকের ক্ষয়-ক্ষতি করে থাকেও বলে তিনি জানান। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নিরাপত্তা বলয় বৃদ্ধি করলে এ সমস্যার সমাধান হওয়াও সম্ভব বলেও তিনি জানান।
১৫-১০-১৭
Check Also
কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় …