ফের বাংলাদেশে আসছে ক্ষুধার্ত-ভয়ার্ত হাজারো রোহিঙ্গা

ক্ষুধার্ত, সহায়সম্বলহীন ও ভয়ার্ত হাজারো রোহিঙ্গা ফের বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

সোমবার ভোররাত থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দল বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। খবর রয়টার্সের।

পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গার ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উশৃঙ্খল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা হামলা এবং নির্যাতন চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে ক্ষুধার জ্বালাও হয়েছে  তাদের সঙ্গী।

এ অবস্থায় বাঁচার আশায় নোংরাজল, বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া কাদামাটি, গহিন জঙ্গল আর দীর্ঘ পানি পথ পাড়ি দিয়ে তারা বাংলাদেশ সীমান্তে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

কক্সবাজারের পালংখালীতে এসে আশ্রয় নেয়া নতুন রোহিঙ্গা দলের বেশিরভাগই আহত। এ ছাড়া নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটি বড় অংশ বৃদ্ধ ও অসহায় শিশু-নারী। বৃদ্ধদের স্ট্রেচারে করে বয়ে আনেন পরিবারের সদস্যরা। আর নারীরা তাদের সন্তান ও গৃহস্থালির ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিস, চাল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মাথায় করে নিয়ে আসেন।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা যুবক শোয়েব (২৯) রয়টার্সকে জানান, গত এক মাসে খাবারের জন্য তারা ঘর থেকে বের হতে পারেননি। কারণ বের হলেই সেনাবাহিনী অত্যাচার চালাতো। সেনাবাহিনী হত্যা, ধর্ষণের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সব কিছু লুট করে নিয়ে নেয়। এ অবস্থায় অসহায় রোহিঙ্গারা এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে পালিয়ে বেড়িয়েছে। সর্বশেষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

বিবর্ণ হলুদ গেঞ্জি পরিহিত শোয়েব একটি পাটের ব্যাগে প্রয়োজনীয় কিছু ব্যবহার্য জিনিস আর বাঁশ বেঁধে কিছু অ্যালুমিনিয়াম পট নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসেন।

শোয়েব বলেন, দিন দিন রাখাইনের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি। পালিয়ে আসার আগে খুব ঝুঁকি নিয়ে আমি আমার গ্রামে যাই। কিন্তু সেখানে আমার বাড়িটি আর দেখতে পাইনি। সেনাবাহিনী আমাদের পুরো গ্রামটাই জ্বালিয়ে দিয়েছে।

এ অবস্থায় শোয়েবসহ অন্যরা পালিয়ে আসা ৫ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গার সঙ্গে যোগ দিতে দেশ ছাড়েন।

গত ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চল থেকে রোহিঙ্গাদের এই পালিয়ে আসা শুরু। কারণ হিসেবে রোহিঙ্গারা জানান, সেখানে সেনাবাহিনী ও উশৃঙ্খল বৌদ্ধ অনুসারীরা মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু করেছে। বর্বর অত্যাচার-নির্যাতন, হত্যা আর ধর্ষণের শিকার হয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

তবে মিয়ানমার সরকার জাতিগত নির্মূল অভিযানের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। এ ঘটনার জন্য সরকার আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিকে (আরসা) দায়ী করে। তাদের দাবি, পুলিশচৌকিতে আরসা হামলা চালিয়ে হতাহতের ঘটনার জন্ম দেয়। তাদের দমনে সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করলে তা বাঁচতে আরসাই সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে।

Check Also

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করেননি সমাজী

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।