আগামী বুধবার দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার দেশে ফেরার খবরে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে বেগম জিয়া লন্ডনে অবস্থান করছেন। এই দীর্ঘ সময়ে সেখানে তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানের সাথে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে দলের একাধিক শূন্য পদ পূরণ, বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠন নিয়ে তিনি কথা বলেছেন।
বেগম জিয়া দেশে ফিরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেবেন এমনটাই প্রত্যাশা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। তারা এখন তার ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। দলের চেয়ারপারসনের দেশে ফেরা নিয়ে গত শনিবার রাত থেকেই নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ফের সরগরম হয়ে উঠেছে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় এবং নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। দলের চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানাতে বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। ওই দিন বিমানবন্দর থেকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন পর্যন্ত শোডাউনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
প্রসঙ্গত, চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য গত ১৫ জুলাই লন্ডনে যান বেগম খালেদা জিয়া। আড়াই মাসের সফর শেষে আগামী ১৮ অক্টোবর (বুধবার) বিকেল সাড়ে ৫টায় দেশে ফেরার কথা রয়েছে বেগম জিয়ার।
জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডন সফর চিকিৎসার জন্য হলেও তার সফরকে ঘিরে শুরু থেকেই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আগ্রহের কমতি নেই। রাজনৈতিক মহলেও চলেছে ব্যাপক জল্পনাকল্পনা। কারণ বিএনপি প্রধানের এই সফরের মাধ্যমে আসতে পারে আগামী নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা এবং আন্দোলন-সংগ্রামের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এজন্য বেগম জিয়ার দেশে ফেরার দিকে তাকিয়ে আছেন বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। যদিও খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার পর থেকেই সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলতে থাকেন তিনি আর দেশে ফিরবেন না।
তবে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলে আসছেন চিকিৎসা শেষ করে এক মুহূর্তও বেগম জিয়া দেশের বাইরে থাকবেন না। চিকিৎসা শেষ হলেই তিনি দেশে ফিরে আসবেন এবং নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরবেন। একইসাথে আগামী নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিবেন। সফর করবেন দেশের বিভিন্ন এলাকা এবং দল পুনর্গঠনের কাজ করবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু গতকাল বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে গেছেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বারবার সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি দেশে ফিরবেন কি না? ছোট মনেরও একটা সীমা থাকে, এই সরকারের সেটাও নাই। তারা জনবিচ্ছিন্ন গণবিরোধী লুটেরা সরকার।
তিনি বলেন, স্পষ্ট কথাÑ আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামী বুধবার দেশে আসবেন। তাকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। দেশে এসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য বিরোধী দলের রাজনীতিতে যা যা করা দরকার তিনি তা-ই করবেন। তাকে সংবর্ধনা ও গণ-অভ্যর্থনা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি বিএনপির আছে। দেশে এলে তাকে ব্যাপক সংবর্ধনা দেয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৯ অক্টোবর কুমিল্লা ও ১২ অক্টোবর ঢাকার আদালতে পৃথক তিনটি মামলায় বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও প্রচার করতে থাকেন এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর বেগম খালেদা জিয়া শিগগিরই আর দেশে ফিরবেন না। তবে এ ঘটনার পর থেকে রাজপথে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেন দলটির নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফেরার সংবাদ আসায় বিএনপি নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে কর্মীরাও এখন নেত্রীর দেশে ফেরার অপেক্ষায়।
বিএনপির একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে বিশাল শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলাদলসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্যোগে এ শোডাউনের প্রস্তুতি চলছে। বেগম জিয়ার দেশে ফেরার চূড়ান্ত তারিখ জানার পর দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে প্রস্তুতি বৈঠক করেছেন।
ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের নিয়েও বৈঠক করেন। জানতে চাইলে রুহুল কবির রিজভী গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, বিগত দিনে বিএনপি চেয়ারপারসন বিদেশে গেলে এবং বিদেশ থেকে এলে যেভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানানো হয় এবারো দলের নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন। আমরা বরাবরই এভাবে করে থাকি। এ জন্য আলাদাভাবে কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। কারণ তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ চিকিৎসার পর দেশে ফিরবেন, তার দলের নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানানোর জন্য বিমানবন্দরে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকেও নেতাকর্মীরা বেগম জিয়াকে সংবর্ধনা জানাতে আসবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
বিএনপির মতো অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও বেগম খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই দিন বিমানবন্দর থেকে গুলশানে চেয়ারপারসনের বাসভবন পর্যন্ত জনস্রোত নামানোর পরিকল্পনা করছে স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদল,মহিলা দলের নেতাকর্মীরা।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন। গণতন্ত্রকামী মানুষের ঐক্যের প্রতীক। তার দেশে ফেরা নিয়ে সবাই অপেক্ষা করছেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন। সেভাবে প্রস্তুতিও চলছে। dailynayadiganta.com